শিক্ষার্থীর কৃতিত্ব ব্যক্তিগত সাধনার ফল - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষার্থীর কৃতিত্ব ব্যক্তিগত সাধনার ফল

অধ্যাপক ড. মো. লোকমান হোসেন |

বিগত কয়েক দশকের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায় অনেক অখ্যাত ও অপর্যাপ্ত ভৌত অবকাঠামো সম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন বোর্ডে অনেক ভালো ফলাফল করেছে। আর সেসব প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা দেশ বিদেশে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে দেশের সুনাম বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।

সম্প্রতি লক্ষ করা গেছে গুটি কয়েক স্কুল বা কলেজে ভর্তি যুদ্ধে বিজয়ী হতে না পারলে ছাত্র ও অভিভাবকগণ মন খারাপ করেন এবং নানাভাবে নিজেদের দোষারোপ করার চেষ্টা করেন। কয়েকটি উদাহরণ থেকে পাঠকদের ধারণা দিতে চাই যে, নামকরা স্কুল সেরা শিক্ষার্থী তৈরি করবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই।

গোলাম ছামদানী নামে একজন শিক্ষার্থী কুমিল্লা জেলার আকুবপুর হাইস্কুল থেকে আমাদের সময়ে ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দে ৮শ’ ১৪ নম্বর পেয়ে কুমিল্লা বোর্ডে প্রথম এবং সেই ছাত্র ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বোর্ডে ৯শ’ ৩২ নম্বর পেয়ে ইতোপূর্বের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে প্রথম স্থান অধিকার করে। তার এই সাফল্যের কারণে চাঁদপুর জেলার অন্তর্তগত মতলব জে. বি. পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক ও পরে রেক্টর মরহুম ওয়ালি উল্লাহ পাটোয়ারী স্যার তাকে মতলব স্কুলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এক সপ্তাহকাল অতিবাহিত করতে অনুরোধ করেন।

স্যার ছেলেটিকে ডেকে বললেন, আকুবপুর স্কুলের নাম তো আমরা কখনই শুনিনি, তুমি বাবা এইরূপ চমৎকার ফলাফল করে আমাদেরকে বেকুব করলে কী প্রকারে? এই প্রশ্নের উত্তরে সে বলেছিল, কুমিল্লা বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. সিরাজ উদ্দিন স্যারও সন্দেহক্রমে আমাকে ডেকে অনুরুপ প্রশ্ন করেছিলেন। আমি উত্তরে বলেছিলাম, আমি যখন সেভেন-এইট ক্লাসে পড়তাম তখন নাইন-টেন-এর সিলেবাস নিজে নিজেই শেষ করেছিলাম এবং নাইন-টেনে পড়াকালীন সময়ে ইন্টারমেডিয়েট ক্লাসের পাঠ্যবই অধ্যয়ন করেছিলাম। এর ফলে আমার লেখায় পরীক্ষকগণ নতুনত্ব পেয়ে সম্ভবত আমাকে সর্বোচ্চ মার্কস দিয়েছিলেন। এটাই আমার কৃতিত্বের রহস্য। 

স্যার ঐ শিক্ষার্থীকে তার সাধনার ফলস্বরূপ মতলবের পক্ষ থেকে পাঁচ শ’ টাকা পুরস্কার দিয়েছিলেন। ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে চাঁদপুরের তদানীন্তন এসডিএসকে দেহলভী সাহেব, আইসিএস এম. জামান সাহেব মতলব স্কুলে এসে বিতর্ক প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠানে মতলব স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী আব্দুর রহিমকে আন্তর্জাতিক রাজনীতি সম্পর্কে বর্ক্তৃতা দিতে বলেন। তখন তিনি আধাঘণ্টাকাল এমন চমৎকার বক্তৃতা দেন যে, তাঁরা তার বক্তৃতাকে অনন্যসাধারণ বলে মন্তব্য করেন।

এই ছাত্র কখনো রাজনীতি করেননি; কিন্তু খবরের কাগজ রীতিমতো পড়তেন। আর এই ছাত্রই ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় মুসলমান পরীক্ষার্থীদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করে রোনাল্ডস্ ও মোমেন প্রাইজ অর্জন করেছিলেন।

১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে মতলব স্কুলের আরেক শিক্ষার্থী আব্দুল মতিন পাটোয়ারী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান এডুকেশন বোর্ডে ফার্স্ট হয়েছিলেন। এই ছাত্র ৭ম থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত দূর-দূরান্তে জায়গীর (লজিং) থেকে লেখাপড়া করতেন। কেবল টেস্টের পর বোর্ডের পরীক্ষা পর্যন্ত হোস্টেলের ব্যবস্থা করা হয়েছিল স্কুল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে। এমন দিন যায় নাই, তিনি একটা Translation or Re-translation Passage করেননি। তিনি মেট্রিকুলেশন পরীক্ষার পূর্বে ৫-৬ বৎসরের টেস্ট পেপার সমাধান করেছিলেন।

১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে মতলব স্কুলের শিক্ষার্থী গোলাম রসুল মিয়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে ৬ বিষয়ে লেটারসহ ডাক্তারি পাস করেছিলেন। দারিদ্র্য ও প্রতিকূল অবস্থা তার অধ্যবসায়ের নিকট হার মানে। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংক এর সাবেক গভর্নর ড. আতিয়ার রহমানের কথাও জানি। তিনি কঠিন অধ্যবসায়ের মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। দেখা গেছে, যেসব ছাত্র স্কুলের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে প্রশংসিত হয়েছে তারা দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে লেখাপড়া করে নিজেদেরকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে।

শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হক এবং ইসমাইল হোসেন সিরাজী প্রাঞ্জল ভাষায় জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিতেন বলে লোকে মন্ত্রমুগ্ধবৎ হয়ে তা শুনতো। বক্তৃতাও একটি আর্ট, এটি চেষ্টা করে আয়ত্ত করতে হয়। যেমনটা করেছিলেন বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ইতালির ডেমোস্থিনিস ও ইংল্যান্ডে লর্ড ব্যাকন ফিল্ড।

মেধা হলো ছাইচাপা আগুণ যা কোনো প্রতিকূলতা মানে না। মেধা তৈরি হয় প্রাকৃতিক জগত থেকে ও কঠোর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে। সুতরাং সাধনা ছাড়া কোনো ক্ষেত্রেই সিদ্ধিলাভ সম্ভব নয়।
 
লেখক : পরিচালক (গবেষণা ও তথ্যায়ন), জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম)।

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0040791034698486