মিজানুর রহমান খান। বাংলাদেশে সংবিধান ও আইন-আদালত বিষয়ক সাংবাদিকতার বাতিঘর। যাঁর সঙ্গে এক ঘণ্টা সময় কাটালে যে কেউ বুঝতে পারবেন বাংলাদেশসহ সারা দুনিয়ার সংবিধানের নানা ব্যাখ্যা ও আইন আদালত মাথায় নিয়ে ঘোরেন তিনি। বিশ্বের সব আলোচিত রায়, বিচারপতিদের ব্যতিক্রম সব ঘটনার খবর তাঁর ই-মেইলে চলে আসে ক্ষণে ক্ষণে। সেটা রাত তিনটেই হোক আর দুপুর ১২টাই হোক তার কাছে সময়টা সব সময়ই সমান। মেইল খুলে একনজর দেখা আর বাংলাদেশের ঘটনাবলীর সঙ্গে মিলিয়ে নেয়ায় কোনো দেরি নেই।
১৯৯৫ সালের মার্চ মাসে লেখেন, ‘সংবিধান ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিতর্ক’, যেটি দেশের অনেকগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য রেফারেন্স হিসেবে পাঠ্য হয়। মাসের পর মাস যুক্তরাষ্ট্রের মহাফেজখানা থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, ১৯৭৫-এর নির্মম হত্যাকাণ্ড ও পরবর্তী ঘটনাবলীর তথ্য-প্রমাণ তুলে আনেন। জাতিরপিতাকে হত্যার ওপর এ যাবতকালের একমাত্র সর্বজনগ্রহণযোগ্য বই ‘মার্কিন দলিলে মুজিব হত্যাকাণ্ড’ লিখে বুদ্ধিজীবী মহলে চিরস্থায়ী আসন করে নেন। ১৯৭১: আমেরিকার গোপণ দলিল ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা: এক অশনি সংকেত তাঁর উল্লেখযোগ্য বই। নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথককরণের লড়াইয়ের ময়দানের একমাত্র সাংবাদিক তিনি। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার জটিলতা ও সমুদ্র আইন বিষয়ক তথ্য ভাণ্ডার একমাত্র তারই।
ঝালকাঠীর নলছিটির সন্তান মিজানুর রহমান খান। হিসাববিজ্ঞানে অনার্সসহ মাস্টার্স কিন্তু চিন্তা করেন, লেখেন-থাকেন-ঘুমান, আইন ও সংবিধান নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনশাস্ত্র পড়ান সাংবাদিকতার ফাঁকে ফাঁকে।
মাত্র ১৪ বছর বয়সে এসএসসি পাস করার পরই বরিশালের স্থানীয় পত্রিকায় সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি। সহপাঠীদের অনুরোধে একাধিক সরকারি চাকরির পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। প্রতিটি পরীক্ষায় উর্ত্তীর্ণ হয়েও যোগ দেননি। সহপাঠীরা সবাই যোগ দিয়েছেন।
মিজানুর রহমান খান বহুবছর ধরে দেশের প্রধান দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক। তার আগে গোলাম সারওয়ারের সঙ্গে দৈনিক সমকালের প্রতিষ্ঠাকালীন উপসম্পাদক। তারও আগের দৈনিক যুগান্তরের উপ-সম্পাদক। তারও আগে ইংরেজি দৈনিক নিউনেশন ও দৈনিক মানবজমিনের বিশেষ প্রতিবেদক থাকার আগে ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত দৈনিক মুক্তকন্ঠের কূ্টনৈতিক প্রতিবেদক ছিলেন। ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে নতুন প্রজন্মের নতুন ধারার পত্রিকা দৈনিক বাংলাবাজারের প্রতিষ্ঠাকালীন রিপোর্টার ও পরে একই পত্রিকার যথাক্রমে প্রধান প্রতিবেদক ও বার্তা সম্পাদক পদে ছিলেন। তারও আগে দৈনিক খবর পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টর।
ভারতের প্রভাবশালী আনন্দবাজার পত্রিকা গ্রুপের প্রবাসী আনন্দবাজার পত্রিকার ঢাকাস্থ নিয়মিত প্রদায়ক এবং লন্ডনের ইস্টার্ন আই পত্রিকার প্রদায়ক ছিলেন।
জানামতে, ১৪ বছর পূর্ণ না হলে এসএসসি পরীক্ষায় বসা যেত না ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে। ১৪ বছর বয়স হতে ঘাটতি ছিলো কয়েকমাস। হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক সেই ঘাটতি পূরণ করে জন্মদিন বসিয়ে দিয়েছেন। আজ ৩১ অক্টোবর তাঁর এসএসসির সনদ অনুযায়ী জন্মদিন।
দৈনিক শিক্ষার পক্ষ থেকে শুভ জন্মদিন।