সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দেয়া উপবৃত্তির টাকা নিয়ে চলছে তুলকালাম কাণ্ড। একটি সহযোগী দৈনিকের খবরে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ‘প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রকল্পের (তৃতীয় পর্যায়)’ শুরু থেকে অনেক অভিভাবক মা টাকা তুলছেন না। ফলে গত তিন অর্থবছরে এই টাকা জমে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা। মায়েরা কেন এই টাকা তুলছেন না, তা খতিয়ে না দেখেই এখন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় চাচ্ছে জমে থাকা এই টাকা তুলে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে। শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।
সম্পাদকীয়তে আরও জানা যায়, এ জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে চিঠি দিয়ে অর্থ ফেরত চেয়েছে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে এই টাকা ফেরত দিতে নির্দেশ দিয়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ১০ বছরের আগে এই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া যাবে না। উল্লেখ্য, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া এক কোটি ৩০ লাখ শিক্ষার্থীকে নিয়মিত উপবৃত্তি দেয়া হয়। প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিকে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত মাসে ১০০ টাকা এবং প্রাক-প্রাথমিকে মাসে ৫০ টাকা করে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দেয়া হচ্ছে। প্রতি তিন মাসে এক কিস্তি হিসেবে বছরে চার কিস্তিতে উপবৃত্তির টাকা শিক্ষার্থীর অভিভাবকের মোবাইল ফোনে শিওর ক্যাশের মাধ্যমে পাঠানো হয়।
বস্তুত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই উদ্যোগের পেছনে যে অজুহাত দেয়া হয়েছে সেটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। মন্ত্রণালয় উপবৃত্তির সঞ্চিত টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে উদ্যোগ নিয়েছে কিন্তু সেটা করার আগে অভিভাবকদের অবহিত করার বিষয়টিও বিবেচনা করেনি।
অর্থাৎ ঘোষণা করা হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দেয়া হচ্ছে কিন্তু বাস্তবে অনেক শিক্ষার্থীই সে টাকা পাচ্ছে না এবং উপবৃত্তির সঞ্চিত অর্থের একটি বড় অংশ আবার সরকারি কোষাগারে জমা করা হচ্ছে। এটা অনভিপ্রেত, অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অনৈতিক। উপবৃত্তির টাকা স্বাভাবিক নিয়মেই ব্যক্তি খাতের অ্যাকাউন্টে চলে গেছে।
এটা আর সরকারের টাকা নয়। কাজেই শিক্ষার্থীর অর্থ শিক্ষার্থীর অভিভাবকের কাছে পৌঁছে দেয়া সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। এ দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। মন্ত্রণালয় কি উদ্দেশ্যে শিক্ষার্থীদের প্রাপ্য উপবৃত্তির অর্থ থেকে বঞ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছে তার ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই অবস্থায় উপবৃত্তির অর্থ থেকে শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করা মানে হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কে সরকারি নীতিরই বরখেলাপ। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কোন স্বার্থে সরকারি নীতির বরখেলাপ করার উদ্যোগ নিয়েছে সেটাও জানা দরকার বলে আমরা মনে করছি। কারণ মন্ত্রণালয়ের অন্য কোন ‘মতলব’ থাকতে পারে।
কোন কারণে শিক্ষার্থীর অভিভাবক টাকা পাঠানোর বার্তা না পেয়ে থাকতে পারেন। অথবা যে মোবাইল ব্যাংকিং অপারেটরের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে, তাতে যান্ত্রিক কোন ত্রুটি থাকতে পারে। কিংবা এমনও হতে পারে যে, মায়েরা এই টাকা ওই নম্বরে সঞ্চয় করছেন। ঘটনা যা-ই হোক, তা খতিয়ে দেখা দরকার। আমরা আশা করব, এ বিষয়ে নীতিহীন পথ অনুসরণ করা হবে না। উপবৃত্তির টাকা যদি সরকারি কোষাগারে ফিরিয়ে নিতেই হয় তবে তার জন্য যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করা উচিত, অভিভাবকদের অবহিত করা উচিত এবং যথেষ্ট সময় দেয়া বাঞ্ছনীয়। কোন একজন শিক্ষার্থীও যদি উপবৃত্তির প্রাপ্য অর্থ থেকে বঞ্চিত হয় তবে সেটা গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য হবে প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ। শিক্ষার অগ্রগতির স্বার্থে সেটা কোনভাবেই কাম্য নয়।