শিক্ষার্থীদের জানোয়ার বললেন ভিসি নাসির - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষার্থীদের জানোয়ার বললেন ভিসি নাসির

নিজস্ব প্রতিবেদক |

শিক্ষার্থীদের জানোয়ার বলে গালাগাল করে নতুন করে আলোচনায় এসেছেন গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) উপাচার্য ড. খন্দকার নাসির উদ্দিন।

শিক্ষার্থীদের গালাগাল ও তাদের বাবা-মা নিয়ে অরুচিপূর্ণ মন্তব্যের একটি অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে চলছে সমালোচনা।

অডিও ক্লিপে উপাচার্য বলেন, এই তোর আব্বা কি করে? এই জানোয়ার তোর বাপ বিশ্ববিদ্যালয় চালায়? জানোয়ারের দল। তোর আব্বারে ভিসি বানায় দি (বানিয়ে দেই)। তোর বাপেরে চালাইতে ক। দেখি কি চালায় তোর আব্বা। কি আগুন জ্বালাবি এই জানোয়ার। এই কী আগুন জ্বালাবি, কেন জ্বালাবি, কোন কোন জায়গা জ্বালায় আইছিস (এসেছিস)। তোরে তো এখন লাথি দিয়ে বের করে দিতে ইচ্ছা করতেছে। কোনডারে ছাড়ব না। একটার চেয়ে আরেকটা বেশি। তোরা চালা তাইলে বিশ্ববিদ্যালয়। এদের কথা শুনলি (শুনলে) মরা মানুষ তাজা হয়ে যাবে।

শিক্ষার্থীদের রুমে ডেকে এভাবে গালমন্দ করেছেন ভিসি খন্দকার নাসির উদ্দিন। কোন শিক্ষার্থী ফেসবুকে কি স্ট্যাটাস দিয়েছেন ভিসির পাশে বসে তা পড়ে শোনাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. আশিকুজ্জামান ভূইয়া। শুধু ওসব শিক্ষার্থীকেই নয়, তাদের বাবা-মাকে ডেকে এনেও শোনানো হয়েছে মন্দ কথা। করা হয়েছে অপমান। শিক্ষার্থী ও তাদের মা-বাবাকে গালমন্দ করা অডিও ক্লিপটি এরই মধ্যে ভাইরাল হয়েছে।

জানা যায়, ৫ সেপ্টেম্বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শ্রেণিকক্ষের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে স্ট্যাটাস ও কমেন্ট করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। বহিষ্কৃতরা ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। পরে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের পক্ষে ক্ষমা চাইতে তাদের সহপাঠীরা উপাচার্য খন্দকার নাসির উদ্দিনের অফিসে যান। তখন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় তাদের জানোয়ার বলে গালি দেন ভিসি।

ওই সময় প্রক্টর আশিকুজ্জামান ভূইয়া এক শিক্ষার্থীর ফেসবুক স্ট্যাটাস পড়ে বলেন, স্যার ও লিখেছে প্রতিবাদ করলে বহিষ্কার করবে তো? করুক, কয়জনকে বহিষ্কার করবে। আমরা তো অন্যায় কিছু করিনি।

এ কথার উত্তরে ভিসি বলেন, তুরা (তোরা) চালা আইসা ইনভারসিটি (ইউনিভার্সিটি)। তোর বাপ-মায়েরা আইসা চালাক। আমরা ছাইড়া (ছেড়ে) দি। এই যা বাইর (বের হ)।

এ সময় শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা বার বার ক্ষমা চাইছিলেন। তাতেও থামছেন না ভিসি। তোর আব্বারে আইনা (এনে) চালা। তোর আব্বা বানাইছে বিল্ডিং? ১০৩ রুম কারে দেব, তোর কাছে শোনব? তোর কাছে শোনব না তোর মায়ের কাছে শোনব। ১০৩ নম্বর নিয়ে তোর এত হেডেক ক্যান। ওই রুমডা (রুমটা) কি তোর আব্বার? এরই মধ্যে শোনা যাচ্ছিল এক শিক্ষার্থীর মায়ের কান্নাজড়িত কণ্ঠে সন্তানকে ক্ষমা করে দেয়ার আকুতি।

এ সময় ভিসি বলেন, এই আপনার ছেলে কোনডা (কোনটা)? কি করেন আপনি? ও শিক্ষক আপনি? আপনার ছেলে লেখছে (লিখেছে) কিন্ডারগার্টেন এটা। কিন্ডারগার্টেনে আপনার ছেলেকে ভর্তি করছেন কেন? এই কিসের জন্য কিন্ডারগার্টেন লিখেছিস। লাথি দিয়ে তোরে ফেলে দেব এই জায়গা থেকে। এই জানোয়ার। তোর চৌদ্দ পুরুষের সাধ্য ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। তুই তো জীবনেও চান্স পাতি না। আমি এই বিভাগ খুলছিলাম (খুলেছিলাম) বলে তুই চান্স পাইছিলি (পেয়েছিলি)। কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই জায়গায় কি কি খারাপ তুই ক। তোর শাস্তি অবেই (হবেই)। সবাই যদি কয় কিন্ডারগার্টেনে পড়ি। তলিতো আমি ভিসি থাকি না। আমি তো হেডমাস্টার হইয়া যাই।

