শিক্ষার্থীর শিষ্টাচার, আদব-কায়দা ও শিক্ষকের দায়বদ্ধতা - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষার্থীর শিষ্টাচার, আদব-কায়দা ও শিক্ষকের দায়বদ্ধতা

অধ্যাপক ড. মো. লোকমান হোসেন |
আমাদের সামাজিক জীবনে তথা ব্যক্তি জীবনে আদব-কায়দার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি যখন হাইস্কুলে ভর্তি হই তখন দেখেছি হেডস্যারের কক্ষে এই নীতিবাক্যটি বড় বড় অক্ষরে লিখা ছিল, Students should be taught not only to be scholars but also to be gentlemen. হেডস্যার প্রায়ই বলতেন, Manners make the Men. তিনি প্রায়ই ইসমাইল হোসেন সিরাজীর ‘আদব-কায়দা’ বইখানি পড়তে উপদেশ দিতেন। আমার হেডমাস্টার মরহুম ওয়ালি উল্লাহ পাটোয়ারী সভ্যতা, ভদ্রতা ও অমায়িকতার প্রতীক ছিলেন। শ্রেণিকক্ষে তিনি শিক্ষার্থীদেরকে কথায় কথায় কাঁদাতে ও হাসাতে পারতেন। শিক্ষার্থীদের জন্য বলছি, Courtesy costs nothing rather buys something. যে শিক্ষার্থী ভদ্র ও নম্র, কোনো শিক্ষক তাকে ভালো না বেসে পারেন না। তার প্রতি শিক্ষকের একটু সুনজর থাকবেই। যে দোকানদারের ব্যবহার ভালো ক্রেতারা তার দোকানে ভিড় করবেই। কোনো কোনো ডাক্তারের অমায়িক ব্যবহারে রোগীর অসুখ অর্ধেক ভালো হয়ে যায়। যে উকিলের ব্যবহার ভালো, তার কাছে মক্কেলের ভিড় বেশি। ভালো কথা, ভালো ব্যবহার, সুন্দর আচরণ একজন ব্যক্তির উন্নত ব্যক্তিত্ব তুলে ধরে। সুন্দর আচরণ দ্বারাই একজন ব্যক্তি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারে। যারা সবসময় মানুষের সাথে ভালো ও সুন্দর আচরণ করেন তাদেরকে সমাজ বা দেশের সবাই পছন্দ করেন, ভালোবাসেন, সম্মান ও শ্রদ্ধা করেন। 
 
কাজী কাদের নেওয়াজ-এর লেখা ‘শিক্ষকের মর্যাদা’ কবিতাটি আজও মনে পড়ে- বাদশা আলমগীরের ছেলে একদিন তার ওস্তাদজির পায়ে পানি ঢালছিলেন আর ওস্তাদজি নিজেই তার পা পরিষ্কার করছিলেন। এই দৃশ্যটি বাদশার দৃষ্টিগোচর হয়। পরদিন বাদশা তাঁর ছেলের শিক্ষককে সালাম পাঠালেন এবং আবদারের সঙ্গে বললেন আমার ছেলে আপনার কাছ থেকে পরিপূর্ণ শিক্ষা পায়নি। আমি দেখেছি সে তার ওস্তাদকে যথাযথ সম্মান দেয়া শেখেনি, আপনি কেন নিজ হাতে আপনার পা পরিষ্কার করবেন? আপনার ছাত্রের উচিত তার এক হাতে ওস্তাদজির পায়ে পানি ঢালা এবং অন্য হাতে পা পরিষ্কার করে দেয়া।
 
