সঠিক পদ্ধতিতে পরীক্ষা না হলে বাড়বে ভোগান্তি - দৈনিকশিক্ষা

সঠিক পদ্ধতিতে পরীক্ষা না হলে বাড়বে ভোগান্তি

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বিশ্ব জুড়ে এক ভয়াবহ মহামারি চলছে। গত ডিসেম্বরে চীনের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়া কোভিড-১৯ নামের এক নতুন করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে সারা বিশ্ব যেন থমকে গেছে। এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো টিকা নেই, নেই কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিত্সা। কাজেই এ রোগের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণের মূল চালিকাশক্তি হলো ল্যাব টেস্ট। আর টেস্টের ফলাফলের ভিত্তিতে রোগীকে কোয়ারেন্টাইন করার মাধ্যমে রোগের বিস্তার রোধ করা। সোমবার (৩০ মার্চ) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও জানা যায়, তাহলে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত করার সঠিক পদ্ধতি কী? বাংলাদেশের আর্থসামাজিক বাস্তবতায় কোন ধরনের টেস্ট উপযুক্ত ও প্রয়োগযোগ্য? করোনা ভাইরাস শনাক্ত করার সরাসরি পদ্ধতি হলো ভাইরাসের ‘আরএনএ’ বা প্রোটিন কোট, যাকে ‘অ্যান্টিজেন’ বলা হয়, তা পরীক্ষা করে দেখা। আর ভাইরাসটি যেহেতু আমাদের শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়, একমাত্র শ্বাসতন্ত্রীয় নমুনা যেমন ন্যাসোফেরিঞ্জিয়াল সোয়াব নিয়ে টেস্ট করার মাধ্যমেই ভাইরাসের আরএনএ বা অ্যান্টিজেন শনাক্ত করা যায়, রক্তের নমুনা টেস্ট করে নয়। আবার করোনা ভাইরাস শনাক্ত করার আরেকটা পরোক্ষ ও বিকল্প পদ্ধতি হলো রোগীর রক্তে ভাইরাসের বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি শনাক্ত করা।

ডায়াগনস্টিক টেস্টের কার্যকারিতা নির্ভর করে টেস্টের সেনসিটিভিটি ও স্পেসিফিসিটির ওপর। এর মানে হলো, টেস্টটি ভাইরাস শনাক্ত করতে কতটুকু সংবেদনশীল এবং কতটুকু সুনির্দিষ্ট? সেনসিটিভিটি কম হলে ‘ফলস নেগেটিভ’ রেজাল্ট বেশি হবে আর স্পেসিফিসিটি কম হলে ‘ফলস পজিটিভ’ রেজাল্ট বেশি হবে। অর্থাত্ রোগের ভুল ডায়াগনোসিস হবে। আরটি-পিসিআরের মাধ্যমে ভাইরাসের ‘আরএনএ’ শনাক্ত করার প্রক্রিয়া হলো সবচেয়ে সেনসিটিভ ও স্পেসিফিক পদ্ধতি। করোনা ভাইরাস শনাক্ত করার গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে আরটি-পিসিআরকেই ধরা হয়। বিশ্বে তাই লাখ লাখ আরটি-পিসিআর পরীক্ষা চলছে করোনার সংক্রমণ মোকাবিলায়।

অ্যান্টিবডিভিত্তিক টেস্টের সমস্যা হলো ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হতে একটু সময় লাগে এবং ঠিক কখন আমাদের শরীরে এই অ্যান্টিবডিগুলো তৈরি হয়, তা সব ক্ষেত্রে এক নয়। যেমন করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির রোগের লক্ষণ দেখা দেওয়ার পরেও হয়তো টেস্টে কোনো অ্যান্টিবডি পাওয়া যাবে না। কারণ খুব তাড়াতাড়ি টেস্ট করা হয়ে গেছে। রোগী জানবে তার টেস্ট রেজাল্ট নেগেটিভ, কাজেই রোগী নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াবে এবং রোগ ছড়িয়ে যাবে। আবার খুব দেরিতে টেস্ট করা হলে টেস্ট পজিটিভ হলেও রোগ আছে বলে নিশ্চিত করে বলা যাবে না। কারণ রোগ হয়তো ততদিনে ভালো হয়ে গেছে। অন্যদিকে অ্যান্টিজেন টেস্টের ক্ষেত্রে এ সমস্যা না থাকলেও ফলস পজিটিভ ও ফলস নেগেটিভ রেজাল্টের সমস্যা থেকে মুক্ত নয়। যথাযথ সতর্কতা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার ভিত্তিতে তৈরি করা না হলে ভুল ডায়াগনোসিসের যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে।

