শিক্ষায় শুধু ব্যয়ই বাড়ছে, মান নিচে - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষায় শুধু ব্যয়ই বাড়ছে, মান নিচে

দৈনিক শিক্ষা ডেস্ক |

দেশের শিক্ষা খাতে ব্যয় বাড়লেও মানের প্রশ্নে অভিযোগের অন্ত নেই। মাধ্যমিক পর্যন্ত সরকার বিনামূল্যে বই দিলেও কোচিংয়ে ঝুঁকে বাড়ছে খরচের বোঝা। স্কুলের পড়াশোনার মান নিয়ে বিস্তর অভিযোগের কারণে প্রাইভেট, টিউশন ও কোচিংয়ে বাড়ছে শিক্ষার্থীদের দৌড়ঝাঁপ। শিক্ষা খাত নিয়ে সার্বিক পরিকল্পনা ও সঠিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলমানে এই বেহাল দশা বলে অভিযোগ করছেন অভিভাবকরা। বিশ্বব্যাংকের ‘ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট ২০১৮ : লার্নিং টু রিয়ালাইজ এডুকেশনস প্রমিজ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের তুলনায় শিখন মানে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা। প্রাক-প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক শেষ করা পর্যন্ত বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের স্কুল সময় হচ্ছে ১১ বছর। কিন্তু বাংলাদেশের শিশুরা ১১ বছরে যা শিখছে, অন্য দেশের শিশুরা মাত্র সাড়ে ছয় বছরেই তা শিখছে। অর্থাৎ একজন শিক্ষার্থীকে অন্য দেশের শিক্ষার্থীদের তুলনায় একই বিষয় শিখতে সাড়ে চার বছর সময় বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম কারণ হিসেবে স্কুল ব্যবস্থার দুর্বল মানের কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদনটি লিখেছেন জয়শ্রী ভাদুড়ী।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্কুলে নিয়মিত যাতায়াত করা অর্থই শেখা নয়। বাংলাদেশের তৃতীয় শ্রেণির ৩৫ শতাংশ শিক্ষার্থী বাংলা বিষয়টিও সঠিকভাবে পড়তে পারে না। আর পঞ্চম শ্রেণির মাত্র ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী সঠিকভাবে গণিত বোঝে, অর্থাৎ ৭৫ শতাংশই বোঝে না। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের শিক্ষার এ অবস্থার জন্য যেসব কারণ তুলে ধরা হয়েছে সেগুলো হলো- প্রাক-শৈশবে শিশুদের ঠিকমতো উন্নয়ন হচ্ছে না, দুর্বল শিক্ষাদান পদ্ধতি, বিদ্যালয় পরিচালনা ব্যবস্থায় দুর্বলতা এবং সরকারি শিক্ষাব্যবস্থায় সামগ্রিক ব্যয় কম।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা নিয়ে বলা হয়েছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বছরে যে বাজেট এর ১ শতাংশও গবেষণায় ব্যয় করা হয় না, যা খুবই হতাশাজনক। এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক যা বলছে তা সম্পূর্ণ ঠিক না হলেও আংশিক সত্য। আমাদের শিক্ষার্থীদের ১১ বছরের স্কুলজীবনে যা অর্জন হওয়ার কথা তা হচ্ছে না। আমাদের ভালো শিক্ষকের সংখ্যা কম। শিক্ষাদান পদ্ধতি, শিক্ষকদের যোগ্যতার ঘাটতি আছে। প্রশিক্ষণ যেভাবে হওয়ার কথা তা হচ্ছে না। ফলে শিক্ষকদের যেভাবে পড়ানোর কথা তা তারা পারছেন না।’ শিক্ষার মানের এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ঝুঁকছে কোচিং, প্রাইভেট টিউশনে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৬ সালের পরিসংখ্যানে বলা হয়, একজন শিক্ষার্থী বছরে তার শিক্ষার পেছনে যে টাকা ব্যয় করে, তার মধ্যে ৩০ শতাংশ চলে যায় কোচিং এবং হাউস টিউটরের ফি বাবদ। ওই শিক্ষার্থীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৮ শতাংশ টাকা খরচ হয় বই, খাতা-কলমসহ বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ কেনার পেছনে। তৃতীয় সর্বোচ্চ টাকা ব্যয় হয় ভর্তি, সেশন ফি, পরীক্ষা ফি বাবদ ১৭ শতাংশ। এ ছাড়া যাতায়াত ও টিফিন বাবদ খরচ হয় ১৬ শতাংশ, টিউশন ফিতে ১০ শতাংশ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ইউনিফর্ম কেনায় ৯ শতাংশ অর্থ খরচ হয়।

