শিশুদের ওপর থেকে বইয়ের ভার কমানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শিশুরা পড়াশোনার মধ্যে যেন আনন্দ পায় সে কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্লাস ওয়ান থেকে থ্রি পর্যন্ত কোন পরীক্ষা থাকা উচিত নয়। একই সঙ্গে পঞ্চম শ্রেণীতে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা থাকবে কিনা, সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে সিদ্ধান্ত নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। গত মঙ্গলবার শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত এক সম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।
সম্পাদকীয়তে আরও জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে আমরাও সমর্থন করি। আমরা মনে করি, শিশুদের পড়াশোনার চাপ থেকে বাঁচাতে হলে শিক্ষার মান বাড়াতে হবে, বইয়ের বোঝা কমাতে হবে। সেটা কীভাবে হবে তা খুঁজে বের করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই।
স্কুলগুলোতে কেবল পড়াশোনা আর পড়াশোনা। এর বাইরে যেন আর কিছু নেই। পিইসি এবং জেএসসি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে শিশুরা সারা বছরই পরীক্ষার চাপে দম ফেলবার সময় পাচ্ছে না। ছোট ছোট বাচ্চারা এত বড় পাবলিক পরীক্ষার ভয়ে দিশেহারা হয়ে পরিশ্রম করতে গিয়ে ভবিষ্যতে চিন্তা করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। বাচ্চাদের চাপের মধ্যে ফেলে পরিশ্রম করালেই কি শিক্ষার মান বৃদ্ধি পায়?
আধুনিক যুগে যারা শিশুদের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কাজ করছেন, তাদের দৃষ্টিভঙ্গিটা হচ্ছে শিশুর বিকাশ হওয়া দরকার। শিক্ষার চাইতে শিশুর বিকাশটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এটা কখনো চিন্তা করা হয় না যে, একটা বাচ্চাকে যদি এমন কিছু চাপিয়ে দেয়া হয়, যা তার বয়সের উপযোগী না, তাহলে এর ফলাফলটা কী হতে পারে।
দেশের সাধারণ মানুষের দারুণ দুর্ভাগ্য এই যে, তাদের সন্তানদের জন্য যারা শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন করেন সেই আমলারা তাদের সন্তানদের লেখাপড়া করান বিদেশে, নয়তো দেশের মধ্যে মূলধারার বাইরে এলিট শ্রেণীর স্কুলে। যারা শিক্ষা প্রকল্প তৈরি করেন তাদের এসব তৈরির সময় ব্যাখ্যার কোন প্রয়োজন পড়ে না। জনগণের কোন প্রয়োজনে করছেন তাও ভাববার কোন প্রয়োজন পড়ে না। মতলবে বা খামখেয়ালিতে তাদের মাথায় আসলেই হয়ে গেল। সেটাই নীতিতে পরিণত হয় জনগণের জন্য।
দেশের পরীক্ষা ব্যবস্থাটা অকার্যকর হয়ে পড়েছে। প্রচলিত পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাই হয় না। যে শিক্ষক একটা বাচ্চাকে পড়ান, তিনিই হলেন তার জন্য শ্রেষ্ঠ পরীক্ষক। তাকেই ওই শিক্ষার্থীর মূল্যায়নের দায়িত্ব দিতে হবে। একটা স্কুলে যদি নিয়মিত পাঠদান হয়, আর শিক্ষার্থীরা যদি নিয়মিত আসেন সেটাই তো তার বড় মূল্যায়ন। আর এত বিষয়েও পরীক্ষা নেয়ার তো কোনো দরকার নেই। নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানেই মূল্যায়নের ব্যবস্থা থাকতে হবে। স্কুল কর্তৃপক্ষকে তা বোঝাতে হবে। অভিভাবকদেরও সচেতন হওয়া দরকার। বিশ্বের অনেক দেশেই দ্বাদশ শ্রেণীর আগে কোনো পরীক্ষা নেই। অথচ আমাদের বাচ্চাদের কয়েক বছর যেতে না যেতেই পাবলিক পরীক্ষায় বসতে হয়। এখন আমাদের শিক্ষাই হয়ে গেছে পরীক্ষানির্ভর। অবিলম্বে তা বন্ধ করতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কারে প্রয়োজনে এ ব্যাপারে একটি ন্যাশনাল টাস্কফোর্স করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে সেই টাস্কফোর্স হতে হবে শিক্ষাবিদদের নিয়ে; কোনোভাবেই আমলাদের দিয়ে নয়।শিশুদের ওপর থেকে পরীক্ষা এবং বইয়ের ভার কমাতে হবে।