বর্তমানে করোনা ভাইরাস নিয়ে অ্যান্টিজেন বা অ্যান্টিবডিভিত্তিক শত রকমের টেস্ট কিট বের হচ্ছে, বিশেষ করে চীন থেকে। আমাদের দেশেও এ ধরনের টেস্ট কিট তৈরি করা নিয়ে চলছে অনেক জল্পনা-কল্পনা ও প্রতিশ্রুতি। এসব টেস্ট কিটের কার্যকারিতা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। কারণ এসব টেস্ট কিট যথেষ্ট পরিমাণ পরীক্ষা করে বের করা হচ্ছে না। তাড়াহুড়া করে বাজারে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। যেমন সম্প্রতি স্পেন সরকার চীন থেকে এ রকম তিন লক্ষাধিক টেস্ট কিট অর্ডার দেয়। ৮০ শতাংশ সঠিকত্বের কথা বলে বিক্রি করা এসব টেস্ট কিট স্পেনে পরীক্ষা করে দেখা গেছে, এর সঠিকত্ব মাত্র ৩০ ভাগ!

কাজেই এখন পর্যন্ত পরীক্ষিত সত্য হলো আরটি-পিসিআরের মাধ্যমেই করোনা সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য ফল পাওয়া যাবে। আরটি-পিসিআর যত ব্যয়বহুল বলে ভাবা হচ্ছে, তত নয়। যদি আরটি-পিসিআরের কমার্শিয়াল রেডি কিট কেনা হয়, তাহলে তো ব্যয়বহুল হবেই। কিন্তু করোনার আরটি-পিসিআর টেস্ট করার জন্য রেডি কিটের তো প্রয়োজনই নেই। খুব সহজেই এই টেস্ট ল্যাবে প্রতিষ্ঠা করা যায়। সরকারের সহযোগিতা পেলে এই টেস্টের খরচ ৮০০ টাকার নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব। এমনকি উন্নত ধনী দেশগুলোতেও যে লাখ লাখ টেস্ট করা হচ্ছে, তা তো কমার্শিয়াল টেস্ট কিট দিয়ে নয়, বরং ল্যাবে তৈরি করা কম খরচের টেস্ট কিট দিয়ে। জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এসব টেস্ট কিট ল্যাবে তৈরি করার প্রয়োজনীয় তথ্য ওয়েবসাইটে দিয়ে রেখেছে।

এরপর প্রশ্ন উঠতে পারে, বাংলাদেশে কি এসব টেস্ট করার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আছে? দক্ষতা আছে? অবশ্যই রয়েছে। দেশের রিসার্চ ল্যাবগুলোতে কি গোটা দশেক আরটি-পিসিআর মেশিন খুঁজে পাওয়া যাবে না? আর দক্ষতার কথা যদি বলা হয়, বাংলদেশে রিসার্চ ল্যাবগুলোতে কি প্রতিনিয়ত আরটি-পিসিআর করা হচ্ছে না? সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর যদি এই সিম্পল টেস্ট ডেভেলপ করার ক্ষমতা না থাকে, আইসিডিডিআরবি বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর কাছে কেন সাহায্য চাওয়া হচ্ছে না? এই পরীক্ষা পদ্ধতির কোনো গোপন রেসিপি তো নেই। বিস্তারিত পদ্ধতি দেওয়া আছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটে। ইন্টারনেটে প্রকাশিত গবেষণাপত্র আছে। অনেক প্রবাসী বিশেষজ্ঞ আছেন, যারা চাইলেই বিস্তারিত পদ্ধতি দেওয়ার জন্য বা এ বিষয়ে যে কোনো পরামর্শ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছেন।

আরটি-পিসিআরকে সুলভ ও সহজলভ্য করে ব্যাপক হারে টেস্ট করার বদলে অপরীক্ষিত বা স্বল্প পরীক্ষিত অ্যান্টিবডি-অ্যান্টিজেনভিত্তিক টেস্টের ওপর নির্ভর করলে এসব টেস্টের ফল মানুষের উপকারের বদলে অযথা ভোগান্তির কারণ হবে।

লেখক : ড. রুবায়েত হাসান, কাতার প্রবাসী অণুজীববিজ্ঞানী।

অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039939880371094