আনুমানিক ৩৫০০ খ্রিষ্টপূর্বে বিভিন্ন লিপির ব্যবহার শুরু হয় প্রাচীন সভ্যতাগুলোতে। যেমন হায়ারোগ্লিফস। সম্ভবত খ্রিষ্টিয় ছয় শতকের পূর্ব বাংলার পন্ডিত সমাজ বিভিন্ন ধর্ম কেন্দ্র গুলোকেই শিক্ষায়তন হিসাবে ব্যবহার করেছেন। মধ্যযুগ তথা মুসলমান যুগে মসজিদ ও মাদরাসাগুলো সংস্কৃতি ও শিক্ষার কেন্দ্ররূপে ব্যবহৃত হয়। মধ্যযুগে হিন্দুদের প্রধান শিক্ষাকেন্দ্র ছিল নবদ্বীপ। ১৮১৩ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির শিক্ষা বিস্তারের পদক্ষেপকে আধুনিক শিক্ষার গোড়াপত্তন বলে ধরা হয়।
স্যাডলার কমিশনের সুপারিশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার বিস্তার ঘটে। প্রত্যেক জেলায় একটি করে সরকারি স্কুল গড়ে ওঠে সরকারি ব্যবস্থাপনায় এবং এগুলোকে মডেল হিসেবে ধরে, পরবর্তীতে বেসরকারি তথা ব্যক্তি উদ্যোগে বেসরকারি স্কুল, মাদরাসা ও কলেজ গড়ে ওঠে। বাংলাদেশ সৃষ্টির পরেও দীর্ঘ সময় বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতি সরকারের তেমন কোন গুরুত্ব লক্ষ্য করা যায়নি। ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বেসরকারি শিক্ষকদের এমপিও প্রথা চালু হয়। এখনও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর শিক্ষকগণ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা সমভাবে পাচ্ছেন না।
উপরোক্ত তথ্য গুলো অবতারণার কারণ হলো, যুগে যুগে শিক্ষা ব্যবস্থার প্রসার ঘটেছে বেসরকারি উদ্যোগে এবং তত্ত্বাবধানে। বিভিন্ন গ্রামে/ মহল্লার অশিক্ষিত/ শিক্ষিত লোকজন তাদের প্রয়োজনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন নিজেদের জমি-জমা ও উপার্জিত অর্থ টাকা-পয়সা দান করে। কাজেই বেসরকারি উদ্যোগকে অস্বীকার করার কোনও সুযোগ নেই।
আগামীকাল ২২ আগস্ট বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির নীতিমালা সংশোধন করে সভাপতির শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি নির্ধারণ করা হবে মর্মে দৈনিক শিক্ষায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানতে পারলাম। যা সঠিক সিদ্ধান্ত হবে বলে মনে হয় না। এমন পদক্ষেপে বেসরকারি উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীগণ নিরুৎসাহিত হবে, যা শিক্ষা ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল ও ক্ষতিগ্রস্থ করবে। ব্যবস্থাপনা কমিটির অনিয়মের জন্য শুধু ব্যবস্থাপনা কমিটি দায়ী, তা সঠিক নয়। প্রতিষ্ঠান প্রধান এবং সমসাময়িক রাজনীতিও এর সাথে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। তাছাড়া বাংলাদেশে বর্তমানে বিভিন্ন সেক্টরে যেসব বড় বড় আর্থিক অনিয়ম পরিলক্ষিত হচ্ছে, তা শুধু শিক্ষিত না, উচ্চ শিক্ষিত মানুষদের দ্বারা সংগঠিত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে অশিক্ষিত বলে কাউকে ছোট করা বা তার দায়িত্ব পালনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা সমীচীন হবে না। ক্ষেত্র বিশেষে সংবিধানের প্রশ্নও আসবে।
এ প্রসঙ্গে মনে করিয়ে দিতে চাই, টানা ২৫ বছর দেশের সব আলিয়া মাদরাসার কমিটির প্রধান ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণ। আপনারা বুকে হাত দিয়ে বলুন বেসরকারি স্কুলের তুলনায় মাদরাসার এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়োগ-পদোন্নতিতে ঝামেলা বেশি না কম। সুতরাং শিক্ষিত মানুষেরা কমিটিতে থাকলেই অনিয়ম হবে না তা কিন্তু না।
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভালোভাবে পরিচালনার জন্য আমি কিছু সুপারিশ করছি:
১. মাঠ পর্যায়ে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনা কমিটির কার্যক্রম তদারকি প্রয়োজন। অর্থাৎ জবাব দিহি নিশ্চিত করতে হবে।
২. মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনা কমিটির দায়িত্ব কর্তব্যে সমন্বয় নিশ্চিত করা। অর্থাৎ শিক্ষক বরখাস্ত বা সাময়িক বরখাস্তের ক্ষেত্রে জেলা শিক্ষা অফিসারের মতামত গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা।
৩. বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনা কমিটির কোন অনিয়ম প্রতিয়মান হলে জেলা শিক্ষা অফিসারের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বোর্ড কর্তৃপক্ষকে উক্ত কমিটি পূণঃ গঠন নিশ্চিত করতে হবে। এধরণের কার্যক্রম প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় চালু আছে।
৪. বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের চাকুরির শর্তাবলি ১৯৭৯ প্রতিপালন নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের (উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, জেলা শিক্ষা অফিসার, উপ-পরিচালক) দায়িত্ব ও কর্তব্য সংক্রান্ত পরিপত্র ২০০৮ প্রতিপালন নিশ্চিত করতে হবে।
এম এ মালেক, অবসরপ্রাপ্ত জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা
[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন]