চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কলেজের নতুন ছাত্রী হলের নামকরণ করা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে। একশ’ আসন বিশিষ্ট এ ছাত্রী হল আগামী জুলাইয়ের আগেই উদ্বোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলেজ প্রশাসন।
হলটি চালু হলে এটিই হবে নগরের সরকারি কলেজগুলোতে বঙ্গবন্ধু পরিবারের কোনো সদস্যের নামে তৈরি প্রথম স্থাপনা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রায় ৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে এ ছাত্রী হলের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২৫ কক্ষ ও পাঁচ তলা বিশিষ্ট হলটির নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের শুরুর দিকে।
তবে সেই সময় ‘বিশেষ পরিস্থিতির’ কথা উল্লেখ করে কলেজের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল হলটি চালুর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। কলেজের অন্য ৪ ছাত্র ও ১ ছাত্রী হলের সঙ্গে এটিও বন্ধ থাকে।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠনের পর জানুয়ারিতে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে চট্টগ্রাম কলেজে আসেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আবুল হাসান কলেজের হলগুলো খুলে দিতে সরকারের সহায়তা চান। এরপর পরেই নগরের এ শীর্ষ কলেজটির হলগুলো চালুর বিষয়ে ‘সবুজ সংকেত’ দেওয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে।
সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ‘সবুজ সংকেতের’ পর হলগুলোর বিষয়ে বৈঠকে বসে কলেজের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল। এতে পুরনো হলগুলো খোলার পাশাপাশি নতুন ছাত্রী হলের নাম ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রী হল’ করার প্রস্তাব দেন অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আবুল হাসান।
প্রস্তাবটি নিয়ম অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কাছে পাঠানো হয়। ৬ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সাধারণ সভায় প্রস্তাবটি অনুমোদন দেয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আবুল হাসান জানান, বঙ্গবন্ধুর সাহসী নেতৃত্ব আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ উপহার দিয়েছে। তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ শিক্ষাসহ সব ক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নতি করছে। তাই বঙ্গবন্ধুর পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েই আমরা নতুন ছাত্রী হলটির নাম ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রী হল’ রাখার প্রস্তাব দিই।
তিনি বলেন, প্রস্তাবটি ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অনুমোদন দিয়েছে। জুলাইয়ের আগেই হলটি উদ্বোধন করে ছাত্রীদের জন্য খুলে দিতে চাই আমরা।
এদিকে, ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ ও শিবিরের মধ্যে সংঘর্ষের পর বন্ধ ঘোষণা করা ৪ ছাত্র ১ ছাত্রী হলের মধ্যে ১ ছাত্র ও ১ ছাত্রী হল আগামী জুলাইয়ের আগেই খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
প্রায় সাড়ে তিন বছর পর কলেজের খাদিজাতুল কোবরা (রা.) ছাত্রী হল ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী ছাত্র হলের বি-ব্লক শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেয়ার এ সিদ্ধান্ত নেয়া হলো।
বন্ধই থাকছে অন্য তিনটি
তবে অন্য তিন ছাত্র হল- শেরে বাংলা, শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং ড. আবদুস সবুর কবে নাগাদ খোলা হবে সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু জানাতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আবুল হাসান জানান, নতুন ছাত্রী হলের সঙ্গে খাদিজাতুল কোবরা (রা.) হল এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের বি-ব্লক শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। তবে অন্য তিন হল দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে এখন ব্যবহার করার মতো অবস্থায় নেই। হলগুলো সংস্কারের জন্য ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। বরাদ্দ পেলে সংস্কার শেষে এসব হলও খুলে দেয়া হবে।
তিনি বলেন চট্টগ্রাম কলেজে দূর-দূরান্ত থেকে অনেক শিক্ষার্থী পড়তে আসে। অনেকে মারাত্মক আবাসন সংকটে পড়ে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েই কলেজ প্রশাসন শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট কমাতে কাজ করছে। সবগুলো হল খুলে দিতে পারলে শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট কম আসবে।