শিশুর শিক্ষা গ্রহণের সূচনালগ্নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে প্রাথমিক বিদ্যালয়। এক গবেষণায় জানা যায়, জন্ম থেকে আট বছর শিশুর বিকাশ ও শিখনের উপযুক্ত সময়। এই সময়ের শিক্ষা শিশুর পরবর্তী জীবনে পথ চলার ভিত্তি স্থাপন করে এবং ব্যক্তিত্ব বিকাশে বিশেষ অবদান রাখে। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন শিক্ষকমণ্ডলী। শিক্ষককে বলা হয় জাতি গঠনের কারিগর। একজন শিক্ষকের ওপর বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীর মূল্যবান ভবিষ্যৎ নির্ভরশীল। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে শিশুরা প্রাক-প্রাথমিক স্তরে তিন বছর বা তার বেশি সময় অতিবাহিত করে। আর এখানে শিশুরা জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিনগুলো পার করে। অপরদিকে লক্ষ করলে দেখা যায়, আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় শিশুর শিক্ষাজীবনের শুরুতে চাপিয়ে দেয়া হয় ব্যাগভর্তি বই। আর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের ভয়ে আনন্দের সঙ্গে পড়ার পরিবর্তে প্রতিযোগিতামূলক মুখস্থবিদ্যা। আমাদের দেশে দুই ধরনের উদ্যোগে শিক্ষা প্রদান করা হয়। ১.সরকারি উদ্যোগে প্রাথমিক শিক্ষা এবং ২. বেসরকারি উদ্যোগে কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা। রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ প্রতিদিন প্রত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।
নিবন্ধে আরও বলা হয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার গুণগত মান সম্পর্কে প্রশ্ন থাকায় বর্তমানে অভিভাবক কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রতি ঝুঁকে পড়েছে। আমাদের দেশে প্রাথমিক শিক্ষার হার ক্রমশ বাড়ছে কিন্তু শিক্ষার গুণগত মান পরিবর্তন হচ্ছে না। আজকের শিশুরাই আগামীদিনের ভবিষ্যৎ। আমাদের এই ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে প্রয়োজন সুশিক্ষিত পথপ্রদর্শক। যিনি একজন সুনাগরিক গড়ে তুলতে পারবেন।
স্কুলগুলোতে শিশুদের খেলাধুলা করার পরিবর্তে পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। ফলে শিশুর স্বভাবসুলভভাবে বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। এবং তাদের বহুমুখী প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পাচ্ছে না। শিশুর ওপর জোর করে চাপিয়ে দেয়ার নাম শিক্ষা নয়। প্রখ্যাত ফরাসি দার্শনিক জ্যাঁ ছ্যাঁকা রুশো বলেছেন, "Education is the child's development from within".
শিশুর নিজস্ব ধারায় বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হয়ে বেড়ে উঠতে সাহায্য করতে হবে। শিক্ষকের আচরণ হবে বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সহযোগিতামূলক। শিশুর অবুঝ মন বোঝার ক্ষমতা থাকতে হবে। পাঠদান পদ্ধতি হবে আনন্দপূর্ণ। যা শিশু শিক্ষকের সঙ্গে হাসতে-খেলতে শিখবে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘আনন্দহীন শিক্ষা, শিক্ষা নয়, যে শিক্ষায় আনন্দ নেই সে শিক্ষা প্রকৃত শিক্ষা হতে পারে না’। শিশুদের খেলার জন্য পর্যাপ্ত মাঠের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষামূলক বই-এর সমন্বয়ে লাইব্রেরি গড়ে তুলে শিশুদের পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। শ্রেণিকক্ষে পাঠদান পদ্ধতিতে নতুনত্ব আনতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষকদের সকল চাহিদা পূরণ করতে হবে যেন তারা নিশ্চিন্তচিত্তে পড়াতে পারে। সর্বোপরি আজকের এই শিশুরা যেন অনাগত ভবিষ্যতের কর্ণধার হতে পারে।
সুরাইয়া ইয়াসমিন কণা : শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।