শিক্ষায় যত আজগুবি নির্দেশনা - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষায় যত আজগুবি নির্দেশনা

অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী |

আমাদের শিক্ষায় কখন কোন নির্দেশনা জারি হয় বলা কঠিন। গত ক'দিন আগে শিক্ষাবোর্ড পাবলিক পরীক্ষার নির্বাচনী পরীক্ষায় এক বিষয়েও অকৃতকার্যদের মূল পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের সুযোগ না দেবার নির্দেশনা দিয়েছে। অনেক পাঠকের হয়তো দু'বছর আগের ভিন্ন আরেকটি সার্কুলারের কথা মনে থাকতেই পারে। তাতে নির্দেশনা ছিল, কোনো শিক্ষার্থী একান্ত নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ না করতে পারলে ও তাকে মুল পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা উচিত হবে না। ঠিক যেন একটি আরেকটির উল্টো।

 এদিকে বোর্ডের অন্য আরেক নির্দেশনায় আছে, যতজন শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন হবে তার ন্যুনতম ৭৫ শতাংশকে মুল পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে দিতে হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে যে কোনো সার্কুলার, পরিপত্র কিংবা নির্দেশনা দেবার আগে তা নিয়ে আগাম কোনো ভাবনা-চিন্তা করা হয় কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ থেকে যায়। এ সব নির্দেশনা থেকে সহজে একটি বিষয় প্রতীয়মান হয় যে, এসব প্রণয়নে যার মাথায় যখন যা আসে তাই সে জারি করে বসে। এর লাভ-ক্ষতি কিংবা সুফল-কুফলের বিষয়টি চিন্তা করার অবকাশটুকুও কারো নেই। কারো কাছে কারো কোনো জবাবদিহিতা আছে বলেও মনে হয় না। আমার কাছে উপরে উল্লিখিত তিনটি নির্দেশনাই পারস্পরিক সাংঘর্ষিক ও একান্ত অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হয়েছে। আবার সময়-অসময়ের ও কোনো বালাই নেই। 

জেএসসিতে বাংলা দুই বিষয়ে আলাদা ১০০ ও ৫০ নম্বর করে মোট ১৫০ নম্বর ছিল। ইংরেজিতে ও তাই। কিন্তু কার যেন মাথায় এলো, দুই বিষয়কে একত্রিত করে এক বিষয় করে তাতে ১০০ নম্বর করা। ইংরেজি ও বাংলা উভয় বিষয়ে তাই করা হলো। সবচে' আশ্চর্যের বিষয় হলো যে নির্দেশনাটি শিক্ষাবর্ষের শুরুতে দেবার কথা সেটি দেয়া হলো বছরের শেষ প্রান্তে এসে মাত্র তিন-চার মাস আগে। তাতে কেবল শিক্ষার্থী নয়, শিক্ষক-অভিভাবক সকলেই দু'টানায় পড়েছেন। অন্যদিকে আমাদের শিক্ষার্থীরা ভাষা ও সাহিত্যে যেখানে তেমন একটা পারদর্শী নয় সেখানে তা সঙ্কুচিত করা কতটুকু যুক্তিসঙ্গত হয়েছে, সে প্রশ্ন যে কেউ করতেই পারে। 

আরেকটি বিষয়, অষ্টম শ্রেণির জেএসসি পরীক্ষায় বাংলা ও ইংরেজিতে ১০০ করে নম্বর নির্ধারিত হলো। কিন্তু ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির জন্য এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেয়া হলো না। তাতে একদিকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যেমন বিভ্রান্তিতে পড়েছেন, তেমনি অভিভাবকরাও পড়েছেন উৎকন্ঠায়। এ দু'টো শ্রেণিতে বাংলা ও ইংরেজি বিষয় আলাদা আলাদা পত্রে নাকি সম্মিলিত পত্রে পরীক্ষা হবে সেটি স্পষ্ট করা উচিত ছিল। সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি নিয়েও প্যাঁচাল কম হয়নি। এক সময় সৃজনশীল অংশের নাম ছিল রচনামূলক অংশ আর বহুনির্বাচনী অংশের নাম নৈর্ব্যক্তিক। এখন রচনামূলকের জায়গায় সৃজনশীল আর নৈর্ব্যক্তিকের জায়গায় বহুনির্বাচনী এক সময় সৃজনশীল অংশে ৫০ নম্বর আর বহুনির্বাচনী অংশে ৫০ নম্বর বরাদ্দ ছিল। এখন সৃজনশীলে ৭০ আর বহুনির্বাচনীতে ৩০ নম্বর। সেটি ও যে সময়ে জানার কথা সে সময়ে কেউ জানতে পারেনি। অসময়ে জেনেছে। এভাবে কত ওলট পালট। সময়ের কাজ অসময়ে হয়। 

সুচনায় সৃজনশীলের নাম রাখা হয়েছিল কাঠামোবদ্ধ প্রশ্ন। আঁতুড় ঘরেই সে নামটি মারা পড়ে। এর পর থেকে সৃজনশীলের নামে কেবল পাশের হার বাড়ানোর অশুভ প্রতিযোগিতা চলেছে। কাজের কাজ কী হয়েছে সে আর কেউ না জানলেও শিক্ষকদের অজানার কথা নয়। সেটি আজ আমার মূল কথা নয়। মূল কথা হলো-যারা শিক্ষায় অন্তত কোনো সার্কুলার কিংবা পরিপত্র জারি করেন, তারা যেন একটু হলে ও ভেবে চিন্তে তা করেন। আর তা যেন যথা সময়ে সংশ্লিষ্টরা জানতে পারেন। সর্বশেষ নির্দেশনা অর্থাৎ নির্বাচনী পরীক্ষায় ফলের ভিত্তিতে মূল পরীক্ষায় অংশগ্রহণের নির্দেশনার বিষয়ে দু'টি কথা বলে আজকের লেখা এখানেই শেষ করতে চাই।

গাঁও-গেরামের শিক্ষার্থীরা নানা কারণে বেশির ভাগ দুর্বল গোছের থাকে। দু'শ আড়াইশ'র মাঝে দশ কুড়িজন মাত্র নির্বাচনী পরীক্ষায় সব বিষয়ে পাশ করে। বাকিরা বিবেচনায় উত্তীর্ণ হয়ে মূল পরীক্ষায় যায়। সৃজনশীলের সুবাদে তারা প্রায় সকলে মূল পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়। এভাবেই তো বিগত দশ পনর বছর থেকে হয়ে আছে। মুল পরীক্ষায় রশিটা একটু টাইট করে দিলেই সব ঠিক হয়ে যায়। আজগুবি নির্দেশনা আর পরিপত্র দেয়া লাগে না। মূল পরীক্ষার খাতায় যা তা লিখে পাশ হয়ে গেলে নির্বাচনি পরীক্ষায় এতো কড়াকড়ি করে কী হবে? তাতে কেবল শিক্ষকদের অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের রোষানলে ফেলা ছাড়া অন্য কিছু হবে না। আপনাদের এ বিষয়ে কী মনে হয়? 

লেখক: অধ্যক্ষ, চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, কানাইঘাট, সিলেট ও দৈনিক শিক্ষার নিজস্ব সংবাদ বিশ্লেষক।

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032351016998291