আপনি যদি স্নাতকোত্তর শেষ করা কোনো শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসা করেন, এখন থাকবে কোথায়? বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর উত্তর হবে—ঢাকায়। এর কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তারা ঢাকায় থাকার উপকারিতা বর্ণনা করবে। অধিকাংশ চাকরির নিয়োগ পরীক্ষাগুলো হয়ে থাকে ঢাকায়, সেসব পরীক্ষায় ঢাকার বাইরে কিংবা প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে এসে অংশগ্রহণ করা অনেকটা পীড়াদায়ক হয়ে ওঠে। তাছাড়া বেসরকারি সেক্টরে কাজের আশায় অনেকের পছন্দের তালিকায় থাকে ঢাকা। আবার বেশিরভাগই ২/৩ বছর ঢাকায় থাকেন চাকরির পড়াশোনা বা পরীক্ষার জন্য। এটি ঢাকায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির মূল কারণ না হলেও একটি কারণ বলা যেতে পারে। চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার নীতি-নির্ধারকরা কখনো কি ভেবেছেন—একজন শিক্ষার্থী তার পড়াশোনা শেষ করে কেন ঢাকামুখী হয়।
এ কারণে স্নাতকোত্তর শেষ করা বা প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা করাদের ঢাকামুখী স্রোত থামাতে হলে সকল নিয়োগ পরীক্ষা বিভাগীয় পর্যায়ে নেওয়াটাই সুবিধাজনক। তাছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ নারী শিক্ষার্থী এবং প্রতিবন্ধী মানুষ যাদের ঢাকা শহরে যাওয়ার পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। সেখানে তাদের নেই কোনো আত্মীয় বা পরিচিতজন। আবার হোটেলে থাকার সামর্থ্য নেই অনেকের এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী মানুষ যাঁরা একা ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারেন না তাঁদের সহযোগী হিসেবে আরো দু-একজন এলে থাকা-খাওয়ার খরচ বেড়ে যায়। এরূপ পরিস্থিতিতে অনেক অভিভাবক সন্তানদের একা দূরে বিশেষত ঢাকার মতো জনবহুল শহরে পাঠাতে সাহস পান না। এমনিতেই পরীক্ষার্থীদের মধ্যে অচেনা-অজানা আশঙ্কা, এক ধরনের অনিশ্চয়তা আরো মানসিক অস্থিরতাকে বাড়িয়ে তোলে। যা তাদের মানসিকভাবে স্থির থেকে চাকরি পরীক্ষাটিও ভালোভাবে দেওয়া সম্ভবপর হয় না। সেক্ষেত্রে তাঁরা ঢাকা শহরে গিয়ে চাকরির পরীক্ষা দেবেন কিভাবে?
ঢাকায় গিয়ে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া চরম দুর্ভোগের অন্যতম একটি দৃষ্টান্ত। তাই এ দুর্ভোগ বন্ধ করতে বিভাগীয় শহরে পরীক্ষার বন্দোবস্ত করাটাই হবে সহজ একটি সমাধান। অথচ বিভাগীয় পর্যায়ে যে একদম নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে না তা নয়। বিসিএস, নিবন্ধন পরীক্ষাসহ বিভিন্ন শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষাগুলো বিভাগীয় এবং জেলা পর্যায়ে নেওয়া হচ্ছে। তবে সমস্যা হলো, ব্যাংকিং সেক্টর ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু সেক্টরের নিয়োগ পরীক্ষাগুলো সাধারণত ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। ফলে সারা দেশের নিয়োগ প্রত্যাশীদের ঢাকায় আসতে হয়। তাহলে অন্যান্য পরীক্ষাও একইভাবে নেওয়ার ব্যবস্থা কি করা যায় না? যাঁরা নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেন তাঁদের অধিকাংশই বেকার। রাষ্ট্রের উচিত হবে অধিক সংখ্যক জনসমষ্টির প্রতি আরো বেশি মনোযোগ দেওয়া। নিয়োগ পরীক্ষাগুলো বিভাগীয় পর্যায়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা। অথচ তা করা হচ্ছে না।
পাশাপাশি আমরা লক্ষ করছি যে অনেক সময় প্রশ্নপত্র ফাঁস হলে পরীক্ষা বাতিল হয়। তখন বাড়ে সীমাহীন বিড়ম্বনা। আবার নতুন করে ঢাকায় এসে পরীক্ষা দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে হয়। এ যেন মরার ওপর খাড়ার ঘা। তাই আমরা মনে করি, নিয়োগ পরীক্ষাগুলো বিভাগীয় কিংবা জেলা পর্যায়ে নেওয়া হলে সুবিধা হবে। এতে লাখো চাকরিপ্রার্থীর ভোগান্তি ও কষ্ট অনেকাংশে লাঘব হবে। বেকারত্ব আমাদের দেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা। একজন বেকার যার কোনো উপার্জন নেই; তাকে ১০০-৭০০ টাকা পর্যন্ত ব্যাংক ড্রাফট, পে-অর্ডার ইত্যাদির মাধ্যমে চাকরির জন্য মেধা মূল্যায়ন ফি দিতে হয়। তাই ব্যাংকের মতো এই মেধা মূল্যায়ন ফি নেওয়া বন্ধ করতে হবে, পাশাপাশি বিভাগীয় পর্যায়ে সকল নিয়োগ পরীক্ষা নিতে হবে নিয়োগ কর্তৃপক্ষকে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়