শিষ্টাচার এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যার দ্বারা ব্যক্তির জীবন পরিশুদ্ধ ও পরিপাটি হয়। বিশ্ববিজয়ী আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট একদিন এক বয়স্ক ব্যক্তির কাছে অহংকার করে বলছিলেন, ‘আমি বিশ্বজয়ী আলেকজান্ডার। বলুন, আপনার জন্য কী করতে পারি? বৃদ্ধটি তখন সকালবেলায় সূর্যের আলো থেকে রোদ গ্রহণ করছিলেন, বৃদ্ধ উত্তরে বলেন তুমি আমাকে যা দিতে পার না তা থেকে বঞ্চিত করার অধিকার তোমার নেই। সুতরাং তুমি সরে দাঁড়াও, আমাকে রোদ পোহাতে দাও।’ উত্তম আচরণের মূল চাবিকাঠি হচ্ছে বিনয়। যখন কারো অন্তরে বিনয়বোধ কাজ করবে এবং সে বিশ্বাস করবে যে আমি ছোট, অন্য সবাই বড়, তখন সে কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করতে পারে না। মানুষ খারাপ আচরণ করে তখনই, যখন সে নিজেকে বড় মনে করে এবং অন্যকে ছোট ও তুচ্ছ মনে করে। সুতরাং মন্দ আচরণের মূল কারণ হচ্ছে অহংকার। লক্ষ করা গেছে, মনীষীদের উপদেশ মোতাবেক যারা কাজ করেছেন তারা বড় হয়েছেন, সুখে আছেন। আর যারা কর্ণপাত করেননি তারা জীবনে কিছু করতে পারেননি, দুঃখে কালাতিপাত করছেন, আর অনেক সময় আক্ষেপ করে বলছেন, সাথের সাথি রাজা হয়, এ দুঃখ কী শরীরে সয়! 
 
বাংলাদেশ এখন স্বাধীন ও সার্বভৌম, তাই দেশের মানুষ প্রত্যাশা করে, ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।’ সুতরাং অধ্যবসায়ের সঙ্গে কাজ করলে জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধি লাভ করা সম্ভব। নচেৎ জীবন শুষ্ক মরুভূমিতে পরিণত হবে। তাই কবির ভাষায় বলতে হয়-
বিফলে বহে না নদী; যথা নদী-ভরা,
নানা-শস্য-শিরোরত্নে হাস্যময়ী ধরা;
কিন্তু কাল, সদাত্মক্ষেত্রের শোভাকর,
উপেক্ষায়, রেখে যায় মরু ঘোরতর।
 
সমাজ ও রাষ্ট্র এমনকি পরিবারে যে বিষয়টি ইদানিং পরিলক্ষিত হচ্ছে তা হলো আদব-কায়দার অভাব। আদব-কায়দার ইংরেজি শব্দ হচ্ছে Etiquette। এই শব্দটির উৎপত্তি ও প্রচলন শুরু হয় ষোড়শ এবং সপ্তদশ শতক থেকে। সে সময় ফ্রেন্স রয়াল কোর্টে রাজা ষোড়শ লুইয়ের সময় বিভিন্ন জায়গায় Etiquette সংবলিত কিছু প্লেকার্ড রাখা হতো। এসব প্লেকার্ডে ‘সবার জন্য মান্য’ কিছু বাক্য বা বক্তব্য লিখে রাখা হতো এবং জনসাধারণ সেসব লেখা নিষ্ঠার সঙ্গে মান্য করতেন। ইতিহাসের আরও গভীরে গেলে দেখা যায় কিং লুইয়ের সময়ের অনেক আগে (খ্রিষ্ট জন্মের ২৪০০ বছর পূর্বে) Ptahhotpe নামক একজন লেখক Etiquette নামে একটি বই লিখেছিলেন। তাছাড়া জর্জ ওয়াশিংটনের Rules of Civility and Decent Behaviour in Company and Conversation বইটিও আদব-কায়দা সম্পর্কীয়। পরে ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে Emily Post লিখেছিলেন Etiquette in Society, in Business, in Politics and at Home. অতঃপর সমাজ, ব্যবসায়, রাজনীতি ও পরিবার ইত্যাদি ক্ষেত্রে কেমন আদব-কায়দা হওয়া উচিত সে সম্পর্কে প্রচুর লেখালেখির খোঁজ পাওয়া যায়। Amy Vanderbilt নামে একজন আমেরিকান লেখক The Amy Vanderbilt Complete Book of Etiquette শীর্ষক একটি বই লিখে পৃথিবীতে সাড়া জাগিয়েছিলেন।
 
