শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করার উপায় - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করার উপায়

মোঃ মোতাহার হোসেন |

প্রায়ই শোনা যায়, শিক্ষার্থীরা দিন দিন স্কুলবিমুখ হয়ে পড়ছে। শুধু শোনা যায় বললে ভুল বলা হবে, বরং স্কুলে না যাওয়া বা স্কুল পালানোটা এখন অনেকটাই স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হচ্ছে। এর কারণ কী? এর পেছনে অনেক বিষয় জড়িত। সামাজিক অস্থিরতা, মূল্যবোধের অবক্ষয়, মাদকের বিস্তার, আকাশ সংস্কৃতির প্রভাব ইত্যাদি তো আছেই, পাশাপাশি আমাদের স্কুল ব্যবস্থাপনাগত বা পাঠদানসংক্রান্ত কোন ত্রুটি আছে কিনা তা অবশ্যই ভেবে দেখতে হবে। কারণ যত সমস্যার কথাই বলি না কেন, আমাদের সন্তানদের স্কুলমুখী করার কোন বিকল্প নেই। তাই সমস্যাটির সমাধান করতেই হবে। অন্তত আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই।

 একটা কথা বলে রাখা দরকার। সেটি হলো আমি বিষয়টিকে মাধ্যমিক পর্যায় অর্থাৎ ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির প্রেক্ষিতে আলোচনা করছি। শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করতে হলে আমাদের অতি অবশ্যই কিছু কাজ করতে হবে। প্রথমেই আসে অবকাঠামোর বিষয়টি। অবকাঠামোকে অবশ্যই সুন্দর ও আকর্ষণীয় করতে হবে। কোন রকমে একটা স্কুলঘর দাঁড় করালেই হবে না। সম্পূর্ণ স্কুলটি অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে সাজাতে হবে। আমাদের দেশে এ বিষয়টি একেবারেই অবহেলিত। 

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, কোনরূপ পরিকল্পনা ছাড়াই স্কুল স্থাপিত হয়। শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় অনেক কিছুর যেমন অভাব থাকে, তেমনি শিক্ষাবান্ধব পরিবেশও সেখানে থাকে না। ফলে সেখানে গিয়ে শিক্ষার্থীরা আনন্দময় কোন পরিবেশ পায় না। এমনিতেই পড়াশোনা একটি বিরক্তিকর  ব্যাপার। তার ওপর আনন্দময় পরিবেশ যদি না থাকে, তবে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ধরে রাখাটা খুব কঠিন। তাই পুরো স্কুলটি সাজানোর ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি স্কুলের জন্য একটি মাস্টার প্ল্যান থাকা দরকার। স্কুলের কোথায় কী থাকবে, তা এই মাস্টার প্ল্যানে থাকতে হবে।

একসাথে সব হয়ত করা যাবে না। কিন্তু প্ল্যানটা থাকলে পর্যায়ক্রমে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত সংযোজন সম্ভব। যার ফলে স্কুলের অবকাঠামোতে সংযোজন ঘটলেও পরিবেশটা এলোমেলো হবে না। কিন্তু আমাদের স্কুলগুলোতে এ ধরণের কোন পরিকল্পনা না থাকায় শুধু যে সৌন্দর্যের বিষয়টিই বিঘ্নিত হয় এমনটি নয়, বরং অনেক সময় অর্থেরও অপচয় হয়। যেমন একটি ঘর এক জায়গায় তোলা হলো। কিছুদিন পর দেখা গেল একটা বিল্ডিং করা দরকার। তার জন্য আগের ঘরটা ভাঙতে হয়। এভাবে অনেক আর্থিক ক্ষতি হয়ে যায়। একটা মাষ্টার প্ল্যান থাকলে এমন হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।
 
