শিক্ষিকার বেতনের টাকায় বিনা মূল্যের অ্যাম্বুলেন্স - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষিকার বেতনের টাকায় বিনা মূল্যের অ্যাম্বুলেন্স

নাটোর প্রতিনিধি |

সময় মতো হাসপাতালে না নেয়া হলে একজন সংকটাপন্ন রোগীর জীবন বিপন্ন হতে পারে। কিন্তু প্রত্যন্ত এলাকার গরীব-অসহায় মানুষরা যেখানে চিকিৎসা ব্যয় বহন করতেই হিমশিম খায়, সেখানে তাদের পক্ষে একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে রোগীকে হাসপাতালে নেয়া কঠিন হয়ে যায়। জরুরি অবস্থায় ভ্যান বা অন্য কোনো বাহনযোগে রোগীর যাতায়াতেও ঝুঁকি থেকে যায়।

শিক্ষকের বেতনের টাকায় তোলা অ্যাম্বুলেন্স : ছবি-সংগৃহীত

নিজ উপজেলার এসব গরীব ও অসহায় রোগীদের বিনা মূল্যে অ্যাম্বুলেন্স সেবা দিচ্ছেন শেফালী খাতুন নামে নাটোরের এক শিক্ষিকা। তিনি জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলার নগর ইউনিয়নের মেরিগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা। তিনি ওই ইউনিয়নের দোগাছী গ্রামের বাসিন্দা ও ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সামসুজ্জোহার বোন। এক সন্তানের জননী শেফালী খাতুনের স্বামী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত আছেন।

রোগীদের দ্রুত চিকিৎসকের কাছে পৌঁছানোর সুযোগ করে দিতে নিজ বেতনের টাকা জমিয়ে তিনি কিনেছেন একটি অ্যাম্বুলেন্স। তার এই অ্যাম্বুলেন্সে স্থানীয় মনপিরিত, দোগাছী, দিঘলকান্দী, লক্ষীচামারী, মেরীগাছা, চুলকাটিয়া, কুজইলসহ আশেপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের রোগীদের হাসপাতালে পৌঁছে দিচ্ছে একবেলা খাবারের বিনিময়ে। উদ্যমী এ শিক্ষিকার ব্যতিক্রমী সেবা সারা জেলায় প্রশংসা কুড়িয়েছে।

গত দুই মাস যাবৎ শুধু চালকের একবেলা খাবারের বিনিময়ে এলাকাবাসীকে এ অ্যাম্বুলেন্স সেবা দিয়ে আসছেন এই শিক্ষিকা। তবে এই বিনিময়টি নিছকই বিনিময়। কোনো রোগী বা তার পরিবারের সদস্যরা চালকের খাবার না দিয়েও সেবাটি পেতে পারেন। সেবা গ্রহণের বিপরীতে কোনো বিনিময় বাধ্যতামূলক নয়।

জানা যায়, মানুষের সেবা করার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন থেকেই ছয় বছর আগে গ্রামের রোগীদের জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স কেনার পরিকল্পনা করেন তিনি। এরপর নিজের বেতনের টাকা সঞ্চয় করে গত বছরের অক্টোবরে কিনে ফেলেন অ্যাম্বুলেন্সটি। এমনকি নিজের বেতনের টাকা থেকে অ্যাম্বুলেন্সের জ্বালানী ও চালকের বেতন দেন তিনি। বর্তমানে প্রতিদিনই দুই একজন রোগী শিক্ষিকা শেফালীর এম্বুলেন্স সেবা নিয়ে থাকে। চব্বিশ ঘণ্টাই অ্যাম্বুলেন্সটি প্রস্তুত থাকে রোগীদের জন্য। নির্দিষ্ট নম্বরে ফোন পেলেই রোগীর ঠিকানায় হাজির হয় এম্বুলেন্সটি।

মেরিগাছার শুক্কুর আলী ও দীঘলকান্দি গ্রামের ফাতেমা বেগম জানান, প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ অ্যাম্বুলেন্স সেবা পেয়ে খুবই উপকৃত হচ্ছে। ভাড়ার জন্য কোনো রকম চাপ দেয়া হয় না রোগীকে।

মশিন্দা গ্রামের রোগী নাসির উদ্দিন বলেন, কিছুদিন আগে চরম সংকটময় মুহূর্তে শেফালী বেগমের অ্যাম্বুলেন্সটি আমাকে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়ে জীবন বাঁচাতে সাহায্য করেছে।

বড়াইগ্রাম উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ অহিদুল হক বলেন, মানুষ অর্থ সঞ্চয় করে ভোগ-বিলাসিতার পেছনে ব্যয় করে। অথচ একজন শিক্ষিকা হয়ে তিনি তার সঞ্চয় মানব কল্যাণে ব্যয় করছেন, যা বিরল দৃষ্টান্ত। সমাজের বিত্তবান মানুষদের এ থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত।

নগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নীলুফার ইয়াসমিন বলেন, শিক্ষিকা শেফালী খাতুন আর্ত-মানবতার সেবায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তার এই উদ্যোগে রোগীরা দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে। যাদের ভাড়া ব্যয় বহন করার সামর্থ্য নেই, তারা বিনা মূল্যেও সেবাটি পাচ্ছেন।

শিক্ষিকা শেফালী খাতুন বলেন, গ্রামের দরিদ্র রোগীদের অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া বেঁচে গেলে সে টাকায় তারা ঔষধাদি কিনতে পারবে, এমন চিন্তা থেকেই অ্যাম্বুলেন্সটি কেনা। কোনো রোগী যদি সেবা গ্রহণের বিনিময়ে কিছু দিতে চায়, তবে শুধু চালকের জন্য একবেলার খাবার নিতে বলা আছে, এর বেশি কিছু নেয়া হয় না। যদি কেউ তাও দিতে না পারেন তবুও চাপ দেয়া হয় না। আমার কাছে রোগীর জীবনটা আগে। খারাপ লাগে যখন একটি অ্যাম্বুলেন্স হওয়ায় অনেক সময় সবকয়টি গ্রামে সেবা দেয়া সম্ভব হয় না। ভবিষ্যতে আরেকটি অ্যাম্বুলেন্স কেনার পরিকল্পনা আছে। তবে কোনো আর্থিক সহযোগিতা পেলে দ্রুত তা কিনতে পারবো।

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0067579746246338