শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের আবাসন বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ করেছেন বঞ্চিতরা। তাদের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে আবাসন বরাদ্দের বিষয়টি ঝুলিয়ে রেখেছিলেন উপাচার্য ড. কামাল উদ্দিন। পরে তার দায়িত্বের শেষ কার্যদিবসে তড়িঘড়ি করে অনুমোদন দিয়েছেন। এজন্য গঠিত কমিটির সুপারিশের তোয়াক্কা না করে উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ ও এক প্রভাবশালী শিক্ষিকার অনুগতদের বাসা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অঞ্চলপ্রীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
উপাচার্য অনিয়মের দায় কমিটির ওপর চাপিয়ে দিলেও কমিটির সভাপতি পরিমল কান্তি বিশ্বাস জানান, বাসা বরাদ্দের বিষয়টি অনুমোদনের আগেই তিনি পদত্যাগ করেছেন। অনুমোদনের বিষয়ে কিছুই জানেন না। বাসা বরাদ্দের অফিস আদেশে ১৩ আগস্টে অনুমোদনের বিষয়ে উল্লেখ থাকলেও সেদিন সন্ধ্যায় রেজিস্ট্রার রেজাউল করিমের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাসা বরাদ্দের বিষয়টি অনুমোদন দেওয়া হয়নি। সেদিন একাধিক কর্মকর্তাও বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সেকেন্দার আলী সাংবাদিকদের বলেন, 'চলতি আগস্ট মাসের ১৪ তারিখে প্রশাসনের শেষ কার্যদিবস হওয়ার কথা। কিন্তু সেদিন শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় ১৩ আগস্টে শেষ কার্যদিবস এর দায়িত্ব পালন করে অফিস ছেড়ে আসি। অথচ শুক্রবারে ছুটির দিনে আমাকে না জানিয়ে পেছনের তারিখে স্বাক্ষরপূর্বক অনুমোদন দেন উপাচার্য। অফিস আদেশ পাঠানো হয় রবিবার।'
রেজিষ্ট্রার শেখ রেজাউল করিম জানান, ১৬ আগস্ট বাসা বরাদ্দের বিষয়ে অফিস আদেশ দেওয়া হয়েছে। যার দুই দিন আগে উপাচার্যের দায়িত্বের মেয়াদ শেষ হয়েছে। প্রাপ্ত অফিস আদেশে উপাচার্যের স্বাক্ষরের পাশে ১৩ আগস্ট তারিখের উল্লেখ রয়েছে।
আবাসন সুবিধা চেয়ে আবেদন করেও বঞ্চিত একাধিক সিনিয়র কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে অনুগতদের বাসা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে জুনিয়র কর্মকর্তাদের বাসা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, অধ্যাপকদের জন্য নির্ধারিত চামেলী ভবনে অধ্যাপক না হয়েও বাসা বরাদ্দ পেয়েছেন ড. কামালের কন্যা এগ্রিকালচারাল বোটানি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. কামরুন্নাহার। বাসা বরাদ্দের জন্য আবেদন না করেও পেয়েছেন কৃষিতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আনিসুর রহমান। ছোট বাসা চেয়েও বড় বাসা পেয়েছেন জৈব প্রযুক্তি বিভাগের সদ্য যোগদানকারী সহকারী অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম। জানা যায়, রফিকুল ইসলাম সাবেক উপাচার্য কামালের নিকটাত্মীয়।
ড. আনিসুর রহমান জানান, তিনি আবেদন করেই বাসা বরাদ্দ পেয়েছেন। রফিকুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।
সদ্য সাবেক ভিসি ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, আবাসন বরাদ্দের বিষয়টা দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে ছিল। চেক করার দরকার ছিল। চলতি আগস্ট মাসের ১১ তারিখে এটি অনুমোদন দেওয়া হয়। ১৩ তারিখে সেটা কার্যকর করা হয়। অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক উপাচার্য বলেন, অনিয়ম হলে তার দায় আমার না। এই বিষয়ে গঠিত কমিটি সেটা বুঝবে।