চলতি বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেয় ২৮ হাজার ৬৭৩টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে একজনও পাস করেনি এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১০৭। আবার এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১০২টি কারিগরি ভোকেশনাল প্রতিষ্ঠান ও মাদরাসা। এসবের মধ্যে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানও রয়েছে, যাদের পেছনে প্রতি মাসে সরকারের ব্যয় হচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, যেসব এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে একজনও পাস করেনি তারা তদবির আর বিপুল অর্থের বিনিময়ে এমপিওভুক্ত হয়েছে। এই অর্থের জোগান দিয়েছেন শিক্ষকরাই। নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানগুলোও নানা তদবির করে স্বীকৃতি ও পাঠদানের অনুমতি পেয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা সরকারের কাছ থেকে বেতন-ভাতা পান না, ম্যানেজিং কমিটিও দেয় না। ফলে তাঁরা ক্লাসেও তেমন আসেন না। এগুলো মূলত নামেই প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থী যেমন নেই, তদারকিও নেই।
শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে মাদরাসা ৫৯টি, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৪৩টি, বরিশাল বোর্ডের অধীনে দুটি স্কুল এবং দিনাজপুর, রাজশাহী ও যশোর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে একটি করে স্কুল। শূন্য পাস করা ৫৯ মাদরাসা থেকে এবার ২৩৮ জন পরীক্ষার্থী দাখিল পরীক্ষা দিয়েছিল।
শূন্য পাস করা ৫৯টি মাদরাসার মধ্যে ৯টি এমপিওভুক্ত। এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে মাসে প্রায় আড়াই লাখ টাকা করে বেতন দেয় সরকার। বছরে এসব মাদরাসার পেছনে সরকারের ব্যয় হয় প্রায় তিন কোটি টাকা। শূন্য পাস করা বাকি মাদরাসাগুলো নন-এমপিও প্রতিষ্ঠান। এখনো এসব প্রতিষ্ঠানকে সরকার কোনো সহায়তা দেয় না। তবে তারা এমপিওভুক্তির জন্য জোর তদবির চালিয়ে যাচ্ছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর বলেন, ‘শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রথমে আমরা শোকজ করব। সন্তোষজনক জবাব না পেলে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর এমপিও বাতিল করা হবে, নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি বাতিল করা হবে। আর যেসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী নেই সেগুলো রাখার কোনো যৌক্তিকতা দেখি না। যেসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী আছে, তাদের কাছ থেকে সন্তোষজনক জবাব পাওয়া গেলে অন্তত আরো এক বছর সুযোগ দেওয়া যেতে পারে।’
শূন্য পাস করা এমপিওভুক্ত মাদরাসাগুলোর মধ্যে গাজীপুরের শ্রীপুরের মারিচর চালা ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা থেকে এবার দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ১২ জন শিক্ষার্থী, একই জেলার শ্রীপুরের বরমা গার্লস দাখিল মাদরাসা থেকে ১৬ জন, রংপুর সদরের মমিনপুর হাট দাখিল মাদরাসা থেকে চারজন, দিনাজপুরের নবাবগঞ্জের সালটি মুরাদপুর দাখিল মাদরাসা থেকে ৯ জন, যশোরের কেশবপুরের মির্জাপুর মহিলা দাখিল মাদরাসা থেকে ১২ জন, পটুয়াখালীর দশমিনার পূর্ব আলীপুরা ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা থেকে ১৫ জন, একই জেলার দশমিনা উপজেলার রাম বল্লভপুর দাখিল মাদরাসা থেকে ১৪ জন এবং সাতক্ষীরার তালার জালালপুর ইউনিয়ন আদর্শ দাখিল মাদরাসা থেকে একজন পরীক্ষার্থী।
কারিগরি যে ৪৩টি প্রতিষ্ঠান থেকে এবার একজনও পাস করেনি সেগুলো নন-এমপিও প্রতিষ্ঠান। এগুলোর বেশির ভাগই সংযুক্ত প্রতিষ্ঠান। এমপিওভুক্ত স্কুল শাখার সঙ্গে তারা ভোকেশনাল খুলেছিল।
সরকার কারিগরি শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সে হিসাবে সাধারণ স্কুলের সঙ্গে ভোকেশনাল শাখা খোলা হয়েছে। সামনে আরো প্রতিষ্ঠানে ভোকেশনাল শাখা খোলা হবে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানের মান বৃদ্ধিতে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কোনো তৎপরতা নেই।
কারিগরি বোর্ডের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ভোকেশনাল শাখাগুলোয় ব্যাবহারিকেই বেশি নম্বর। কিন্তু ভুলক্রমে কিছু প্রতিষ্ঠানের ব্যাবহারিক নম্বর যোগ হয়নি। ফলে তাদের ফেল দেখানো হয়েছে। এ সমস্যার সমাধান করা গেলে শূন্য পাস প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমে আসবে।’