আমরা সবাই অন্যের কাছ থেকে সুন্দর আচরণ প্রত্যাশা করি, কিন্তু নিজেরা তা করতে ভুলে যাই। অসতর্কতাবশত খারাপ আচরণে একজন মানুষ কষ্ট পেতে পারেন, তাই আমাদের সবসময় সচেতন থাকা উচিত, যাতে আমাদের আচরণে কেউ কষ্ট না পায়। যার আচরণ যত বেশি সুন্দর সকল মানুষ তাকে তত বেশি ভালোবাসে, সম্মান ও শ্রদ্ধা করে। মানুষের একটি ভালো কথা যেমন একজনের মন জয় করে নিতে পারে, তেমনি অশোভন বা খারাপ আচরণ মানুষের মনে কষ্ট আনে! সবসময় মানুষের সাথে ভালো ও সুন্দরভাবে কথা বলা উচিত। সুন্দর ব্যবহারের কারণে যে মুখটি প্রিয় হয়, অন্যদিকে অসুন্দর ব্যবহার করায় সে মুখটি অপ্রিয় হয়ে যায়। একজন ভালো মানুষ হিসেবে আমাদের কর্তব্য অন্য মানুষের সাথে হাসিমুখে কথা বলা এবং ভালো ব্যবহার করা। সুন্দর আচরণ বলতে বুঝায় অন্যের সাথে হাসিমুখে কথা বলা, সালাম দেয়া, কুশলাদি জিজ্ঞেস করা, ঝগড়া-ফ্যাসাদে লিপ্ত না হওয়া, ধমক বা রাগের স্বরে কথা না বলা, কাউকে অপমান-অপদস্থ না করা, অন্যের সুখে সুখী হওয়া এবং অন্যের দুঃখে দুঃখী হওয়া, বিপদে সহানুভূতি ও সহমর্মিতা প্রকাশ করা ইত্যাদি। 
 
আজকের শিক্ষার্থীরাই আগামী দিনের শিক্ষক এবং এই শিক্ষকরাই হচ্ছে মানুষ তৈরি করার কারিগর। পৃথিবীতে সবচেয়ে সম্মান ও মর্যাদাপূর্ণ পেশা হলো শিক্ষকতা। আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) নিজকে শিক্ষক হিসেবে পরিচয় দিয়ে বলেছেন, ‘আমাকে শিক্ষক হিসেবেই প্রেরণ করা হয়েছে।’ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পেশার লোকের বৈশিষ্ট্যগুলোও শ্রেষ্ঠ হওয়া আবশ্যক। তাই একজন শিক্ষক শালীন, মার্জিত ও ব্যক্তিত্বরক্ষাকারী পোশাক পরিধান করবেন, আদর্শবান হবেন, আদর্শিক জ্ঞানের অধিকারী হবেন, উত্তম আদর্শের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের গড়ে তুলবেন, কথা ও কাজে মিল রাখবেন, আদর্শ প্রচারে কৌশলী ও সাহসী হবেন, শিক্ষকতাকে পেশা ও নেশা হিসেবে নিবেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোসহীন হবেন, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হবেন, শুদ্ধ উচ্চারণ, প্রকাশভঙ্গি ও গভীর জ্ঞানের অধিকারী হবেন, শিক্ষার্থীদের প্রতি মমত্ববোধ ও ভালোবাসা-সম্পন্ন  হবেন, নিয়মিত জ্ঞানচর্চা করবেন, ক্লাসে পড়ানোর জন্য আগেই প্রস্তুতি নিবেন, মেধা বিকাশে সহায়ক বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিবেন, স্নেহ-মমতা দিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াবেন, সকল শিক্ষার্থীকে সমান চোখে দেখবেন, শিক্ষার্থীদের জ্ঞান লাভে উৎসাহিত করবেন, শাসন করবেন তবে প্রহার বা নির্মমতা প্রদর্শন করবেন না, বরং দরদি মন নিয়ে তাদের ভুলগুলো ধরিয়ে দেবেন, বিচক্ষণ হবেন,  ছাত্রদের মন-মেজাজ পছন্দ-অপছন্দ ও কোনো কিছু গ্রহণ করার ক্ষমতা ইত্যাদি বিষয়ে দৃষ্টি দিবেন, নিয়মনীতির ক্ষেত্রে কঠোর হবেন এবং অভিভাবকের জায়গায় নিজেকে প্রতিস্থাপিত করে অনুকরণীয় হবেন। তাহলেই প্রত্যাশা মোতাবেক শিষ্টাচার ও আদব-কায়দা সম্পন্ন শিক্ষার্থী গড়ে তুলতে পারবেন। সেদিন একটি দৈনিক পত্রিকায় পড়লাম নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলায় আশুলিয়া জয়নাথ চক্রবর্তী হাইস্কুল নামে একটি স্কুল আছে। জয়নাথ চক্রবর্তী ছিলেন স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রথম প্রধান শিক্ষক। ঐ স্কুলে পড়ালেখা করে তারই একজন ছাত্র এক সময় সরকারের বড় পদে আসীন হয়েছিলেন। সেই ছাত্র যখন তার গ্রামের বাড়িতে যেতেন ঐ স্কুলের সামনে দিয়ে কাঁচা রাস্তা পার হয়ে তাকে বাড়িতে যেতে হতো। ঐ ছাত্রকে যতবারই স্কুলের সামনে দিয়ে তার বাড়িতে যেতে দেখা গেছে ততবারই তিনি স্কুলের কাছে গিয়ে জুতা হাতে নিয়ে স্কুলগেট অতিক্রম করেছেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, গেটটিতে তার শিক্ষকের নাম লেখা রয়েছে। এ নামের প্রতি সম্মান জানাতেই তিনি পা থেকে জুতা খুলে হাতে নিয়ে নিতেন।
 