তবে শিক্ষার্থীদের গালি দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য খন্দকার নাসির উদ্দিন বলেন, এসব সরকারবিরোধীদের ষড়যন্ত্র, যা অভিযোগ উঠেছে, তার ভিত্তি নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, ওই দিন বিভাগের সবাই গিয়েছিলাম ছয়জনের জন্য সুপারিশ করতে। কিন্তু ভিসি শুধু ওই ছয়জনকেই না পুরো বিভাগের সবাইকেই ধুয়ে দিয়েছেন। ভিসি সবাইকে জানোয়ারের বাচ্চা, ক্লাসরুম দিয়ে তোদের শ্রাদ্ধ দেব, তোদের মতো কুলাঙ্গার জন্ম দিয়ে তোদের বাপ মহা অন্যায় করছে, তোর কোন বাপরে আনবি নিয়ে আয়, তিনদিনের বাচ্চুর নেতা হইতে আইছিস বলে গালাগাল করেন ভিসি। শেষে ভিসি বলেন, বের হয়ে যা আমার চোক্ষের সামনে থেকে জানোয়ারের বাচ্চারা। সবার অভিভাবককে ডেকে এনে তাদের সামনেও একইভাবে বকাবকি করেন ভিসি। পরে তিনজনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করলেও বাকি তিনজনের বহিষ্কারাদেশ এখনো প্রত্যাহার করা হয়নি। ভিসির কথাগুলো এখনো ভুলিনি। কথাগুলো শোনার পর নিজেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ভাবতেই ঘৃণা হচ্ছিল। এমন একজন অসামাজিক আবাল একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কীভাবে হয় তা আমার বোধগম্য নয়।

এদিকে রোববার ৫ম দিনের মতো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভিসির পদত্যাগের এক দফা দাবিতে অনশন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। দুপুরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দেখা করেন গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল হামিদ। এ সময় তিনি বলেন, শনিবার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর যে হামলা হয়েছে আমরা জেলা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে তার তীব্র নিন্দা জানিয়েছি। গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনের সঙ্গে থাকবে।

এরপর গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি চৌধুরী এমদাদুল হক, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খানসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আলটিমেটাম দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করার প্রস্তাব দেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যতক্ষণ না বলবেন, ততক্ষণ আন্দোলন চালিয়ে যাব আমরা।

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের এই ক্ষোভ একদিনের নয়। ভিসি বিশ্ববিদ্যালটিকে টর্চার সেলে পরিণত করেছেন। কোনো শিক্ষার্থী ভিসির অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে অভিভাবকদের ডেকে গালিগালাজসহ মানসিক টর্চার করেন। টর্চার থেকে বাদ যান না শিক্ষকরাও। ভিসির এমন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে প্রক্টর আশিকুজ্জামান ভূইয়াও জড়িত।

ভিসি খন্দকার নাসির উদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন ঠেকাতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শনিবার সকাল ১০টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। নির্দেশ উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।

এ অবস্থায় শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন গোবরা এলাকায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে বহিরাগতরা। এতে ২০ শিক্ষার্থী আহত হন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, উপাচার্যের পালিত বহিরাগত লোকজন তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। তাদের ক্যাম্পাসের ভেতরে ঘেরাও করে রাখা হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে শনিবার দুপুরে পদত্যাগ করেছেন সহকারী প্রক্টর হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, তাদের চোখের পানি সহ্য হচ্ছে না। আমি এ ঘটনার নিন্দা জানাই। একই সঙ্গে সহকারী প্রক্টর পদ থেকে পদত্যাগ করেছি। গত কয়েক দিনের অচলাবস্থা কাটাতে প্রধামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে ক্যাম্পাসে সুন্দর পরিবেশ ফেরানোর দাবি জানিয়েছেন তারা।

ক্যাম্পাস সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গত ছয় মাসে সাত শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বহিষ্কৃত ওই শিক্ষার্থীদের অপরাধ উপাচার্য ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের অনিয়মের বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়া। সর্বশেষ ১১ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে শিক্ষকদের নিয়ে স্ট্যাটাস দেয়ায় আইন বিভাগের ছাত্রী ও সাংবাদিক ফাতেমা তুজ জিনিয়াকে বহিষ্কার করা হয়।

এ ঘটনার পর জিনিয়াকে বহিষ্কারের প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকরা আন্দোলন শুরু করেন। সাংবাদিকদের আন্দোলনের মুখে গত বুধবার জিনিয়ার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপর ওইদিন রাত থেকে ভিসি খন্দকার নাসির উদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে নামেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা।

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.01347017288208