শিক্ষার্থীর মনোজগৎ বিকাশে কার কী ভূমিকা - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষার্থীর মনোজগৎ বিকাশে কার কী ভূমিকা

মো. সজীব মল্লিক |

সুষ্ঠু মানসিক বিকাশ ব্যতীত শিক্ষা গ্রহণ সম্ভব নয়। বেশি কিছু না কেবল ছোট ছোট কিছু কাজের মাধ্যমে একজন শিক্ষক চাইলেই শিক্ষার্থীর মনস্তাত্ত্বিক জগতের ইতিবাচক উন্নয়ন ঘটাতে পারে। যেমন- শ্রেণিকক্ষে কোনো কাজ দেওয়া হলে শিক্ষক যখন এটি মূল্যায়ন করেন বা যখন বাড়ির কাজ মূল্যায়ন করেন তখন শুধু লাল কালির একটা টিক না দিয়ে যদি পাশাপাশি ছোট ছোট কিছু শব্দ (চমত্কার, খুবই সুন্দর, দারুণ, স্মাইল একটা ফেস আঁকা, অসাধারণ ইত্যাদি) লিখে তাহলে শিক্ষার্থীরা যে কতটা খুশি ও আগ্রহশীল হয়ে পরবর্তী কাজগুলো সমাধান করবে তা কল্পনাতীত।

আবার কোনো একজন শিক্ষার্থী হয়তো পারিবারিক সমস্যা থাকার কারণে ক্লাসে চুপচাপ থাকে কিংবা কেউ কেউ হয়তো অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত আছে, তখন যদি একজন শিক্ষক তার কাঁধে হাত রেখে বেশি না জাস্ট দশটা মিনিট তাকে কনসালটেশন দেয় তাহলে তার মধ্যে যে পরিবর্তন আসবে সেটা অন্য মেডিসিন দ্বারা সম্ভব নয়। ক্লাসে মেধার দিক থেকে যারা অনেকটা দুর্বল তাদের যদি সমানভাবে মূল্যায়ন হয়, তাদের মতামতকে যদি প্রাধান্য দেওয়া হয় কিংবা তাদের খানিকটা সময় দেওয়া হয়, তাদের নিয়ে ছুটির পরে একটু বসা হয় তাহলে ঐসব শিক্ষার্থীর মধ্যে আগ্রহ জন্ম নিবে। মানসিক চাপ থেকে তারা অনেকটাই মুক্তি পাবে। এরূপ একজন শিক্ষক যে কোনো শিক্ষার্থীর জীবনে আজীবন স্মরণীয় ও শ্রদ্ধাভাজন হয়ে থাকবে তার ছোট ছোট প্রচেষ্টার বিনিময়ে, এটা আমার বিশ্বাস।

অর্থাত্ একজন শিক্ষক যদি সঠিকভাবে ক্লাসরুম ম্যানেজমেন্ট করতে পারে তাহলে শিক্ষার্থীর মানসিক বা মনস্তাত্ত্বিক যেমন বিকাশ সাধন হবে তেমনি তাদের মধ্যে শিক্ষাটাকে আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করার প্রবণতা বাড়তে থাকবে। এক্ষেত্রে একজন শিক্ষক নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করতে পারে—১. শ্রেণিকক্ষের সবাইকে সমান চোখে দেখা ও সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা। ২. পাঠ শেষে সেখান থেকে ছোট ছোট প্রশ্ন করা, যাতে করে পাঠদানের সময় শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আনা সম্ভব হয়। ৩. মাঝে মাঝে কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা যাতে করে তাদের মধ্যে আগ্রহ জন্মে। ৪. ক্লাসে যারা একটু দুষ্টু প্রকৃতির, মাঝে মাঝে তাদের কোনো একটা কাজের দলনেতা বানানো। যাতে তারা দুষ্টুমি করার সুযোগ না পায়। যারা শুধু মেধার দিক দিয়ে আগানো তাদের সবসময় দলনেতা বানানো উচিত নয়। ৫. শিক্ষার্থীদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা। যাতে শিক্ষার্থীরা যে কোনো সমস্যা শিক্ষকদের সাথে শেয়ার করতে পারে। এতে করে শিক্ষার্থীদের  হীনমন্যতায় ভোগার হার অনেকটাই লাঘব করা সম্ভব। এরূপ বিভিন্ন উপায়ে একজন শিক্ষক ক্লাসরুম ম্যানেজমেন্ট করতে পারে, পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মনোজগত্-এর বিকাশ ঘটাতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারে।

অন্যদিকে শিক্ষকের পাশাপাশি অভিভাবকরাও শিক্ষার্থীর মানসিক বা মনোজগত্ বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কেননা স্কুল থেকে ফিরে এসে বাকি সময়টুকু সে তার পরিবারের সঙ্গেই কাটায়। অনেক সময় দেখা যায় অভিভাবকরা শিক্ষার্থীদের অনেক চাপ প্রয়োগ করে কিংবা অনেক কঠিন সাজা প্রদান করে। এক্ষেত্রে তখন দেখা যায় শিক্ষার্থীদের মনে অভিভাবকদের প্রতি একটা নেতিবাচক ধারণা জন্ম নেয়। তারা মানসিক হীনমন্যতায় ভুগতে থাকে। ফলে তারা তাদের জীবনের মূল্য হারিয়ে ফেলে বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত হয়। কোনো কোনো সময় তারা বেছে নেয় নেশাজাতীয় দ্রব্য। এভাবেই তারা বিপদের মুখে ঝুঁকে পড়ে। তাই বলে অভিভাবকরা যে শিক্ষার্থীদের শাসন করবে না তা কিন্তু নয়। অভিভাবকদের উচিত এই গতানুগতিক বকাবকি বা প্রহার না করে একটু ভিন্ন টেকনিকে শাসন করা, যাতে করে শিক্ষার্থীরা মানসিক বিকারগ্রস্ত না হয়। তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে, বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। মনে রাখা প্রয়োজন ভালোবাসা নামক অস্ত্রের চেয়ে শক্তিশালী কোনো অস্ত্র পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি  নেই।

অতএব, এটা নিঃসন্দেহ বলা যায় শিক্ষার্থীর সুষ্ঠু মনোজগত্ বিকাশ ব্যতীত তাদের পক্ষে শিক্ষা অর্জন অনেকটাই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তাই শিক্ষক ও অভিভাবকের উচিত শিক্ষার্থীর মনোজগত্ যাতে বিকাশ সাধন হয় সে অনুযায়ী কাজ করা। পাশাপাশি এটাও খেয়াল রাখতে হবে তারা যেন কোনো মনস্তাত্ত্বিক আঘাত পেয়ে খারাপ কাজের দিকে  ঝোঁক না দেয়। অভিভাবকদের উচিত তাদের এমনভাবে গড়ে তোলা যাতে করে তারা নিজেদের জীবনের মূল্য অনুধাবন করতে পারে।

 

লেখক:শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার - dainik shiksha মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.005018949508667