কোনো একদিন এক গ্রাম্য ছেলের সাথে আমার সাক্ষাৎ হলে সে আমাকে জিজ্ঞেস করে, তোমার বাড়ি কোথায়? তখন আমি নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনার বাড়ী কোথায়? তখন ঐ ছেলে বেকায়দায় পড়ে আমাকে আপনি বলে সম্বোধন করতে বাধ্য হয়েছে এবং নিজেকে সংশোধন করেছে। আমাদের কলেজে শামীম আহমেদ নামে একজন শিক্ষক ছিলেন। তিনি এত অমায়িক ও ভদ্র ছিলেন যে, তাঁর ক্লাসে টু শব্দটি পর্যন্ত হতো না। তাঁর পাঠদান শিক্ষার্থীরা মনোযোগ দিয়ে শুনতো। তিনি যেদিন অন্যত্র চাকরি পেয়ে কলেজ ছেড়ে চলে যান সেদিন কান্নায় ভেঙে পড়েছিল কলেজের শিক্ষার্থীরা। বিনয়ী স্বভাবের কারণে মানবজীবনের অনেক কঠিন ধাপ সহজেই পেরিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়। পৃথিবীতে যারা স্মরণীয় ও বরণীয় তাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন এই গুণে গুণান্বিত। আমরা সকলেই জানি, আরবের কাফেররা যখন রাসুল্লাহ (স:) এর নিকট যেতেন তাঁর ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে বিনা বাক্যে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতেন। তাই কাফেররা আরবদেরকে তাঁর সান্নিধ্যে আসার পথে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করত। সুন্দর আচরণের মাধ্যমেই যুগে যুগে নবী-রাসুলরা অন্ধকারে নিমজ্জিত, পথহারা, দিশেহারা, মানুষকে আলোর পথ দেখাতে সক্ষম হয়েছিলেন। এই মহৎ গুণটি আমাদের চরিত্রে সংযোজন করতে হবে। 
 
সামাজিক পরিমণ্ডলে আমাদের বেড়ে ওঠা। সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কোনো মানুষ বাস করতে পারে না। মানুষের আপন সত্ত্বাকে পরিচিত করে তোলার উপযুক্ত ক্ষেত্র এটাই। সমাজে বাস করতে গিয়ে একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে। মানব চরিত্রের দুটি দিক রয়েছেভালো এবং মন্দ। মানুষের মধ্যে যার যে স্বভাবটি প্রাধান্য পায়, সে সেভাবেই খ্যাতি লাভ করে। মানুষ তার আচরণের মাধ্যমেই স্থান করে নেয় সবার অন্তরে এবং তার মৃত্যু পরবর্তী সময়েও তাকে তুলে আনে মানুষের স্মৃতিতে। এজন্য অনন্তকালের জন্য মানব-মনে স্থান করে নিতে প্রয়োজন উত্তম আচরণ। কোমলতা উত্তম আচরণের অনন্য বৈশিষ্ট্য। স্বভাবের কোমলতা মানুষকে মহীয়ান করে। কোমল আচরণের দ্বারা মানুষের চারিত্রিক মাধুর্য প্রকাশ পায়। 
 
