জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের 'আলসেমিতে' ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন নতুন এমপিওভুক্ত কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকরা। কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে এমপিওভুক্তির আবেদন করতে শিক্ষকদের সনদ যাচাই প্রতিবেদন প্রয়োজন। তাদের অভিযোগ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং বোর্ডগুলো থেকে সনদ যাচাই বা ভেরিফিকেশন দেয়া হলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তা দিচ্ছে না। এজন্য এমপিওভুক্তির আবেদন করতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে কারিগরি শিক্ষকদের। সনদ যাচাই প্রতিবেদন ছাড়া যারা আবেদন করেছেন, তারা এমপিওভুক্ত হতে পারবেন কিনা তা নিয়েও শঙ্কা কাজ করছে শিক্ষকদের মনে।
গত ৩০ এপ্রিল নতুন এমপিওভুক্ত মাদরাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত ভাবে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ৪৮৩টি কারিগরি প্রতিষ্ঠান চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়েছে। এরপর প্রথম দফায় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির আবেদন নেয়া হলেও মাত্র ১২১ জন শিক্ষক এমপিওভুক্ত হতে পারেন। পরে ৩১ মে থেকে ১৫ জুন ২য় দফায় হার্ডকপিতে শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির আবেদন গ্রহণ করে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর।
সারাদেশে শিক্ষকরা টেলিফোন এবং ইমেইলে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর এমপিওভুক্তির আবেদন করতে সার্টিফিকেট ভেরিফিকেশন বা সনদ যাচাই প্রতিবেদন আবশ্যক। কিন্তু করোনা ভাইরাসের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং বোর্ডগুলো থেকে সনদ যাচাই প্রতিবেদন সংগ্রহ করা গেল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা তা পারছেন না। ফলে, সনদ যাচাই প্রতিবেদন ছাড়াই এমপিওভুক্তির আবেদন করছেন তারা। সনদ যাচাই প্রতিবেদন ছাড়া এমপিওভুক্ত হতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
আরও পড়ুন : সনদ যাচাই জটিলতায় এমপিওভুক্তি আটকে যাওয়া শিক্ষকের আত্মহত্যা
শিক্ষকরা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে আরও বলেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের জন্য সবকিছু বন্ধ থাকলেও জুন মাসের শুরু থেকে সীমিত পরিষদে সরকারি অফিস খুলেছে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও বোর্ডগুলো সীমিত পরিসরে এরমধ্যেই সনদ ভেরিফিকেশন প্রতিবেদন দিয়েছে। কিন্তু আলসেমি করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তারা সনদ যাচাই করে দিচ্ছেন না। এতে আমরা ভোগান্তিতে পড়ছি।
শিক্ষকরা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বেতন-ভাতা পাইনা। শিক্ষামন্ত্রী ডাক্তার দীপু মনি বলেছেন ঈদের আগেই নতুন এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বকেয়া পরিশোধ করতে। কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তাদের আলসেমির জন্য শিক্ষকরা বকেয়া ভাতা এখনো পাবেন না। করোনা কাল শেষ হলে সনদ যাচাই প্রতিবেদন সংগ্রহ করে অধিদপ্তরে জমা দিলে তবেই শিক্ষকরা বেতন-ভাতা পাবেন। তাই দীর্ঘদিন কষ্ট একা শিক্ষকদের মুখে এখন হাসি ফোটার কথা থাকলেও তা হচ্ছেনা।
এদিকে, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, সনদ যাচাই প্রতিবেদন ছাড়া শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির আবেদন নেয়া সম্ভব নয়। এই প্রতিবেদন ছাড়া আবেদন করে শিক্ষকরা এখন এমপিওভুক্তির সুপারিশ পেলেও প্রতিবেদন জমা দেয়ার পরেই এমপিওভুক্ত হতে পারবেন।
কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর এমপিও শাখার সহকারী পরিচালক জহুরুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, সনদ যাচাই প্রতিবেদন নিয়ে আগেও আমাদের বাজে অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাই আমরা যাচাই প্রতিবেদন ছাড়া শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করতে পারছিনা।
তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে আরও বলেন, তবে করোনা কালে শিক্ষকদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর তাদের আবেদন গ্রহণ করছে। যারা সনদ যাচাই প্রতিবেদন ছাড়া এমপিওভুক্তির আবেদন করেছেন তাদের আবেদন বিবেচনা করা হবে। তবে এ মুহূর্তে তারা এমপিওভুক্ত হতে পারবেন না, শুধু এমপিওভুক্তির সুপারিশ পাবেন। পরবর্তীতে সনদ যাচাই প্রতিবেদন জমা দিয়ে তারা এমপিওভুক্ত হবেন এবং বকেয়া বেতন-ভাতা তুলতে পারবেন।
এদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের জন্য তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কাজ বন্ধ রেখেছে তাই সনদ যাচাই সম্ভব হচ্ছে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. বদরুজ্জামান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, শিক্ষকরা আমাদের কাছে সনদ যাচাই করে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন। কিন্তু করোনা ভাইরাস সংক্রমণের জন্য আমরা তাদের সনদ যাচাই করতে পারিনি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ যাচাই প্রক্রিয়াটি কয়েকটি শাখার সাথে সংশ্লিষ্ট। ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে সনদ যাচাই এর আবেদন করতে হয়। কয়েকটি শাখা হয়ে তা পরীক্ষা শাখা আসে। তাই, এ মুহূর্তে শিক্ষকদের সনদ যাচাই করে দেয়া যাচ্ছে না। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শেষ হলে তাদের সনদ যাচাই বা ভেরিফিকেশন দেয়া হবে।
অন্যান্য বোর্ডও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যাচাই প্রতিবেদন দিচ্ছে এমন তথ্য উপস্থাপন করা হলে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গাজীপুর অবস্থিত। গাজীপুরে সংক্রমণ অনেক বেশি। আমরা কিছু কাজে সীমিত পরিসরে কয়েকটি অফিস খুলেছিলাম। কিন্তু সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় তা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছি। 'গাজীপুর রেডজোনের অন্তর্গত', যোগ করেন এ কর্মকর্তা।
তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে আরও বলেন, আমরা কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের সাথে কথা বলেছি। তারা আমাদের জানিয়েছেন, শিক্ষকদের আবেদন নেয়া হচ্ছে। ভাইরাস সংক্রমণ শেষ হলে আমরা শিক্ষকদের যাচাই প্রতিবেদন দেবো। তখন তারা এমপিওভুক্ত হতে পারবেন।