আর একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো শ্রেণিকক্ষটা সুন্দরভাবে সাজানো। শ্রেণিকক্ষটা আকর্ষণীয় হলে শিক্ষার্থীরা ক্লাসের প্রতি খুব আকৃষ্ট হবে এটাই স্বাভাবিক। শ্রেণিকক্ষটা যে কত সুন্দরভাবে সাজানো সম্ভব সেটা দেখেছিলাম ২০১০ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকায় টিইএ প্রোগ্রামে যোগদান করতে গিয়ে। সেখানে ট্রেনিংয়ের অংশ হিসেবে লিংকন শহরের নর্থস্টার হাইস্কুলে আমার দু’সপ্তাহ শ্রেণিপাঠদান কার্যক্রমে অংশ গ্রহণের সুযোগ হয়েছিল। ওখানে শ্রেণিকক্ষগুলো শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন অনুযায়ী অসাধারণভাবে সাজানো। ওখানে এক একটা শ্রেণিকক্ষ নির্দিষ্ট বিষয়ের ক্লাস নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি দ্বারা সাজানো।

মনে করুন, এখন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ভূগোল ক্লাস। শিক্ষার্থীরা সবাই যাবে ভূগোলের স্যারের কক্ষে, যেখানে শিক্ষক ভূগোল বিষয় পড়ানোর সব ধরণের সরঞ্জাম নিয়ে অপেক্ষা করছেন। পরের পিরিয়ডে গণিতের ক্লাস থাকলে শিক্ষার্থীরা যাবে গণিতের স্যারের কক্ষে। এভাবে শিক্ষার্থীরা কক্ষ পরিবর্তন করে। শিক্ষক নিজ নিজ কক্ষে অবস্থান করেন। এতে করে পাঠ উপকরণগুলো বারবার টানা হেঁচড়া করার ঝামেলা না থাকায় এগুলো সুন্দর থাকে এবং বহুদিন টিকে থাকে। পাঠদানের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো হাতের কাছে সহজেই পাওয়া যায়। আমেরিকানরা তদের শ্রেণিকক্ষের অবস্থা এই পর্যায়ে রাতারাতি নিয়ে এসেছেন, এমন ভাবার কারণ নেই। আর চেষ্টা করলে আমরা পারব না এমনটাও ভাবার কারণ নেই।

শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করার গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারেন প্রধানশিক্ষক মহোদয়গণ। আমার বিশ্বাস একজন প্রধানশিক্ষকের কার্যক্রমে যদি সততা ও স্বচ্ছতা থাকে এবং তিনি যদি নেতৃত্বগুণ সম্পন্ন হন, তবে তাঁর পক্ষে স্কুল চালানো খুবই সহজ। তাঁর পক্ষে সকলের সহযোগিতায় স্কুলে শিক্ষাবান্ধব একটি পরিবেশ গড়ে তোলাও খুবই সম্ভব। আর শিক্ষার্থীদের সব রকমের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা তাঁর অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। একজন প্রধান শিক্ষক হিসেবে এই দায়িত্ব পালন থেকে তাঁর পিছু হটার বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই।

