শিক্ষায় ছেলেদের চেয়ে ভালো করছে মেয়েরা - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষায় ছেলেদের চেয়ে ভালো করছে মেয়েরা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ নম্বর বা সিজিপিএ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের গত ২৬ ফেব্রুয়ারি দেওয়া হয় ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক ২০১৮’। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) আয়োজনে ১৭২ জন শিক্ষার্থীর হাতে স্বর্ণপদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই ১৭২ জন মেধাবী শিক্ষার্থীর মধ্যে ৮৮ জনই মেয়ে আর ৮৪ জন ছেলে। গণভবনে পদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ছেলেদের দুষ্টুমি না করে পড়ালেখায় মন দিতে বলেন। অথচ কিছুদিন আগেও মেয়েদের উচ্চশিক্ষায় আসতে উৎসাহ দেওয়া হতো। মেয়েরা কিভাবে ভালো ফল করতে পারে সে ব্যাপারে পরামর্শ দেওয়া হতো। অথচ এখন উল্টো ছেলেদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। রোববার (৮ মার্চ) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শরীফুল আলম সুমন। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়,  শিক্ষা খাতে মেয়েদের এগিয়ে যাওয়ার ঘটনা খুব বেশি আগের নয়। ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় আসার পরই নারীশিক্ষার উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়। বিশেষ করে সংস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে শিক্ষার লক্ষ্য ছিল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় ছেলে-মেয়ের নিবন্ধনের অনুপাতে সমতা আনা। এই লক্ষ্য পূরণ করার জন্য ২০১৫ সাল পর্যন্ত সময় থাকলেও এর কয়েক বছর আগেই তা পূরণ করা সম্ভব হয়। এরপর শিক্ষা খাতে শুধুই মেয়েদের এগিয়ে যাওয়ার পালা।

শুধু পড়ালেখায় এগিয়ে থেকেই বসে নেই মেয়েরা, চাকরির ক্ষেত্রে সমানতালে লড়ছেন। বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা বিসিএসেও আবেদনকারী ও সুপারিশপ্রাপ্ত নারী প্রার্থীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। অর্থাৎ প্রথম শ্রেণির গেজেটেড পদে বাড়ছে নারীর সংখ্যা।

সর্বশেষ পাঁচ বিসিএসের প্রকাশিত ফল থেকে দেখা যায় মেয়েদের এগিয়ে যাওয়ার চিত্র। ৩৪তম বিসিএসে আবেদনকারীর ৩২.৩৫ শতাংশ ছিলেন নারী, আর সেই বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন ৩৫.৬২ শতাংশ মেয়ে। ৩৫তম বিসিএসে আবেদনকারী নারীর হার ছিল ৩৩.৩৪ শতাংশ আর সুপারিশপ্রাপ্ত ২৭.৯২ শতাংশ; ৩৬তম বিসিএসে আবেদনকারী ৩৩.১৩ শতাংশ এবং সুপারিশপ্রাপ্ত ২৬.২২ শতাংশ; ৩৭তম বিসিএসে আবেদনকারী ৩৪.৮২ শতাংশ এবং সুপারিশপ্রাপ্ত ২৪.৬০ শতাংশ। ৩৯তম বিসিএসে আবেদনকারী নারীর হার ৫৬.৩৫ শতাংশ আর সুপারিশপ্রাপ্ত ৪৬.৮১ শতাংশ।

সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) সূত্রে জানা যায়, ৩৮তম বিসিএসের ফল এখনো প্রকাশিত হয়নি। ৪০তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা চলছে। আর ৪১তম বিসিএসের আবেদনকারীরা প্রিলিমিনারি পরীক্ষার অপেক্ষায় আছেন। এই তিন বিসিএসেও নারীর সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে।

বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) সর্বশেষ ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে তথ্যানুযায়ী, শিক্ষায় মেয়েদের গড় অংশগ্রহণের হার ৫০.৪০ শতাংশ। এর মধ্যে প্রাথমিকে ৫০.৭৫ শতাংশ, মাধ্যমিকে ৫৩.৯৯ শতাংশ, উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৭.৮৩ শতাংশ, মাদরাসায় ৫৫.২৬ শতাংশ, কারিগরি শিক্ষায় ২৪.৭৬ শতাংশ, উচ্চশিক্ষায় ৩৩.৯৪ শতাংশ, পেশাগত শিক্ষায় ৪৬ শতাংশ এবং শিক্ষক শিক্ষায় ৫৪.৬৮ শতাংশ।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, বিনা মূল্যের বই, উপবৃত্তি, স্কুল ফিডিংসহ বেশ কিছু পদক্ষেপের সুফল পাওয়া যাচ্ছে এখন। বিশেষ করে বছরের প্রথম দিনই শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে যাওয়ায় শিক্ষার প্রতি সবার বিশেষ করে নারীদের আগ্রহ বেড়েছে। আর এ কারণে কমেছে বাল্যবিয়েও।

গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, ‘শিক্ষায় সার্বিকভাবে মেয়েদের অংশগ্রহণের জায়গা উন্নত হয়েছে। এ জন্য শিক্ষার্থীবান্ধব নারীবান্ধব সরকারি নীতিমালা দেখা যায়। বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকারও ইতিবাচক। নারী শিক্ষার প্রসার ও চাহিদা তৈরিতে বেসরকারি সংগঠনগুলোরও বড় ভূমিকা রয়েছে।’ বর্তমানে নারী শিক্ষার চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা মেয়েদের ঝরে পড়ার হারটা কমাতে পারছি না। বিশেষ করে মাধ্যমিকে খুবই নাজুক অবস্থা। মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়ায় অনেক অভিভাবকই আগেই বিয়ে দিয়ে দেন। কারিগরিতেও মেয়েদের অংশগ্রহণ কম। উচ্চশিক্ষায় যেসব মেয়ে আসছে তারা মধ্যবিত্ত পরিবারের। কিন্তু নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েদের উচ্চশিক্ষায় অংশগ্রহণ এখনো বাড়েনি।’

শুধু অংশগ্রহণেই নয়, ফলেও এগিয়ে যাচ্ছে মেয়েরা। সর্বশেষ প্রকাশিত ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষায় দেখা যায়, ছাত্রের তুলনায় ছাত্রী বেশি পাস করেছে দুই লাখ পাঁচ হাজার ৮৮৭ জন। অর্থাৎ ১.৬১ শতাংশ বেশি ছাত্রী পাস করেছে। উভয় পরীক্ষায় ৩২ হাজার ৫৪৬ জন ছাত্র জিপিএ ৫ পেয়েছে, আর ৪৫ হাজার ৮৮৩ জন ছাত্রী জিপিএ ৫ পেয়েছে। অর্থাৎ ছাত্রের তুলনায় ১৩ হাজার ৩৩৭ জন বেশি ছাত্রী জিপিএ ৫ পেয়েছে।

২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষায় ছাত্রের তুলনায় এক লাখ ৯৯ হাজার ৪৩৫ জন বেশি ছাত্রী পাস করেছে। ছাত্রের তুলনায় ৪৩ হাজার ১৮৬ জন বেশি ছাত্রী জিপিএ ৫ পেয়েছে।

২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের এসএসসি পরীক্ষায় ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীদের পাসের হার এবং জিপিএ ৫ প্রাপ্তির সংখ্যা বেশি। ছাত্রদের পাসের হার ছিল ৮১.১৩ এবং ছাত্রীদের পাসের হার ৮৩.২৮ শতাংশ। অর্থাৎ ছাত্রদের চেয়ে ২.১৫ শতাংশ ছাত্রী বেশি পাস করেছে। জিপিএ ৫ পেয়েছে ৫২ হাজার ১১০ ছাত্র এবং ৫৩ হাজার ৪৮৪ ছাত্রীর। অর্থাৎ এক হাজার ৩৭৪ জন ছাত্রী বেশি জিপিএ ৫ পেয়েছে। 

২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের এইচএসসি পরীক্ষায়ও ছেলেদের পাসের হার ৭১.৬৭ শতাংশ আর মেয়েদের ৭৬.৪৪ শতাংশ। তবে জিপিএ ৫ প্রাপ্তির দিক দিয়ে ছেলেরা সামান্য এগিয়ে ছিল। ২৪ হাজার ৫৭৬ জন ছেলে জিপিএ ৫ পেয়েছে আর মেয়েদের জিপিএ ৫ প্রাপ্তির সংখ্যা ২২ হাজার ৭১০ জন।

শিক্ষাবিদ ও গবেষক অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘মেয়েদের ভালো করার অন্যতম কারণ তাদের সুযোগ করে দেওয়া। কারণ এখন সব মেয়েই উপবৃত্তি পাচ্ছে। এতে দরিদ্র মা-বাবারাও তাঁদের মেয়েকে পড়ালেখায় উৎসাহিত করছে। এ ছাড়া মেয়েরা যেভাবে পড়ালেখাকে গুরুত্ব দেয়, ছেলেরা অনেক সময় সেভাবে দেয় না। তবে মেয়েদের পড়ালেখায় এগিয়ে যাওয়া একটি দেশের জন্য খুবই ভালো দিক।’

জানা যায়, শিক্ষায় মেয়েদের এগিয়ে যাওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে সরকারের একগুচ্ছ পদক্ষেপকে। মেয়েদের সুযোগ করে দেওয়া, বাল্যবিয়ে ঠেকাতে সচেতনতা বাড়ানো, চাকরিতে মেয়েদের কোটাসহ নানা বিষয় অভিভাবকদের নজর কেড়েছে। ফলে কষ্ট করে হলেও তাঁরা মেয়েদের পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন।

প্রাথমিক থেকে স্নাতক পর্যন্ত মেয়েদের পড়ালেখায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পেছনে খরচ নেই বললেই চলে। এই সময়ে মেয়েরা উপবৃত্তি পাচ্ছে। এ ছাড়া বছরের প্রথম দিন বিনা মূল্যের বই পাওয়ায় তাদের পড়ালেখার সুযোগ সহজ হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষকরাও এখন আগের চেয়ে মেয়ে শিক্ষার্থীদের বেশি খোঁজ নিচ্ছেন। কেউ অনুপস্থিত থাকলে তাদের বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছেন শিক্ষকরা। বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে উপজেলা প্রশাসন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে।

জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038812160491943