শেখ সাদী প্রার্থনা করেছেন, হে খোদা, তুমি আমাকে আদব শিক্ষা দাও, যেহেতু বেয়াদব তোমার অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা আগে সুসভ্য হও, তারপর জ্ঞান অর্জন করো। আর জেনে রাখবে, অনেক বেশি কাজের চেয়ে অল্প আদব-কায়দা অনেক বেশি উত্তম। কোনো ব্যক্তি জ্ঞান দ্বারা মহৎ হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার জ্ঞানকে আদব দ্বারা সৌন্দর্যম-িত করবে।’ ‘অনেক বেশি জ্ঞানের চেয়ে কম আদব অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য।’ হযরত লোকমান (আ.)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, আপনি আদব কোথা থেকে শিখেছেন? উত্তরে তিনি বলেছেন, বেয়াদব থেকে। কেননা তারা যা করে আমি তা করি না। 
 
আমাদের সমাজে কিংবা রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে আদব-কায়দা চর্চা যে একেবারে নেই এটা কখনো বলা যাবে না। কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের জন্য একবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে গিয়েছিলেন। দর্শক সারিতে সামনে বসা ছিলেন তার সাবসিডিয়ারির শিক্ষক অধ্যাপক রঙ্গলাল সেন। সভাস্থলে শেখ হাসিনা এসে ইতস্ততবোধ করছেন, তিনি কীভাবে তাঁর জন্য সামনে রাখা বড় চেয়ারটিতে বসবেন। এ জন্য তিনি অধ্যাপক সেনের অনুমতি চাইলেন এবং তারপর আসন গ্রহণ করলেন। তাঁর বক্তৃতার শুরুতেও উল্লেখ করলেন, স্যারের সামনে কথা বলতে তিনি জড়তা বোধ করছেন। সাম্প্রতিক সময়েও সভামঞ্চে যখন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান কিংবা অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম অর্থাৎ তার কোনো শিক্ষক বা শিক্ষকতুল্য কেউ থাকেন তখন তিনি তাঁদের হাত তুলে সালাম জানিয়ে তারপর তার নির্ধারিত চেয়ারে বসেন। এটাই হচ্ছে আদব-কায়দা বা নম্র-ভদ্র আচরণের বহিঃপ্রকাশ। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আজকাল রাজনীতি, শিক্ষাঙ্গন অথবা সমাজের যে দিকেই তাকাই সব জায়গায়ই আদব-কায়দার অনুপস্থিতি চোখে পড়ে।
 
শিক্ষক শিক্ষার্থীদেরকে পড়াচ্ছেন- তিনি আসলে শিক্ষার্থীদের সেবা করছেন। এজন্য শিক্ষকের উচিত নিজেকে সেবক মনে করা। তেমনি নিজের পরিবারের, ভাই-বোন ও আত্মীয়-স্বজনের সেবক হিসেবে কাজ করা। এটা ঠিক যে, কখনো কখনো দায়িত্বের কারণে কাউকে শাসন করতে হয়, কখনো কখনো শাস্তিও দিতে হয়। যেমন উস্তাদ সাগরেদকে শাস্তি দেন, পিতা সন্তানকে শাস্তি দেন। এ শাসন ও শাস্তি দেয়ার সময় দায়িত্বশীলকে ভাবতে হবে যে, কর্তব্যের খাতিরে এই কাজ করতে হচ্ছে। এজন্য নয় যে আমি বড়, অন্যরা ছোট। কোনো বাদশা যদি তার পাহারাদারকে দরজায় দাঁড় করিয়ে বলে দেন যে, অনুমতি ছাড়া কাউকে ভিতরে আসতে দিবে না। তখন যদি কোনো শাহজাদাও আসে তাহলে ঐ পাহারাদারের অধিকার আছে, তাকে ভিতরে ঢুকতে না দেয়া। শাহজাদা যদি জোর করে ভিতরে প্রবেশ করতে চায় তাহলে ঐ পাহারাদারের বাধা দেয়ার অধিকার আছে। এখানে তো পাহারাদার শাহজাদাকে বাধা দিচ্ছে এবং তার উপর কর্তৃত্ব খাটাচ্ছে কিন্তু দুজনের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ? পাহারাদার যখন শাহজাদাকে বাধা দিচ্ছে তখন সেও ভাবছে না যে, আমি শাহজাদার চেয়ে শ্রেষ্ঠ; বরং ঐ সময় সেও জানে, শাহজাদাই শ্রেষ্ঠ, তবে কর্তব্যের খাতিরে এখন আমি তাকে বাধা দিতে বাধ্য।
 