শিক্ষার্থীদের স্কুলে আকৃষ্ট করার ব্যাপারে সবচেয়ে বলিষ্ঠ ও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন আমাদের শিক্ষকরা। আমার ধারণা, শিক্ষকদের প্রচেষ্টা এ ক্ষেত্রে মন্ত্রের মত কাজ করতে পারে। তবে দু’একজনের চেষ্টায় তেমন কিছু হবে বলে  মনে হয় না। এক্ষেত্রে দরকার সম্মিলিত ও সর্বাত্মক প্রচেষ্টা। আর একটি কথা। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, শিক্ষকের পাঠদান আকর্ষণীয় হয় তাঁর ক্লাস শিক্ষার্থীরা এখনও মনযোগ দিয়ে শোনে। তাঁর ক্লাসের জন্য তারা আগ্রহ করে অপেক্ষা করে থাকে। আর একটা সুন্দর ক্লাসের জন্য দরকার ভাল প্রস্তুতি। ন্যূনতম প্রস্তুতি ছাড়া ভাল ক্লাস নেয়া কীভাবে সম্ভব? একজন ক্রিকেটার বা ফুটবলারের কথা ভাবুন, যিনি তাঁর দৃষ্টিনন্দন খেলা দিয়ে সারা বিশ্বের কোটি কোটি দর্শককে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখেন। কিন্তু তাঁর এই ক্ষমতা কি রাতারাতি অর্জিত হয়ে যায়? আমরা কি ভেবে দেখি এর জন্য তাঁকে কতটুকু শ্রম দিতে হয়েছে? একজন কন্ঠশিল্পী তাঁর গান দিয়ে স্টেজ মাতিয়ে রাখেন। কিন্তু আমরা কি খবর রাখি সুন্দর সঙ্গীত পরিবেশনের জন্য কী পরিমাণ রেওয়াজ তিনি করেন? তবে প্রস্তুতি ছাড়া আমাদের ক্লাসে শিক্ষার্থীরা মনোযোগী হবে এটা কীভাবে আশা করি? 
শিক্ষকতাকে আমরা যারা পেশা হিসেবে নিয়েছি, শিক্ষার মান উন্নয়নের চেষ্টা তাই আমাদেরই করতে হবে এবং তা করতে হবে আমাদের নিজেদের স্বার্থেই। আমরা যদি নিজেদের কাজটায় একটু বেশি সময় দিয়ে, শ্রম দিয়ে, মাথা খাটিয়ে পাঠদানটাকে আকর্ষণীয় করতে পারি তবে আমার বিশ্বাস আমাদের ক্লাসগুলোর জন্য শিক্ষার্থীরা আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে থাকবে। আর এক্ষেত্রে পরিশ্রম ও ত্যাগ স্বীকারের কোন বিকল্প নেই। গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস মূলত ছিলেন একজন শিক্ষক। আর এথেন্সের যুবকদের শিক্ষা দিতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত তাঁর প্রাণটাই দিতে হলো। আর তাঁর এই ত্যাগের হাত ধরেই সারা বিশ্বে আধুনিক শিক্ষার ভিত্তি গড়ে উঠেছে। আমাদের মত সাধারণ মানুষের পক্ষে তাঁর মত ত্যাগ স্বীকার করা তো সম্ভব নয়। তবে আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করার জন্য কিছু ত্যাগ স্বীকার তো করতেই হবে। 

মাধ্যমিক পর্যায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হরো প্রক্সি ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা। কোন শিক্ষক স্কুলে উপস্থিত না থাকলে অন্যদের মাধ্যমে তাঁর ক্লাস নেয়ার ব্যবস্থা এটি। অনেক সময় এই ধরণের ক্লাসে শিক্ষার্থীদের তেমন কোন কাজ হয় না বললেই চলে। যেমন ধরুন, আজ গণিতের স্যার স্কুলে নেই। স্যারের ক্লাসের সময় গণিত ক্লাস নিতে পারেন, এমন অন্য সবার নিজের ক্লাস আছে। ওই পিরিয়ডে ইসলাম শিক্ষার স্যারের কোন ক্লাস নেই। এ অবস্থায় তাঁকেই গণিতের ক্লাসে পাঠানো হলো। এই ক্লাস থেকে শিক্ষার্থীদের সময় কাটানো ছাড়া কোন লাভ হবে না। এ ধরণের ক্লাস অনেক সময় শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সবার জন্য বিরক্তির কারণ হয়। আমেরিকার স্কুলে আমি দেখেছি, প্রক্সি ক্লাসের জন্য নিয়মিত শিক্ষকদের বাইরে কিছু নিবন্ধিত শিক্ষক আছেন। কোন শিক্ষক ছুটিতে গেলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিবন্ধিত শিক্ষককে দিয়ে ছুটিতে থাকা শিক্ষকের ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়, যিনি ক্লাস নেওয়ার জন্য ভালভাবে প্রস্তুতি নিয়ে আসেন এবং তাঁর ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা খুব উপকৃত হয়। আমাদের দেশেও এমন একটি ব্যবস্থা চালু করা এমন কিছু কঠিন কাজ নয়। সীমিত সংখ্যক স্কুলে হলেও এটা চালু করে দেখা যায়। বেসরকারি অনেক তহববিল তো স্কুলে আছেই। শিক্ষার্থীদের সুবিধার কথা ভেবে এ সম্পর্কিত আর একটা তহবিল গঠন করলে তেমন অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। বরং প্রক্সি ক্লাসগুলো সুন্দর হলে শিক্ষার্থীদেরই লাভ। একটা বিষয় বলতে চাই আমেরিকায় শিক্ষকরা ভালভাবে পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়া কোন ক্লাস নেন না। তাঁরা স্কুল ছুটির পর পরের দিনের ক্লাসের প্রস্তুতি শেষ করে বাড়ি যান। ফলে শিক্ষার্থীরা পরেরদিন তাঁর কাছ থেকে সুন্দর ক্লাস উপহার পায়।

