শিক্ষক এমন একজন মানুষ যাঁর প্রতিটি কথায়, প্রতিটি কাজে, প্রতিটি আচরণে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য থাকবে যেটা শিক্ষার্থী তথা সমাজের সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। তবে একজন মানুষ যেমন মায়ের গর্ভ থেকে সকল গুণ নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন না, তেমনি একজন শিক্ষকও সব গুণে গুণান্বিত হয়ে এই মহান পেশায় আসেন না। শিক্ষকতা পেশায় আসার পরেই অনেকে নিজেকে পরিবর্তন, পরিবর্ধনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর নিকট প্রিয় হয়ে ওঠার চেষ্টা করেন। এতেই এ পেশার গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়। শনিবার (২৭ জুলাই) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। নিবন্ধটি লিখেছেন শাহানাজ বেগম শিখা।
একজন শিক্ষার্থী, একজন অভিভাবক, সমাজ, দেশ বা রাষ্ট্র কী রকম শিক্ষক আশা করেন সেটা আমাদের জানতে হবে। শিক্ষার্থী কেমন শিক্ষক চান তা একজন শিক্ষার্থীর অভিমত থেকে জানা যায়। একজন শিক্ষক তেমনই হবেন যেমনটি তাঁর শিক্ষার্থীরা চান।
পঞ্চম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থীর নিকট জানতে চাওয়া হয়েছিল, তোমার প্রিয় শিক্ষক কে? উত্তরে সে একজন শিক্ষকের নাম বলেছিল। কেন তিনি তোমার প্রিয়? এই উত্তরে সে বলে, তিনি বকা দেন না, আদর করেন, পড়া খুব ভালোভাবে বুঝিয়ে দেন। সেজন্য তিনি আমার প্রিয় শিক্ষক। আবার অষ্টম শ্রেণির একজন ছাত্রী একই প্রশ্নের উত্তরে বলেছিল, সালমা ম্যাডাম (ছদ্মনাম) আমাদের পড়া ভালোভাবে বুঝিয়ে দেন, উপকরণ দিয়ে ক্লাস নেন, হাতেকলমে কাজ করান, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের মাধ্যমে পড়াগুলো সহজভাবে বুঝিয়ে দেন, যাতে আমরা খুব সহজেই পড়াটা মনে রাখতে পারি। এজন্যই তিনি আমাদের প্রিয় শিক্ষক। আবার কোনো কোনো শিক্ষকের কথা বলা, উপদেশমূলক বাক্য, ভালো ব্যবহার ইত্যাদিও শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করে।
বর্তমান যুগ আধুনিক ও ডিজিটাল যুগ। আগের দিনের মতো শুধু রিডিং পড়িয়ে, বক্তৃতা দিয়ে পড়ানোর দিন শেষ। শিক্ষক যদি মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের মাধ্যমে ক্লাস না নেন, তাঁর যদি আইসিটি, ইন্টারনেট সম্পর্কে ধারণা না থাকে, তিনি যদি কনটেন্ট তৈরি করতে না পারেন তাহলে বিজ্ঞানমনস্ক ছাত্রীকে আমরা কীভাবে উচ্চতর জ্ঞানে অধিষ্ঠিত করব? আজকের এই ডিজিটাল যুগে প্রত্যেকটা ছাত্রছাত্রী মোবাইল, কম্পিউটার, ইন্টারনেট চালনায় পারদর্শী। সেখানে আমরা তাদেরকে শিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে কতটা পারদর্শী হয়ে উঠেছি সেটাই ভাববার বিষয়।
শিক্ষককে হতে হবে মনস্তাত্ত্বিক, যাতে তিনি শিক্ষার্থীর মনোভাব সঠিকভাবে বুঝতে পারেন। যেটা অন্য কোনো পেশায় না থাকলেও চলে। শিক্ষক হবেন সৃজনশীল, চিন্তাশীল, সত্, মেধাবী, নিরহংকারী, অনুসন্ধিত্সু মনের অধিকারী। শিক্ষককে যে খুব বেশি জ্ঞানী হতে হবে, তেমনটি নয়। তবে উপস্থিত জ্ঞান ও বিষয় ভিত্তিক জ্ঞান থাকাটা বেশি জরুরি। শিক্ষক সব সময় জ্ঞান অর্জনের মধ্যে থাকবেন এবং আত্মউপলব্ধি ও আত্মশুদ্ধির জন্য সচেষ্ট হবেন।
শিক্ষক সমাজের দর্পণ স্বরূপ। সুস্থ ও সুন্দর সমাজের প্রতিচ্ছবি আমরা শিক্ষকের মাধ্যমে দেখতে পাই। শিক্ষার্থীর নৈতিকতা বিকাশে শিক্ষকের দায়বদ্ধতা অনেক বেশি। মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে শিক্ষকের ভূমিকা অপরিসীম। তাই একজন আদর্শ শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে বাস্তব জীবনে শিক্ষার্থী হয়ে ঊঠতে পারে একজন পরিপূর্ণ মানুষ। তবেই গড়ে ঊঠবে সমৃদ্ধ ও উন্নত সমাজ।
লেখক : সহকারী শিক্ষক, কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।