দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের মেধাবী শিক্ষার্থীরা আজ পরশ্রীকাতরতা ও হিংসার বশবর্তী হয়ে নানাভাবে অন্যায়-অবিচার ও নির্যাতনের নির্মম শিকার হচ্ছে। তুচ্ছ কোনো ইস্যু নিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত্ নষ্ট করার জন্য আজ তারা উঠে-পড়ে লেগেছে। মানুষ নামক এসব হিংস্র অমানুষগুলো আজ বাংলাদেশের জন্মদাত্রী প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর মাথা ফাটিয়ে দিচ্ছে। বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।
নিবন্ধে আরও জানা যায়, কখনো বা মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। হিংসার রোষানলে পতিত হওয়া এসব মেধাবী শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপের মধ্যে দিন পার করতে হচ্ছে। তাদের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে এসেছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল স্বেচ্ছাপ্রণোদিত তরুণ শিক্ষার্থী। যারা অসহায়, নির্যাতিত ও নিপীড়িত শিক্ষার্থীদের বিপদের মুহূর্তে তাত্ক্ষণিক পদক্ষেপ নিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন এবং সমস্যার স্থায়ী সমাধান করেন। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা মঞ্চ’ নামে একটি গ্রুপ খোলেন। গ্রুপে যুক্ত রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রছাত্রীদের যারা প্রতিষ্ঠিত, বিশেষ করে পুলিশ প্রশাসন ও বিচার বিভাগে কর্মরত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন মহামারি করোনার ছুটিতে বাড়িতে অবস্থান করছে। গ্রামের কিছু মাতব্বর ও এলাকার ঈর্ষান্বিত প্রতিবেশীরা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত্ নষ্ট করার জন্য মিথ্যা মামলা দেওয়াসহ অন্যায়ভাবে হেনস্তার মুখোমুখি করছে। এতে করে শিক্ষার্থীরা অসহায় ও নিরুপায় হয়ে মানসিক চাপের মুখে পড়ে কেউবা আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে, কেউবা মানসিক কষ্টে কাতরাচ্ছে।
অথচ এক জন শিক্ষার্থী সারাজীবন কঠোর পরিশ্রম করে পড়াশোনা করে বিধায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পায়। শিক্ষার্থীরা পড়ালেখার গণ্ডি পেরিয়ে পরিবার, সমাজ ও দেশের হাল ধরার স্বপ্ন দেখে, আশায় বুক বেঁধে রাখে বঙ্গবন্ধুর এই দেশকে এক দিন স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবে। কিন্তু কিছু কুচক্রী মহল সব স্বপ্ন, আশা একটা মিথ্যা মামলা দিয়ে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এ সমাজ শুধু তাকিয়ে দেখছে। কোনো প্রতিবাদ করছে না। কারণ মনুষ্যত্বহীন মানুষকে সমাজও ভয় পায়। এইসব অমানুষদের উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন রক্ষা করতে কাজ করছে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা মঞ্চ’। শিক্ষার্থীরা অন্যায়ভাবে কোথাও কোনো প্রকার হেনস্তার শিকার হলে তাত্ক্ষণিক পদক্ষেপ নিবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা মঞ্চ নামক গ্রুপের অত্যন্ত বিনীত, সুভাষী ও সক্রিয় সদস্যরা। যারা নিজের খেয়ে অন্যের বিপদে বিনা স্বার্থে নিবেদিত থাকে। সম্প্রতি অন্যায়ভাবে ঢাবির বাংলা বিভাগের এক শিক্ষার্থীর মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার ঘটনা গ্রুপে জানানো হলে তাত্ক্ষণিক পুলিশ সেখানে গিয়ে একজনকে গ্রেফতার করে ও মামলা দায়ের করে। পরবর্তীকালে মামলার তিন জন আসামিকেই গ্রেফতারপূর্বক জেলহাজতে প্রেরণ করেন। এটা শুধু একটা পদক্ষেপের কথা বলেছি। এ রকম বহু সাহায্যের হাত তারা বাড়িয়ে দিয়ে দেশে শান্তি বজায় রাখার কাজ করছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মদাত্রী প্রতিষ্ঠান। এখানে জন্ম নিয়েছে লাল সবুজের পতাকা, জয় বাংলা স্লোগান, স্বাধীনতার রক্ষাকবজ মুজিব বাহিনী, স্বাধীনতার ইশতেহার আর জাতির জনকের হাজার বছরের অন্ধকারভেদী সূর্যপ্রতিম স্বপ্ন স্বাধীন বাংলাদেশ। তাই আমাদের গায়ে হাত দেওয়ার আগে দশবার ভাববেন। প্রতিদিন সাবধান করতে পারব না হয়তো এক দিন গুঁড়িয়ে দেব। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘ঢা বি নি ম’ এর মতো গ্রুপ খুলেছে। এই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধাররা বলেছেন, আমরা একটা সিস্টেমের পথিকৃত্, আমরা রোল মডেল। সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। বড় ভাইদের এমন মহত্ উদ্যোগ ও সহযোগিতায় শিক্ষার্থীরা আজ গর্বিত। তারা আজ মাথা উঁচু করে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারছে, পারছে নতুন স্বপ্ন দেখতে।
লেখক : নিগার সুলতানা, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়