সফর বা ভ্রমণ আত্মতৃপ্তি যেমন যোগায় ঠিক তেমনিভাবে খুলে দেয় জ্ঞানের দুয়ার। চিনতে শেখায় নিজের অস্তিত্ব। বাঁচতে শেখায় নতুন করে। একই সঙ্গে হৃদয়ে গেঁথে দেয় দেশপ্রেমের বীজ। প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন করে।
তবে বর্তমানের শিক্ষাসফরগুলোকে উচ্চমানের কোনো ডিজে পার্টির সঙ্গে তুলনা করলে অত্যুক্তি হবে না। কতটুকু শিক্ষামূলক হয়! চিন্তার বিষয় এটি। সফরে অংশগ্রহণকারী অধিকাংশের সাংস্কৃতিক সুধা অবাক করার মতো। কতটুকু দেশপ্রেমের নিদর্শন এসব সংস্কৃতি চর্চা! বাংলা গান তো অস্তিত্ব সংকটে মুখ থুবড়ে পড়ে। উচ্চশব্দে হিন্দি গান, নিম্নরুচির পরিচায়ক শব্দের ব্যবহারে বাংলা গান, অহেতুক চিলচিৎকার—নিজের সৌন্দর্যের প্রদর্শনীতে শিক্ষাসফর পরিণত হয় বিকৃত এক মহড়ায়।
যেহেতু নামকরণ হচ্ছে শিক্ষাসফর, তাই এইসব সফরকে অন্তরের পবিত্র পরিতৃপ্তি সাধন করে কীভাবে শিক্ষামূলক করা যায়—শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর তা চিন্তা করা একান্ত কর্তব্য হয়ে গিয়েছে। কিছুটা চিন্তা আমরা এভাবেও করতে পারি—
প্রথমত, শিক্ষা সফরগুলো যেহেতু অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক হয় সেহেতু সফরের ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক স্থান বা প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যমণ্ডিত জায়গাগুলো বেছে নেওয়া। যাতে দেশের ইতিহাস সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি হয় এবং প্রাকৃতিক পরিবেশকে ভালোবাসার মধ্য দিয়ে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে পারে।
দ্বিতীয়ত, সফরকালীন দেশীয় বা স্থানীয় লোকজ সংস্কৃতির চর্চার জন্য শিক্ষকদের পর্যবেক্ষণ বাড়ানো। স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বয়স বিবেচনায় রেখে সংস্কৃতি চর্চা করা। বিশেষ করে দেশাত্মবোধক গানকে অনুষঙ্গ বানানো। এতে করে বিদেশি বিকৃত সংস্কৃতির হাত থেকে মুক্তি মিলবে।
তৃতীয়ত, শিক্ষাসফর যে ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কোনো পার্টির অংশ নয় বরং এটাও যে ব্যবহারিক ও প্রয়োগমূলক শিক্ষার অংশ এই বিষয়ে স্থায়ী সচেতনতা তৈরি করে এটি শিক্ষার অংশ—এই বিষয়টি প্রচলিত নিয়মে পরিণত করা।
চতুর্থত, সামাজিক মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয়ভাবে দেশের বিভিন্ন ইতিহাস-ঐতিহ্য, প্রাকৃতিক সম্পদ—সৌন্দর্য ইত্যাদির বর্ণনা দিয়ে ডকুমেন্টারির ব্যাপক প্রচার। শিক্ষার্থীদের জন্য এসবে কী শিক্ষামূলক দিক রয়েছে তা তুলে ধরা।
শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর একান্ত সদিচ্ছাই পারে শিক্ষাসফরকে প্রকৃত শিক্ষামূলক বিষয়ে পরিণত করতে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
সৌজন্যে: ইত্তেফাক