প্রায় একশ’ পঞ্চাশ বছর আগে ব্রিটিশ শাসনামলে স্থাপিত বগুড়ার একটি বিদ্যালয়ের অবকাঠামো হারিয়ে যেতে বসেছিল। দীর্ঘ কয়েক যুগ পর এই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন এক শিক্ষার্থীর প্রচেষ্টায় আবার দেড়শ’ বছর আগের আদলে নির্মিত হয়েছে বিদ্যালয়টি। লাল দালানের অতীত ঐতিহ্য তুলে ধরে সেই সময়কার সরঞ্জাম দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার পৌর এলাকায় অবস্থিত শেরপুর ডি. জে মডেল হাই স্কুল। সম্প্রতি বিদ্যালয়টি সরকারিকরণও করা হয়েছে।
শেরপুর ডি. জে মডেল হাই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র ড. মোল্লা ফজলুল হক। যিনি বর্তমানে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় বসবাস করছেন। তার অক্লান্ত প্রচেষ্টায় প্রায় অর্ধ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে স্কুলটির ভবন।
শেরপুর ডি. জে হাই স্কুলের বর্তমান প্রধান শিক্ষক মো. আখতার উদ্দিন জানান, পুরাতন কাগজপত্র অনুযায়ী বিদ্যালয়টি ১৮৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কালের বিবর্তনে ঐতিহ্যবাহী এ বিদ্যালয়ের ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তা হারিয়ে যেতে থাকে। প্রাক্তন ছাত্র প্রবাসী ড. মোল্লা ফজলুল হক দীর্ঘদিন পর শেরপুরে এসে বিদ্যালয়ের এই অবস্থা দেখে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন।
ক্যালিফোর্নিয়ায় বসবাসরত ড. মোল্লা ফজলুল হক ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে এই প্রতিষ্ঠান থেকে মেট্রিক পাস করেন। দীর্ঘদিন পর তিনি ২০১৩ সালে দেশে এসে শেরপুরে ছুটে গেছেন। সেখানে গিয়ে দেখেছেন তার স্কুলে পড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অবস্থা। তার স্মৃতি বিজড়িত বিদ্যালয়ের ভগ্নদশা দেখে খুবই বিস্মিত হন। পরে ক্যালিফোর্নিয়ায় ফিরে গিয়ে প্রবাসী সোসাইটির সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেন তার দেখা সেই স্মৃতি বিজড়িত বিদ্যালয় শেরপুর ডি.জে হাই স্কুলের ভবনটি আগের মত করে নির্মাণ করে বিদ্যালয়ের ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে দেবেন। ড. মোল্লা ফজলুল হক বলেন, শিক্ষা জীবনের অতীত স্মৃতিকে লালন করতে পেরে তিনি উচ্ছ্বসিত। তার সময়ের বিদ্যালয় ভবনটি দেখে তিনি মনে করছেন এখনো তিনি এ বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। তবে দীর্ঘ প্রায় ৬৫ বছর পর বিদ্যালয়ের পরিবেশ দেখে তিনি মর্মাহত হন।
বিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাতা দি ড্রিম ডিজাইন এন্ড কনসাল্টিং সেন্টার বগুড়া শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী ওলিউল ইসলাম দুর্লভ বলেন, এই বিদ্যালয়টির অবকাঠামো আগের অবস্থায় আনতে তাদের প্রচণ্ড কষ্ট করতে হয়েছে। পুরাতন ভবনটি দেখতে কেমন ছিল এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদের সঙ্গে এ নিয়ে বিষদ আলোচনা করে ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। ছয় মাস পরিশ্রম করে সিমেন্ট ছাড়াই চুন-সুড়কি দ্বারা ৭ কক্ষ বিশিষ্ট ২৪০২ বর্গফুটের এ ভবন নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করেন গত ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে। এতে ব্যয় হয়েছে অর্ধ কোটির বেশি টাকা। ভবনটি ১২ জানুয়ারি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হবে।