স্কুলে শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করার আর একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হল সহপাঠক্রমিক কার্যক্রম। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে উৎসাহিত করা সম্ভব। আজ যে শিক্ষার্থীকে খুব সাধারণ ভাবছি, হয়ত তার মাঝেই লুকিয়ে আছে অসাধারণ কোন প্রতিভা। একটু সুযোগ পেলেই সে হয়ত পেয়ে যেতে পারে তার গন্তব্যের সন্ধান, সমাজকে করতে পারে আলোকিত। তাই ক্লাসের পাশাপাশি সহপাঠক্রমিক কাজেও আমরা অর্থাৎ শিক্ষকরা যদি একটু বেশি সময় দিই, তবে শিক্ষার্থীদের প্রতিভা বিকাশের যেমন সুযোগ সৃষ্টি হবে, তেমনি তারা স্কুলমুখী হবে বলেও আমার বিশ্বাস। আর এভাবেই তাদের মাদক, জঙ্গিবাদ ইত্যাদি থেকে দূরে রেখে সুন্দর সমাজ গঠন সম্ভব হবে। 


 
দেশের স্বার্থেই আমাদের স্কুলের শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। আর কাজটা যে খুব কঠিন এমন না। আবার খুব যে সহজ তাও না। এর জন্য একটু পরিশ্রমতো করতেই হবে। ইউরোপ বা আমেরিকায় শিক্ষার যে পরিবেশ তা একদিনের ফসল নয়। বরং দীর্ঘদিনের পরিশ্রমের ফলে সেসব দেশ শিক্ষার পরিবেশকে এই পর্যায়ে আনতে পেরেছে। আমরাও এখন উন্নয়নশীল দেশ। সাধারণ মানের স্কুল নিয়ে বসে থাকলে এখন আর আমাদের চলবে না। তাই বিষয়টি নিয়ে কাজ আমাদের করতেই হবে। এক্ষেত্রে  শিক্ষাসংশ্লিষ্ট সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার। প্রশাসন, শিক্ষাসংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, ম্যানেজিং কমিটি, স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারী, অভিভাবক সবার একযোগে কাজ করে স্কুলে শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। স্কুলের সামগ্রিক পরিবেশের উন্নয়নে ম্যানেজিং কমিটির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির ভূমিকা যত ভাল, সে স্কুলের পরিবেশও তত ভাল। ম্যানেজিং কমিটি চাইলে স্কুলের পরিবেশ সুন্দর হবে না, এটা আমি বিশ্বাস করি না।

শিক্ষার উন্নয়নে সরকারের চেষ্টাও কিন্তু কম নয়। অবকাঠামোর উন্নয়ন, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, সারা দেশের বহু স্কুলে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন, আইসিটি লার্নিং সেন্টার  নির্মাণ, অনেক উপজেলায় শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য ইউআইআরটিসিই ভবন নির্মাণ, ডিজিটাল কন্টেন্টের মাধ্যমে পাঠদানের জন্য ল্যাপটপ, প্রজেক্টর ও মাল্টিমডিয়া সরবরাহসহ সব ধরণের প্রচেষ্টাই সরকারের পক্ষ থেকে অব্যাহত আছে। কিন্তু প্রশিক্ষণ নেয়ার পরেও আমাদের পাঠদানে যদি কোন পরিবর্তন না আসে, পাঠদান যদি আগের মতই হয়, তবে প্রশিক্ষণ নিয়ে লাভ হবে না। সরকারের দেওয়া  সুবিধাগুলো যথাযথভাবে কাজে লাগাতে না পারলে তো প্রকৃত সুফল আসবে না। আমরা যদি এ সুযোগগুলোকে সঠিকভাবে কাজে লাগাই, তবেই পাঠদান সুন্দর হবে যার সুফল পাবে শিক্ষারর্থীরা। তখন তারা তাদের স্কুলের প্রতি মনোযোগী হবেই।

আমাদের দেশের পাবলিক পরীক্ষায় অনেক শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়। এই দায়ভার কি শুধু তাদের? দায়ভার তো আমাদেরও নিতে হবে। একজন শিক্ষার্থী নবম ও দশম শ্রেণিতে একই বই দুই বছর পড়েও এসএসসিতে পাস করতে পারবে না, এটা খুব দুঃখজনক। দুর্বল শিক্ষার্থীদের নিয়ে আগে থেকেই একটু কাজ করলে এ পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব। আর সবল শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটু কাজ করলে জিপিএ ৫এর সংখ্যাও বাড়ানো সম্ভব। আমার স্কুলের ভাল ফলাফল চাইব আর একটু বাড়তি পরিশ্রম করব না তা কি হয়?

