শীর্ষ দুই নেতার দ্বন্দ্বে ভাঙনের মুখে হেফাজত! - দৈনিকশিক্ষা

শীর্ষ দুই নেতার দ্বন্দ্বে ভাঙনের মুখে হেফাজত!

নিজস্ব প্রতিবেদক |

প্রায় দুই বছর ধরেই ২টি বলয়ে বিভক্ত হয়ে আছে দেশে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সবচেয়ে শক্তিশালী ধারা হেফাজতে ইসলাম। একদিকে নেত্বত্ব দিচ্ছেন আল্লামা শফী। আরেক দিকে আছেন জুনায়েদ বাবুনগরী। এই দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে এতদিন নীরবে দ্বন্দ্ব চলমান থাকলেও হঠাৎ হাটহাজারী বড় মাদ্রাসার  সহকারী পরিচালকের পদ থেকে বাবুনগরীকে সরিয়ে দেয়ায় বর্তমানে তা চরম আকার ধারণ করেছে। এই প্রেক্ষাপটে বহুল আলোচিত সংগঠনটিতে স্পষ্ট হয়ে উঠে ভাঙনের রেখা। সোমবার (২২জুন) ভোরের কাগজ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন এস এম মিজান।

জানা যায়, ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান মর্যাদা দেয়ার পর ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা এবং আওয়ামী লীগ হয়ে গেলেও শফীর কোনো আপত্তি নেই’ বলে আল্লামা শফীর মন্তব্যকে ভালোভাবে নেননি জুনায়েদ বাবুনগরী ও তার অনুসারীরা। এছাড়া সংগঠনটির আমির আল্লামা শফী ও তার পুত্র আনাস মাদানীর ক্ষমতা ও একক আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শুরু হয় অন্তর্কোন্দল। যার সূত্র ধরে পদত্যাগ করেন সংগঠনটির নায়েবে আমির মাওলানা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী। ওই সময় আরো কয়েকজন নেতার পদত্যাগের কথা শোনা গেলেও পরে তা স্নায়ুযুদ্ধে রূপ নেয়। এরপর করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মধ্যে গত রমজানে ৫ ওয়াক্ত ও জুমার নামাজের সময় মসজিদে উপস্থিতি সীমিত করার পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে বিবৃতি ও পাল্টা বিবৃতি দেন এ দুই আলেম। সবশেষ গত মাসের মাঝামাঝি হাটহাজারী মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন নিয়ে প্রকাশ্য রূপ নেয় তাদের মতবিরোধ।

জানা যায়, শতবর্ষী আল্লামা আহমদ শফী দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত দুর্বলতার পাশাপাশি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তিনি কয়েকবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সবশেষ গত মাসের মাঝামাঝি চট্টগ্রামের একটি হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় হাটহাজারী মাদ্রাসার মোহতামিম (মহাপরিচালক) নির্বাচন প্রশ্নে হঠাৎ আল্লামা শফী ও মাদ্রাসার মুঈনে মোহতামিম (সহকারী পরিচালক) জুনায়েদ বাবুনগরীর অনুসারীরা প্রকাশ্য বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। আল্লামা শফীর অসুস্থতার কারণে একটি পক্ষ মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ঘোষণা করলে এই বিরোধ স্পষ্ট হতে থাকে। বাবুনগরীর অনুসারীরা আল্লামা শফীর অবর্তমানে তাকেই মাদ্রাসার মহাপরিচালক ঘোষণা করে।

এ কারণে গত ১৭ মে আল্লামা শফী হাসপাতাল থেকে বিবৃতি দিতে বাধ্য হন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, সারাজীবন মাদ্রাসার জন্য নিজের জীবনকে কোরবান করে দিয়েছি। কাউকে নায়েবে মোহতামিম অথবা জিম্মাদার করিনি। যা কিছু করার মাদ্রাসার জন্য সব মজলিসে শুরা করবে। এরই ধারাবাহিকতায় গত বুধবার শুরা কমিটির বৈঠক ডেকে সহকারী পরিচালকের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয় বাবুনগরীকে। এর ফলে হেফাজতে ইসলামের আমির হওয়ার পথ রুদ্ধ হয়ে গেল জুনায়েদ বাবুনগরীর। কারণ মাদ্রাসার বর্তমান মহাপরিচালক আল্লামা আহমদ শফীর অবর্তমানে এখন সহকারী পরিচালক মাওলানা শেখ আহমদই ওই মাদ্রাসার মহাপরিচালক হবেন। তখন পদাধিকারবলে হেফাজতে ইসলামের আমিরের দায়িত্বও পালন করবেন তিনি। এছাড়া বেফাক, আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশের চেয়ারম্যানসহ কমপক্ষে ৩ শতাধিক সংগঠনের নেতৃত্ব দেবেন তিনি।

হাটহাজারীর এই বড় মাদ্রাসাকে হেফাজতের ঘাঁটি বলা হয়। এ পরিস্থিতিতে এখানকার এই দ্বন্দ্ব বর্তমানে পুরো সংগঠনেই ছড়িয়ে পড়েছে, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও লক্ষ করা গেছে। দুপক্ষই নেমে পড়েছেন ‘ভার্চুয়াল যুদ্ধে’। একপক্ষ অন্যপক্ষকে হেনস্থা করতেও ছাড়ছে না। ফেসবুকে দিচ্ছেন স্ট্যাটাস, পাল্টা স্ট্যাটাস। তবে হাটহাজারী মাদ্রাসার বিরোধ হেফাজতে ইসলামে প্রভাব ফেলবে না বলে মন্তব্য করেছেন হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী। তার মতে, হাটহাজারী মাদ্রাসা ও হেফাজতে ইসলাম দুটো একেবারে ভিন্ন বিষয়। হাটহাজারী মাদ্রাসার সঙ্গে হেফাজেত ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। তাই হাটহাজারী মাদ্রাসার সহযোগী পরিচালক নির্বাচনের প্রভাব হেফাজতে ইসলামে খুব একটা পড়বে না। তিনি বলেন, যারা বিজ্ঞ আলেমদের সম্মানহানি করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিচ্ছে তারা ভুল করছে। এ ধরনের স্ট্যাটাস কোনোভাবে কাম্য নয়। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে হেফাজতে ইসলামের একাধিক নেতা বলেন, হাটহাজারী মাদ্রাসার সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সেজন্যই যিনি হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক তিনিই হবেন আল্লামা আহমদ শফী পরবর্তী হেফাজতে ইসলামের আমির।

উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ - dainik shiksha স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে - dainik shiksha শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0070898532867432