বাংলাদেশের সরকারি খাতের চিকিৎসাব্যবস্থা নিয়া নানাবিধ অব্যবস্থাপনার খবর বেশ পুরাতন। তাহার পরও বেসরকারি খাতের চিকিৎসা-ব্যয় অপেক্ষাকৃত অধিক হওয়ায় সাধারণ মানুষ সরকারি চিকিৎসাব্যবস্থার উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। সাধারণ প্রান্তিক মানুষের কথা বিবেচনা করিয়া সরকারি চিকিৎসা খাত যেমন জনবান্ধব হওয়ার কথা ছিল, বাস্তবে ইহা তেমন হয় নাই। অনেক কারণ রহিয়াছে ইহার পিছনে। যেমন, চিকিৎসাকদের মফস্বলে থাকিতে না চাওয়া, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব, আবার যন্ত্রপাতি থাকিলে তাহা পরিচালনার যোগ্য লোকবল নাই, নার্স ও স্টাফের অভাব। সর্বোপরি সরকারি চিকিৎসা খাতে অবহেলার ছাপ সর্বত্র পরিলক্ষিত হয়। তেমনি অবস্থা বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ইহা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের সবচাইতে বড়ো ভরসাস্থল। কিন্তু হাসপাতালটির নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) থাকা ১০টি ভেন্টিলেটর মেশিনের ৯টি বর্তমানে নষ্ট হইয়া পড়িয়া রহিয়াছে! পাশাপাশি চিকিৎসক-সংকটে হাসপাতালটির আইসিইউ বর্তমানে প্রায় বন্ধের উপক্রম। ওয়ার্ডটিতে ১০ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকিলেও আছেন মাত্র এক জন। অধ্যাপক হইতে শুরু করিয়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও মেডিক্যাল অফিসার কোনো পদেই নাই চিকিৎসক। শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক সম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।
সম্পাদকীয়তে আরও জানা যায়, হাসপাতাল প্রশাসনের দাবি, ইতোমধ্যে নতুন ভেন্টিলেটর মেশিন ক্রয়ের চিন্তার পাশাপাশি আইসিইউ চালু রাখিয়া রোগীদের সেবা নিশ্চিতের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হইয়াছে। কিন্তু বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পূর্বদিকের নতুন দ্বিতল ভবনের নিচতলায় ২০১৭ সালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) চালু করা হয়। ইউনিটটি চালুর সময় হইতেই রোগীদের জন্য ১০টি আইসিইউ বেড, ১০টি বড়ো আকারের ভেন্টিলেটর মেশিন, তিনটি ছোটো আকারের ভেন্টিলেটর ও মনিটর সরবরাহ করা হয়। মাত্র দুই বছরে একে একে ৯টি ভেন্টিলেটর মেশিন নষ্ট হইয়া যাওয়ায় এখন এই ইউনিটে চিকিত্সা প্রদান সম্ভব হইতেছে মাত্র এক জন রোগীর। যেই কারণে সেবার প্রত্যাশায় আসা মুমূর্ষু রোগীদের বাধ্য হইয়া চলিয়া যাইতে হয় ঢাকায়। সেই ক্ষেত্রে গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই রোগীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটিতেছে।
হাসপাতালটি অতি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এইখানকার আইসিইউটি অতিসত্বর পূর্ণরূপে চালু করা প্রয়োজন। এতগুলি ভেন্টিলেটর মেশিন একের পর এক নষ্ট হইয়া পড়িয়া রহিয়াছে, তাহা দেখিবার কেহ নাই! এত দিনেও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হইল না কেন? পাশাপাশি ইহাও বলিতে হয়, হাসপাতালটিতে চিকিৎসক-সংকট তৈরি হইল কীভাবে। সেইখানে নিয়োজিত চিকিৎসকরা কি তাহাদের দায়িত্ব পালন করিতেছেন না? যদি না করিয়া থাকেন, তাহা হইলে প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করিতে হইবে। প্রধানমন্ত্রী বারবার চিকিত্সকদের নির্দেশনা প্রদান করিয়াছেন স্ব স্ব কর্মস্থলে থাকিয়া জনগণকে সেবাদানের জন্য। কিন্তু একশ্রেণির চিকিৎসক সেই নির্দেশনা অবজ্ঞা করিতেছেন। তাহারা নিজ কর্মস্থলে থাকিতে চাহেন না। আমরা আশা করিব, সেই চিকিৎসকদের মধ্যে শুভবোধের উদয় ঘটিবে, মানবতার ডাকে সাড়া দিয়া তাহারা দায়িত্বের ব্যাপারে সচেতন হইবেন।