বাঙালির প্রেরণার অন্যতম উৎস অমর একুশ। আর মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সুষ্ঠুভাবে পালনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করা হয়েছে।
রং করা হয়েছে মূল বেদিসহ সংলগ্ন এলাকা। রাস্তার পাশের দেয়ালে শোভা পাচ্ছে ভাষা আন্দোলনের নানা গান, কবিতা ও স্লোগান। দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন ও শ্রদ্ধা নিবেদনের উদ্দেশ্যে ভাবগম্ভীর পরিবেশ বজায় রাখার জন্য ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ঢাবি ভিসি অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান।
ড. আখতারুজ্জামান বুধবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পরিদর্শনে যান। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সাধারণ মানুষের পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীও আসবেন শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য। তাই আমরা সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি’।
সার্বিক প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করতে গিয়ে ভিসি বলেন, সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এখন শুধু আল্পনার কাজ চলছে, সব কর্মসূচি বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা চান তিনি।
ভিসি বলেন, এ দিবসের প্রধান সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। আর শিক্ষক সমিতির সভাপতি, সহসভাপতি ও শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক যুগ্ম সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবেন।
বুধবার রাতে শহীদ মিনার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রায় দুইশ স্বেচ্ছাসেবী আল্পনা আঁকছেন। ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে শহীদ মিনারের বেদি এবং এর আশপাশের স্থান। বিপুল পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়িত্ব পালন করছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী মোতহার হোসেন ভবনের সামনে র্যাব, পুলিশ ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে সিসিটিভির মাধ্যমে সমগ্র এলাকা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এদিন বেলা পৌনে ১১টার দিকে র্যাব সদস্যরা ডগ স্কোয়াড দিয়ে তল্লাশি চালিছেন। এ ছাড়াও ডিএমপির পক্ষ থেকে শহীদ মিনারে যাওয়ার রোডম্যাপ লাগানো হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এবং এর আশপাশের এলাকা ঘিরে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
ব্যারিকেডের ভেতরে প্রবেশের সময় সবাইকে তল্লাশি করা হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ডিএমপির নির্দেশিত ম্যাপ ফলো করতে সর্বসাধারণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
ঢাবির কর্মসূচি : ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে প্রভাতফেরি সহকারে আজিমপুর কবরস্থান হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গমন ও পুষ্পস্তবক অর্পণ।
বাদ জুমা অমর একুশে হলে শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত, বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদুল জামিয়া, সব হলের মসজিদ এবং বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকার মসজিদসহ অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে ভাষা শহীদদের রুহের শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত বা প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া ঢাবি সংগীত বিভাগের উদ্যোগে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় টিএসসি মিলনায়তনে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি : দুই দিনব্যাপী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে রয়েছে- একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ। সকাল সাড়ে ৬টায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবনসহ সারা দেশে সংগঠনের সব শাখা কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ এবং কালো পতাকা উত্তোলন।
সকাল ৭টায় কালো ব্যাজধারণ, প্রভাতফেরি সহকারে আজিমপুর কবরস্থানে ভাষা শহীদদের কবরে ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও শ্রদ্ধা নিবেদন (নিউ মার্কেটের দক্ষিণ গেট থেকে প্রভাতফেরি শুরু হবে)।
দ্বিতীয় দিন শনিবার মাতৃভাষা দিবসের আলোচনাসভার আয়োজন করবে আওয়ামী লীগ। বিকাল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে। দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভায় দেশবরেণ্য বুদ্ধিজীবী ও জাতীয় নেতৃবৃন্দ অংশ নেবেন।