বিবিএস জরিপ বলছে, সাধারণত শহরের শিক্ষার্থীরা কোচিং ও প্রাইভেট পড়তে গিয়ে বেশি টাকা খরচ করে আর তাদের খরচের হার ৩৩ শতাংশ। উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে কোচিং সেন্টারে ভিড় জমায় শিক্ষার্থীরা।  এ ব্যাপারে বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘পশ্চিমের অনেক দেশেই উচ্চশিক্ষা ব্যয়বহুল। উচ্চশিক্ষা সবার জন্য নয়ও। শুধু অতি মেধাবীদের জন্য। ব্যয়বহুল হলেও তাদের শিক্ষার মান অতি উঁচু। আমাদের দেশে শিশু শ্রেণি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সমস্ত শিক্ষাই ব্যয়বহুল। বিদ্যা অর্জনের চেয়ে কোনোভাবে একটি সনদ অর্জনকেই অভিভাবকরা বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। এই সুযোগকে ব্যবহার করছে কোচিং ব্যবসায়ীরা। ফলে গত দুই দশকে শিক্ষার মান নেমে গেছে সর্বনিম্ন পর্যায়ে।  তিনি আরও বলেন, ‘প্রশ্ন ফাঁস হলে প্রাথমিক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মানসম্মত শিক্ষার প্রশ্নই আসে না। এ জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা দায়ী। দেশের খ্যাতিসম্পন্ন শিক্ষাবিদদের নির্লিপ্ততাও এর জন্য কম দায়ী নয়।’ চটকদার বাহারি বিজ্ঞাপনে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আকৃষ্ট করতে ব্যবসায় নেমে পড়েছে কোচিং সেন্টারগুলো। উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেটের (এইচএসসি) ব্যবহারিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে ২৫ মে। ফল প্রকাশের দুই মাস বাকি থাকলেও কোচিং সেন্টারগুলোর তৎপরতা বেড়ে গেছে। এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা দিয়েছে ১১ লাখের বেশি শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অধীন উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন প্রকল্পের গবেষণায় দেখা গেছে, ভর্তি-ইচ্ছুক একেকজন শিক্ষার্থীর পেছনে বছরে ভর্তি কোচিং ও আনুষঙ্গিক বাবদ খরচ হচ্ছে প্রায় ৪৩ হাজার টাকা।

২০১৩ সালে প্রকাশিত ওই গবেষণায় দেখা যায়, প্রায় ৯২ শতাংশ কোচিং করেন। গবেষণায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগের বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের প্রায় ৮৪ শতাংশ ভর্তি পরীক্ষার জন্য কোচিং করেছেন। তাদের কোচিং ফিসহ আনুষঙ্গিক মিলিয়ে খরচ পড়েছিল প্রায় সাড়ে ৩১ হাজার টাকা। এখন এই ব্যয় আরও বেড়েছে। কোচিং ফি প্রতি বছরই ৫০০ থেকে ১০০০ করে বাড়ানো হচ্ছে। শুধু বিজ্ঞান বিভাগে (‘ক’ ইউনিট) কোর্স ফি নেওয়া হচ্ছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা, মানবিকের (‘খ’ ইউনিট) জন্য ১৪ হাজার, ব্যবসায় শিক্ষার (‘গ’ ইউনিট গণিতসহ) জন্য ১৬ হাজার টাকা। একসঙ্গে একাধিক ইউনিটের জন্য কোর্স ফি আরও বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্যবই নির্ভর প্রশ্ন হলেও কোচিংয়ের ফাঁদে পা দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.012622833251953