বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শূন্য পদের চাহিদা বা ই-রিকুইজিশন দেয়ার শেষদিন রোববার (৩০ সেপ্টেম্বর)। সাকুল্যে এক মাস পাঁচ দিন সময় অতিবাহিত হলো। এতে এনটিআরসিএ কতটুকু সফল হলো তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে এটুকু বোধগম্য হচ্ছে, দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শূন্যপদের চাহিদা নিতে বেগ পেত হয়েছে এনটিআরসিএর। কিন্তু ই-রিকুইজিশন কি শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে? বিভিন্ন স্থানের নিবন্ধনধারেিদর ভাষ্যমতে এখনও প্রচুর শূন্যপদ আছে যা প্রতিষ্ঠান প্রধানরা এনটিআরসিএ’র অনুরোধকে থোড়াই কেয়ার করে শূন্যপদের হিসেব দেয়নি বা দিচ্ছে না। একটি দেশে এহেন দায়িত্বজ্ঞানহীনতা সচেতন নাগরিকের কাছে কতটুকু কাম্য তা গভীর ভাবনার বিষয়।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যেখানে বাংলাদেশের প্রতিটি স্তরকে ডিজিটাল করার লক্ষ্যে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, সেখানে তার সহায়ক কর্মীবাহিনীর কিছু অংশ দেশকে আধুনিকায়ন করতে বড়ই অনীহা। এরা অলসভাবে তাদের কর্মপরিচালনা করতে বদ্ধ পরিকর। এদের দ্বারা জাতি উপকৃত না হয়ে ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি।
নিবন্ধনধারীদের ভাষ্যমতে, অনেক প্রতিষ্ঠান প্রধান ই-রিকুইজিশন সর্ম্পকে জ্ঞাত নয়। এরা ইন্টারনেট ভিত্তিক যুগে ওয়েবসাইট ভিজিট দূরের কথা মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তাগুলোও খুলে দেখেন না। শূন্যপদের চাহিদা না দেওয়ার অর্থ কি দাঁড়ায়? শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে বিমাতাসূলভ আচরণ কোন দূরভিসন্ধি নয়তো? অসহায় নিবন্ধিতদের মনে এরকম হাজারো প্রশ্নের ঝড় ওঠে। তারা মনে করেন, সারা দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুন্যপদ পূরণে এনটিআরসিএ’র ই-রিকুজিশন বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক শিক্ষা কর্মকতাগনের নির্দেশ অনন্য ভূমিকা পালন করতো। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ই-রিকুইজিশনে যা লক্ষ্য করা গেছে তা হচ্ছে সমন্বিত উদ্যোগের অভাব। একটি সমন্বিত উদ্যোগই পারতো শতভাগ এসব শূন্যপদ পুরণ করতে। সেখানে বার বার শূন্যপদ চাওয়ার খারাপ সংস্কৃতি অন্তত বন্ধ হতো। বাঙালি যে নিজের ভালোটা নিজেই বোঝে না তা ২০১৬ এবং ২০১৮ খ্রিস্টাব্দের একাধিক ই-রিকুইজিশন থেকে সুস্পষ্ট।
কারণ, কোন প্রতিষ্ঠানে দুইজন শিক্ষকের পদ পূরণ হওয়া মানে শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে দশটি ক্লাশের সুযোগ পাওয়া। অর্থাৎ, শিক্ষার্থীরা এতদিন সপ্তাহে দশটি বিষয়ভিত্তিক ক্লাস থেকে বঞ্চিত ছিল। একজন সচেতন অভিভাবক হওয়া সত্বেও প্রতিষ্ঠান প্রধান হীন স্বার্থ চরিতার্থ পূরণ করার জন্য তার শিক্ষার্থীদের এই গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস থেকে বঞ্চিত করার দায় কীভাবে এড়াতে পারে? এখনো দেখা যায় অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইংরেজি এবং রসায়ন শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক না থাকায় প্রতিমাসে ভাড়ায় শিক্ষক দিয়ে ক্লাশ নিতে। একজন ভাড়ায় শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে শিখন-শিখণে কতটুকু দায় নিতে পারে তা মনে হয় প্রতিষ্ঠান প্রধান মহোদয় খুব ভালো করেই জানেন। প্রতিষ্ঠানের খারাপ ফলাফলের দায়ভার গ্রহন করে তাকে সতর্ক হওয়া উচিত। ভবিষ্যতে একই রকম ফলাফল হলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা কেন উচিত নয়?
এছাড়া উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তা তার এলাকার কয়টি প্রতিষ্ঠানে কতটি শূনপদ আছে তা তিনি ভালো করেই জানেন। উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের যোগ্য শিক্ষকের শূন্যপদ পূরণে তার অবশ্যই দায় আছে। তিনি তার উপজেলায় শূন্যপদ পূরণে একজন মডারেটর হিসেবে এই শেষ সময়ে যদি ই-রিকুইজিশন পূরণ না করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে তলব করে শূন্যপদের চাহিদা দিতে নির্দেশ প্রদান করেন, তাহলে দেশের সমস্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সমূদয় শূন্যপদ রাত বারোটার মধ্যে পাওয়া সম্ভব।
নচেৎ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে এইসব দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকর্তারাই বাধা হয়ে দাঁড়াবে। আমরা প্রত্যেকে নিজের স্থান থেকে সচেতন না হলে গুটিকয়েক লোকের প্রাণান্ত প্রচেষ্টা সত্বেও বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন কীভাবে বাস্তবায়িত হবে? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত বিচক্ষণ। তিনি বিষয়টি গভীরভাবে অনুধাবন করলে পরিস্কার হয়ে যাবে কারা প্রকৃত শিক্ষা বিস্তারে অন্তরায়?
লেখক: ভূপেন্দ্র নাথ রায়, খানসামা, দিনাজপুর।
[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন]