কাপাসিয়ার সনমানিয়া ইউনিয়নের আড়াল টেকপাড়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা কোমলমতি শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষ থেকে বিতাড়িত হয়ে প্রায় দুই সপ্তাহ যাবত্ খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করছে। জমিদাতার ওয়ারিশদারগণের হুমকিধমকি ও বাধার কারণে এবং চেয়ার, টেবিল ও বেঞ্চ শ্রেণিকক্ষ থেকে বের করে ভাংচুর ও পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে ফেলে দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের মাটিতে বসে ক্লাস করতে হচ্ছে। প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনসহ বিভিন্ন মহলে অভিযোগ করেও এর কোনো সুরাহা পাচ্ছে না।
এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক মো. রাশেদুল ইসলাম জানান, স্থানীয় কুদ্রত আলী সরকার ১৯৭৬ সালে আড়াল টেকপাড়া মসজিদের পাশে ১০ শতাংশ জমি ফোরকানিয়া মাদরাসা নামে দানপত্র দলিলের মাধ্যমে রেজিস্ট্রি করে দেন। স্থানীয় শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিগণ ১৯৮৫ সালে এখানে একটি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করে ফোরকানিয়া মাদরাসা কক্ষেই শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন।
২০০৭ সাল থেকে এ মাদরাসা এমপিওভুক্ত হয়। বর্তমানে চার জন শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে চলতি শিক্ষাবর্ষে সর্বমোট ১১২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি রয়েছে। বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক প্রদত্ত ৫২৪২৩ নম্বর কোডের এ মাদ্রাসার স্বীকৃতির মেয়াদ রয়েছে চলতি ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
এ প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. তোফায়েল আহম্মেদ জানান, জমিদাতা কুদ্রত আলী সরকার ও তার চার জন ছেলের কেউ বর্তমানে জীবিত নেই। সম্প্রতি কুদ্রত আলীর নাতি মো. সোলায়মানের নেতৃত্বে এখানে মাদরাসাটি বন্ধ করে দেওয়ার পাঁয়তারা শুরু হয়। গত কিছুদিন আগে তারা মাদরাসাকক্ষে তালা দিয়ে রাখলে খবর পেয়ে কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ৫ সেপ্টেম্বর সরেজমিন পরিদর্শন করে মাদরাসাটির পাঠদান কার্যক্রম চালু রাখতে সকলকে নির্দেশ দেন।
কিন্তু ১৫ সেপ্টেম্বর সকালে সোলায়মানের নেতৃত্বে কিছু লোক মাদরাসা চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চসহ যাবতীয় আসবাবপত্র বের করে ভেঙে ফেলে এবং এখানে কোনো এবতেদায়ী মাদরাসা চালানো যাবে না বলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এ বিষয়ে গত ১৬ সেপ্টেম্বর প্রধান শিক্ষক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তিনি আরো জানান, বর্তমানে আড়ালবাজার থেকে সালদৈ চৌরাস্তাগামী প্রশস্ত রাস্তার পাশের এই জমিটির মূল্য বেড়ে যাওয়ায় কুদ্রত আলী সরকারের ওয়ারিশদারগণ ফোরকানিয়া মাদরাসাটি বন্ধ করে দিয়ে জমিটি দখল নেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
এ বিষয়ে মো. সোলায়মান বলেন, আমার দাদা এখানে ফোরকানিয়া মাদরাসার জন্য জমি দান করেছিলেন। তাই কোনো এবতেদায়ী মাদ্রাসা এখানে চলতে দিব না। জঙ্গলে আসবাবপত্র ফেলে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘরের ভেতরে চেয়ার, টেবিল ও বেঞ্চ থাকলে ফোরকানিয়ার ছেলেমেয়েদের অসুবিধা হয়। তাই এগুলো ওখানে রেখে দিয়েছি।
এ বিষয়ে কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসাঃ ইসমত আরা জানান, আমি মাদরাসাটির পরিদর্শন করে পাঠদান কার্যক্রম চালু রাখতে সকলকে নির্দেশ দিয়েছি। উভয় পক্ষকে আমার অফিসে ডেকেছি, তাদের বক্তব্য শুনে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।