শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি পরিশোধে বেকায়দায় অভিভাবকরা - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি পরিশোধে বেকায়দায় অভিভাবকরা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

মহামারি করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণে বিপাকে পড়েছে বেসরকারি, বিশেষায়িত, ট্রাস্ট ও সংস্থা পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা। চলমান দুর্যোগে অর্থসংকটের কারণে তারা সন্তানদের মাসিক বেতন ও অন্য ফি পরিশোধ করতে পারছে না। আবার শিক্ষার্থীদের বেতন ও ফি আদায় করতে না পেরে প্রতিষ্ঠানগুলোও শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দিতে পারছে না। এ কারণে অভিভাবক ও শিক্ষক-কর্মচারী উভয়েই দুর্বিপাকে পড়েছেন। সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই এ সমস্যা তৈরি হয়েছে। শুক্রবার (১ মে) সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন রাকিব উদ্দিন।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, এক মাসেরও বেশি সময় ধরে সবকিছু স্থবির হয়ে পড়েছে। সারাদেশের মানুষ কার্যত ‘লকডাউন’এ ঘরে বন্দি। সরকারি- বেসরকারি সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ রয়েছে। বন্ধ থাকলেও বেতন ও উন্নয়ন ফি থেকে রক্ষা নেই অভিভাবকদের। বেতন ও অন্য ফি পরিশোধের জন্য অভিভাবকদের ‘মোবাইল ফোনে’ নিয়মিত ক্ষুদে বার্তা (এসএমএস) পাঠাচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেইন বলেছেন, ‘স্কুলগুলো জোর করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন ও ফি আদায় করছে-এমন কোনো অভিযোগ আমি পাইনি। অভিযোগ এলে অবশ্যই কিছু একটা ব্যবস্থা নেয়া হবে। আবার বেতন ও ফি পরিশোধে অভিভাবকদের যেমন সমস্যা হচ্ছে, তেমনি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানকেওতো চলতে হবে? তবে আমরা চাইব, প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে সনহশীল হয়।’ এখন বেতন ও ফি আদায় না করে পরবর্তী সময়ে জরিমানা ছাড়া তা আদায়ের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন সচিব।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাসিক বেতন, সেশন ও উন্নয়ন ফি দ্রুত পরিশোধের জন্য তাগাদা দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন স্কুলে। নোটিশ ঝুলানো হয়েছে। এতে আয়-রোজগার থেমে যাওয়া, কমে যাওয়া কিংবা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে সমস্যাগ্রস্ত অভিভাবকরা বেশ বিপাকেই পড়েছেন। বেতন ও অন্য ফি পরিশোধ না করলে ভর্তি বাতিল বা জরিমানা আদায়ের হুমকি দেয়া হচ্ছে। বেতন-ভাতা মওকুফের জন্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন অভিভাবকরা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রবীণ শিক্ষক নেতা ও ‘জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০’ প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ সংবাদকে বলেন, ‘এখন দুর্যোগকালীন সময় চলছে, এই বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা এবং শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন পরিশোধের বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়েরই দেখা উচিৎ।’

রাজধানীর কয়েকটি প্রাইভেট স্কুল, কলেজ এবং আংশিক এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আর্থিক সংকটের কারণে তারাও শিক্ষক-কর্মীদের বেতন-ভাতা দিতে পারছেন না। এতে শিক্ষক-কর্মীরাও মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বারবার তাগাদা দেয়া সত্ত্বেও বেশির ভাগ অভিভাবক সন্তানদের মাসিক বেতন ও অন্য ফি পরিশোধ করছেন না। হাতেগুনা দু/একজন তা পরিশোধ করছেন। এছাড়া রাজধানীর বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটি বড় অংশই ভাড়া বাড়িতে পরিচালিত। করোনা দুর্যোগে এসব প্রতিষ্ঠান অবকাঠামো ভাড়াও পরিশোধ করতে পারছে না।

সাধারণত ঢাকার প্রায় প্রতিটি বেসরকারি বিদ্যালয় বছরের শুরুতে ভর্তি ও অন্য ফি বাবদ ছাত্র-ছাত্রী থেকে পাঁচ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা করে আদায় করে। ট্রাস্ট ও সংস্থা পরিচালিত এবং তথাকথিত বিশেষায়িত স্কুলগুলো শিক্ষাবর্ষের শুরুতে আরও বেশি অর্থ আদায় করে থাকে। এগুলোতে মাসিক বেতনও অনেক বেশি। এই দুর্যোগকালীন সময়েও ওইসব প্রতিষ্ঠান ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে বেতন ও অন্য ফি আদায়ে মরিয়া চেষ্টায় লিপ্ত।

অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানীর মাইলস্টোন, খিলগাঁওয়ের ন্যাশনাল আইডিয়াল, ফয়জুর রহমান আইডিয়াল, মুহাম্মদপুর এলাকার জেনেসিস, প্রিপারেটরিসহ বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষ বেতন ও ফি পরিশোধের জন্য অভিভাবকদের চাপ প্রয়োগ করছেন। ক্যামব্রিয়াল স্কুল কর্তৃপক্ষ বেতন ও অন্য ফি পরিশোধের জন্য তাগাদ দিয়ে পরবর্তী সময়ে সিন্ধান্ত প্রত্যাহার করেছে।

যদিও ক্যামব্রিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের চেয়ারম্যান এমকে বাশার সংবাদকে বলেন, ‘আমার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এক হাজার ৯৭ জন শিক্ষক ও কর্মী আছেন। মাসে তাদের বেতন আসে দুই কোটি ৫৫ লাখ টাকা। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফি নিয়েই শিক্ষক ও স্টাফদের বেতন দিতে হয়। তবে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর আমরা শিক্ষার্থীদের বেতন ও ফি পরিশোধের জন্য বলেছিলাম। পরবর্তী সময়ে কোনো অভিভাবককে আর চাপ দেয়া হয়নি।’

দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর গত ২৬ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সরকারি ও বেসরকারি সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পাঁচ দফা এই ছুটি বাড়ানো হয়েছে, এতে আগামী ৭ মে পর্যন্ত ছুটি থাকবে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

এই পরিস্থিতে গত ২৭ এপ্রিল গণভবনে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘স্কুল আমরা এখন খুলব না। স্কুল, কলেজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একটাও খুলব না। সেটা আমরা কখন খুলব, অন্তত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্কুল কলেজ সবই বন্ধ থাকবে। যদি করোনা ভাইরাস ততদিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। যখন এটা থামবে তখনই খুলব। বেশি সমাগম যেন না হয়।’

গত ২৬ মার্চ থেকে পাঁচ দফা সরকারি সাধারণ ছুটির ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ছুটি ঘোষণা করেছে। অথচ বন্ধের মধ্যেই প্রতিষ্ঠানগুলো মাসিক বেতন ও অন্য ফি পরিশোধের জন্য অভিভাবকদের নানাভাবে তাগাদা দিচ্ছেন, কেউ কেউ ক্ষুদে বার্তা পাঠাচ্ছেন, টেলিফোনে চাপ প্রয়োগ করছেন; এমনকি হুমকি-ধমকিও দিচ্ছেন।

জেনেসিস স্কুলের নার্সারির শিক্ষার্থী সিরাতুল জান্নাতের মা সাদিয়া আলাব্বী বলেন, ‘গত ৫ এপ্রিল আমাদের এসএমএস করা হয় এপ্রিল-মে মাসের বেতন দেয়ার জন্য। এরইমধ্যে তা পরিশোধ করেছি। এখন যদি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এভাবে বন্ধ থাকে তাহলে বেতন দেব কীভাবে?’

এদিকে ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীর অভিভাবক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি একটি বায়িং হাউজে চাকরি করি। করোনা দুর্যোগ শুরু হওয়ার বেতন পাইনি। চাকরি আছে কি না তাও জানি না। এই অবস্থার মধ্যে স্কুলে ক্লাস নেয়াও বন্ধ, অথচ প্রশাসনিক শাখা খোলা রেখে বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য আমাদের ফোন করা হচ্ছে। চাপ দেয়া হচ্ছে।’

মাইলস্টোন স্কুলের শিক্ষার্থীদের বেতন ও প্রথম সাময়িক পরীক্ষার ফি পরিশোধের জন্য ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে নোটিশ জারি করে কর্তৃপক্ষ। অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, স্কুল পর্যায়ে প্রথম সাময়িক পরীক্ষা নেয়ার সুযোগই নেই।

মাইলস্টোনের দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবক সংবাদকে বলেন, ‘দেশে লকডাউন চলছে। সবকিছু বন্ধ। স্কুলেও কোনো ক্লাস নেই। এই অবস্থায় স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের বারবার নোটিশ দিচ্ছে মাসিক বেতন ও পরীক্ষার ফি পরিশোধের জন্য। দেশে কী কোনো প্রশাসন নেই?

স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.006821870803833