সমাজব্যবস্থায় সালামের মাধ্যমে একে অন্যকে অভিবাদন জানানোর নিয়ম রয়েছে। সালাম পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা, আন্তরিকতা ও হৃদ্যতা সৃষ্টি করে। হাদিসে আছে- ‘যখন তোমরা সালাম ও অভিবাদনপ্রাপ্ত হও, তখন তোমরা তার চেয়ে শ্রেষ্ঠতর সম্ভাষণ কর অথবা একইভাবে অভিবাদন কর। ‘তোমরা পরস্পরের মধ্যে সালামের প্রসার ঘটাও।’ ‘একজন কম বয়সী ব্যক্তি বয়স্ক ব্যক্তিকে সালাম দিবে।’ ‘বড়রা যখন কথা বলবে ছোটরা তখন শুনবে এবং প্রয়োজনে অনুমতি নিয়ে কথা বলবে।’ ‘অনুমতি না নিয়ে এবং সালাম না দিয়ে অন্য কারও ঘরে প্রবেশ করা অনুচিত।’ অবশ্যই অনুমতি নেয়া খুব জরুরি, তবে নাছোড়বান্দার মতো অনুমতি চাইতেই থাকা ঠিক নয়। খাওয়া-দাওয়ার আদব বলতে সেই খাবার খাওয়াই যথেষ্ট যা দ্বারা নিজের পৃষ্ঠদেশ সোজা রাখা সম্ভব। খাওয়ার সময় পেটের এক-তৃতীয়াংশ খাবার খাওয়া, এক-তৃতীয়াংশ পান করা এবং এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য ফাঁকা রাখা উচিত। আগত ব্যক্তির সম্মানে দাঁড়িয়ে তাকে অভিবাদন করা আদব-কায়দার অংশ। হাসিমুখে অন্যের সঙ্গে হাত মিলানো ভালো, কোনো ভালো কাজকে ছোট মনে করা উচিত নয়। পথহারাকে পথ দেখিয়ে দেয়া, দৃষ্টিহীনকে পথ দেখানো, রাস্তা থেকে পাথর, কাঁটা ও হাড় সরিয়ে দেয়া, পথহারা পথিককে রাস্তা দেখিয়ে দেয়া সৃষ্টিকর্তাকে খুশি করার উত্তম পথ। সুতরাং কোনো ব্যক্তি যদি কোনো বাড়ির ব্যাপারে জানতে চায়, অথবা কোনো রাস্তার নির্দেশনা চায়, অথবা কোনো মানুষের পরিচয় জানতে চায়, তাহলে উত্তম আচরণ হলো তাঁকে বাড়ির বিবরণ দিয়ে দেয়া, অথবা রাস্তা দেখিয়ে দেয়া। রাস্তায়, দোকান, কফিখানার সামনে, ময়দান, বাগান বা অনুরূপ কোনো স্থানে না বসাই উত্তম। শিষ্টাচার তথা আদবের মধ্যে রয়েছে কীভাবে সালাম প্রদান, অনুমতি গ্রহণ, উঠা-বসা, কথা বলা, আনন্দ ও শোক প্রকাশ, হাঁচি দেয়া, চলাফেরা, খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ, পোশাক-পরিচ্ছদ, নিদ্রা, সামাজিক কাজকর্ম সম্পাদন, হাই তোলা ইত্যাদি কার্যক্রম সম্পন্ন করা উচিত এবং পিতামাতা, ভাইবোন, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী ও বন্ধু-বান্ধবদের সাথে কেমন ব্যবহার করা উচিত। কোথাও বসতে চাইলে উপস্থিত ব্যক্তিবর্গকে সালাম দিয়ে অনুমতি চেয়ে অন্য ব্যক্তিদের প্রান্তসীমায় বসবে তবে কাউকে উঠিয়ে দিয়ে সেখানে বসা অনুচিত এবং বসার সময় যেন কোনো প্রকার শব্দ না হয়। তাছাড়া ভদ্র ও শান্তশিষ্ট হয়ে বসা, আঙুল না ফোটানো, দাঁত খিলাল না করা, নাকের ভিতর আঙুল প্রবেশ না করানো, যত্রতত্র থুতু ও ক্বফ না ফেলা এবং বেশি বেশি হাই না তোলা, হাসি-কৌতুক করা থেকে বিরত থাকা এবং অন্য কেউ যখন কথা বলবে তখন তা মনোযোগ দিয়ে শোনা আদব-কায়দার অংশ।
 