আমির খানের বিখ্যাত সিনেমা 'তারে জামিন পার' যারা দেখেছেন তাঁরা অবশ্যই বুঝেছেন একজন ভাল শিক্ষক কীভাবে শিক্ষার্থীদের প্রভাবিত করে তাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারেন। এটা শুধু সিনেমায় নয় বাস্তবেও সম্ভব। একজন নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক শিক্ষার্থীর সুপ্ত প্রতিভাকে বিকশিত করার ক্ষেত্রে বিশাল ভূমিকা রাখতে পারেন। শিক্ষার্থীর মধ্যে মননশীলতা জাগিয়ে তোলার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা সীমাহীন। বিশ্ববিজয়ী আলেকজান্ডারের শিক্ষক ছিলেন এরিস্টটল। আলেকজান্ডার বহু দেশ জয় করেছিলন। কিন্তু জয়ের পর তিনি কোন দেশেই কোনরূপ ধ্বংসলীলা চালাননি। তাঁর এই ধৈর্যশীল আচরণে এরিস্টটলের শিক্ষাদানেরই প্রভাব রয়েছে বলে মনে করা হয়।

শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করার ব্যাপারে শিক্ষকদের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি বলে আমি মনে করি। শিক্ষকদের অনেকেই সহায়তা করতে পারেন এটা ঠিক, তবে কাজের কাজটা করতে হবে শিক্ষকদেরই। শিক্ষার্থীদের ভালবেসে, আন্তরিকতা দিয়ে স্কুলটাকে শিক্ষার প্রাণকেন্দ্রে পরিণত করতে পারেন শিক্ষকরাই। তাঁরা শিক্ষার্থীদের শুধু যে পাঠ্যবই পড়িয়ে পরীক্ষায় পাস করার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবেন তা নয়; বরং তাঁরা শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের দুয়ার খোলে দেয়ার চেষ্টা করবেন। তাঁরা শিক্ষার্থীদের প্রতিনিয়ত স্বপ্ন দেখাবেন; আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন, সক্রেটিস, আইনস্টাইন, বঙ্গবন্ধু, রবীন্দ্রনাথ বা নজরল হওয়ার স্বপ্ন। স্বপ্ন অবশ্যই দেখাতে হবে। যার মধ্যে স্বপ্ন নেই, সে এগিয়ে যাবে কী করে! আর স্বপ্ন দেখাতে হলে নিজেওতো স্বপ্ন দেখতে হবে। যে শিক্ষক নিজেই স্বপ্ন দেখেন না, তিনি তাঁর শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন দেখাবেন কী করে?

একটা বিষয়ে আমাদের খুব গুরুত্ব দিতেই হবে। আর সেটি হলো আমাদের নিজেদের স্বার্থে, শিক্ষার্থীদের স্বার্থে, সর্বোপরি দেশের স্বার্থে স্কুলকেই শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র বানাতে হবে। আমরা আমাদের দেশটাকে উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশে পরিণত করতে চাই। আর এর জন্য দরকার আমাদের শিক্ষার্থীদের দক্ষ ও মননশীল জনসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলা। এ লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে আমাদের স্কুলগুলোকে মানসম্পন্ন বা উন্নত করার কোন বিকল্প নেই। আর এজন্য দরকার সুদূরপ্রসারী ও কার্যকর উদ্যোগ এবং সরকার, ম্যানেজিং কমিটি, প্রধানশিক্ষকসহ সকল শিক্ষক ও অভিভাবকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। আমার বিশ্বাস, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাকে কাজে লাগাতে পারলে আমাদের শিক্ষার্থীরা স্কুলমুখী হবেই।

লেখক : সহকারী জেলা শিক্ষা অফিসার, নেত্রকোণা

 

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.02592396736145