সন্তানদের উত্তম আদব-কায়দা ও স্বভাব-চরিত্র নিশ্চিত করতে মা-বাবাই সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করে থাকেন এবং এটা তাঁদের পবিত্র দায়িত্ব। আমরা জানি আজকের শিশুরাই কালকের পিতা। প্রবাদ আছে সন্তানকে বাস্তব অবস্থা শেখাতে পারাটা সবচেয়ে বেশি উপকারী এবং তার স্থায়িত্বও বেশি। ছোট শিশুটি কিন্তু খেয়াল করে তার মা-বাবা বা ভাই-বোন অথবা পরিবারের অন্য সদস্যরা কার সঙ্গে কীভাবে আচরণ করে। Charity Begins at Home- সবার আগে নিজের পরিবারকে সংশোধন করা উচিত। সন্তান যদি কোনো একটা অপছন্দনীয় কাজ করে ফেলে বাবা-মা যদি সুন্দর আচরণ দিয়ে তা ম্যানেজ করতে পারেন তাহলে সেই সন্তানটিও জীবনে এইরকম অবস্থায় অস্থিরতার পরিচয় না দিয়ে ভালোভাবে তা ম্যানেজ করে নিবে। অনেক পরিবারে দেখা যায় কাজের পরিচারিকাটিকে পানি বা কোনো কিছু আনতে বললে একটু দেরি হলে সেই সন্তানটি ভয়ানক রাগ প্রকাশ করে, এটা কিন্তু সেই পরিচারিকার প্রতি পিতা-মাতার আচরণ থেকেই শেখা। কবি কালিদাস রায়ের লেখা ‘মাতৃভক্তি’ কবিতায় পড়েছি বায়েজিদ বোস্তামির অসুস্থ মা পুত্রের নিকট পানি পান করতে চেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। পুত্র মায়ের তৃষ্ণা মিটানোর জন্য ভোর পর্যন্ত শিয়রে দাঁড়িয়েছিলেন। মা অসুস্থ বিধায় ঘুম থেকে জাগাননি। মা-ছেলের কী অসাধারণ মমত্ববোধ! পিতা-মাতা যদি সুন্দর আদর্শ বাস্তবে দেখাতে পারেন তাহলে সন্তানরা অনুরূপ আচরণ করবে।  
 
পরিবারের সদস্যদের একসাথে বাইরে বেড়াতে যাওয়ার অভ্যাস নিজেদের মধ্যে বন্ধন সুদৃঢ় করে। অনেককে দেখা যায়, বাইরে যাওয়ার সময় সন্তান হয়তো কম্পিউটারে মুভি দেখে বা গেইম খেলার জন্য মা-বাবার সাথে যেতে চায় না, বাবা-মা তা মেনে নিয়ে সন্তানদের সেই সুযোগ করে দেন, ফলে একসময় তারা আর যেতেই চায় না। সন্তানকে বুঝতে দিতে হবে যে, তাকে ছাড়া মা-বাবার বাইরে যেতে ভালো লাগে না। এমনভাবে পরিস্থিতি তৈরি করবেন যেন সেই সন্তান তার নিজের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পেরে পিতা-মাতার সঙ্গে যায়, এইভাবেই সম্পর্কের ভিত মজবুত হবে, সুন্দর হবে। ভালো কাজের জন্য সন্তানকে প্রশংসা ও পুরস্কৃত করলে সন্তানরা ভালো কাজে উৎসাহিত হয়। খেলাধুলায় উৎসাহদান দিয়ে শারীরিক ব্যায়াম বা নড়া-চড়া হয় এমনসব খেলার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়ে আনন্দ দেয়া উচিত। 
 
শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। শিশুর সুন্দর আচার-আচরণ গঠনে মূল ভূমিকা পালন করে পরিবার। শিশুরা হচ্ছে বাগানের ফুল, যে ব্যক্তি শিশুদের স্নেহ করে না, বড়দের সম্মান করে না, সৎ কাজের নির্দেশ দেয় না এবং অসৎ কাজে বাধা দেয় না সে ভালো মানুষ নয়। ‘শিশু বিকাশ ও সামাজিক সম্পর্ক’ শীর্ষক লেখায় উল্লেখ রয়েছে, ‘শিশুকে সুন্দর আচরণ শেখাতে হলে তার সঙ্গে সুন্দর আচরণ করতে হবে, পরিবার থেকেই শেখাতে হবে বড়দের সঙ্গে কেমন আচরণ করতে হয় এবং ছোটদের কীভাবে ভালোবাসতে হয়। বড়দের শ্রদ্ধা ও ছোটদের ভালোবাসার শিক্ষা বাস্তবে করে দেখাতে হবে। শিশুরা তা খুব সহজেই গ্রহণ করবে। শিশুরা একটু বড় হলেই বাইরের অন্যান্য শিশুদের সঙ্গে মেলামেশা করে ফলে তাদের আচার-আচরণে পরিবর্তন আসতে পারে। শিশুরা কোনো ভুল করলে তাদেরকে প্রথমে বোঝাতে হবে, প্রয়োজনে বকা দিতে হবে, তবে বকা দেয়ার সময় অপমানজনক শব্দ ব্যবহার করা ঠিক নয়। বাসায় অতিথি এলে শিশুকে তাদের সঙ্গে কথা বলতে ও সময় কাটাতে উৎসাহিত করতে হবে এতে ছোট থেকেই তার মধ্যে সামাজিকতার বোধ জেগে উঠবে। অনেককে দেখা যায় নিজের পরিবারের বাইরের পরিবেশে খুব ভালো ও সুন্দর ব্যবহার করেন কিন্তু পরিবারের মাঝে তারা সেরূপ আচরণ করেন না। অথচ পরিবারের দাবি এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি। সেই সবচেয়ে উত্তম যে পরিবারে উত্তম। ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে এমন আচরণ করতে হবে যেন তাদের জানার আগ্রহ বাড়ে, পরিবারে তাদেরও গুরুত্ব আছে এটা বুঝতে দেয়ার জন্য মাঝে মাঝে কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যপারে তাদের সাথে পরামর্শ করা উচিত। নির্মল সুন্দর আচরণ না পেলে সন্তানরা মানসিক কষ্ট পেয়ে বড় হয় এবং পরে পিতামাতার সাথে খারাপ আচরণ করতে দেখা যায়, যা অত্যন্ত দুখঃজনক। অনেক সময় পিতাকে মায়ের সাথে খারাপ বা অভদ্র আচরণ করতে দেখে বা কোনো ক্ষেত্রে মাকে বাবার সাথে অপ্রত্যাশিত আচরণ করতে দেখেও শিশুরা তা অন্তরে ধারণ করে রাখে, সময়মতো সেটার প্রতিফলন ঘটায়। শিশুদের সঙ্গে বন্ধুর মতো আচরণ করলে তারা মাতা-পিতার নিকট কোনো কিছু লুকায় না। শিশুর সঙ্গে সবসময় সত্য কথা বলুন, সত্য বলতে উৎসাহিত করুন। কোনো ভুল করে স্বীকার করলে ভবিষ্যতে অনুরূপ ভুল না করার বিষয়ে সাবধান করে দিন। দিনের নির্দিষ্ট একটি সময় বেছে নিন কেবল সন্তানদের জন্য। এই সময় অন্য কোনো কাজ না করে তাদের সঙ্গে সময় কাটান, গল্প করুন, আনন্দ করুন মোটকথা সম্পূর্ণ মনোযোগ তার দিকে দিন। সন্তানকে গড়তে যেয়ে যে সময়টি আপনি মা-বাবা হিসেবে দিবেন তা আপনার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান অবদান।
 
লেখক : পরিচালক (গবেষণা ও তথ্যায়ন), জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম)।  
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0064170360565186