প্রশ্নবিদ্ধ শিক্ষা সনদ ও জালিয়াতি করে নিয়োগ পাওয়ার অভিযোগে রাজধানীর ঢাকা স্টেট কলেজের অধ্যক্ষ দিলওয়ারা ইসলামের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। অভিযোগ তদন্তে ৩ জন কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। রোববার (১২ মে) অধিদপ্তরের জারি করা এক অদেশে এ তথ্য জানা যায়।
জানা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক অধ্যাপক মো. মনোয়ার হোসেন, উপপরিচালক কাজী নূরে আলম সিদ্দিকী এবং অধিদপ্তরের আইন কর্মকর্তা মো. আল আমিন সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ সনদধারী অধ্যক্ষ দিলওয়ারা ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে এ তিন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর।
জানা গেছে, বিভ্রান্তিকর তথ্যে-উপাত্তে ঠাসা ঢাকা স্টেট কলেজের অধ্যক্ষ দিলওয়ারা ইসলামের শিক্ষা সনদ। আর এই সনদ দিয়েই তিনি দিব্যি চাকরি করে যাচ্ছেন বছরের পর বছর। এমনকি বয়স ৬০ বছর হওয়ার পর সম্পূর্ণ অবৈধভাবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাগিয়ে চাকরি করছেন। ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে বিএনপি সরকারের আমলে ক্ষমতা খাটিয়ে প্রভাষক পদে নিয়োগ পেয়েছেন তিনি। জালিয়াতির মাধ্যমে দিলওয়ারা ইসলাম নিয়োগ পেয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। নতুন ইনডেক্সে অবৈধভাবে এমপিওভুক্ত হওয়ারও অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে গত ১৭ এপ্রিল প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় দৈনিক শিক্ষায়। দিলাওয়ারার শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদগুলোর তথ্যের অসঙ্গতি তদন্ত করে দেখা ও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল দাবি করেছেন কয়েকজন অভিভাবক। স্থানীয় সাংসদ সাদেক খানের কাছে এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন অভিভাবকরা।
অভিযোগে বলা হয়, চাকরির জন্য জমা দেয়া শিক্ষা সনদগুলোতে রয়েছে বিভ্রান্তিকর তথ্য। পাকিস্তানের সারাগোদা শিক্ষা বোর্ড থেকে ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে এসএসসি ও ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে এইএচএসি পাস দেখানো হয়। কিন্তু কোন কলেজ থেকে পাস করেছেন তার উল্লেখ নেই। দিলাওয়ারার জন্ম ১ অক্টোবর ১৯৫৬ এবং এসএসসি পাস ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে। সে হিসেবে ১৩ বছর বয়সে এসএসসি পাস করেছেন; যা প্রশ্নবিদ্ধ। অভিযোগে বলা হয়, ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে ইডেন কলেজ থেকে নিয়মিত ছাত্রী হিসেবে বিএ পাস করেন। যা সম্ভব নয়। কারণ, উচ্চ মাধ্যমিকের পর ৭-৮ বছর শিক্ষা বিরতি থাকলে নিয়মিত ছাত্রী হওয়ার কথা নয়। উচ্চ মাধ্যমিক পাসের তথ্য গোপন করে তিনি ইডেন কলেজে ভর্তি হয়েছেন বলে সন্দেহ অভিযোগকারীর।
আরও পড়ুন: ঢাকা স্টেট কলেজ অধ্যক্ষের সনদপত্র-এমপিওতে গলদ!
১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ঢাকা স্টেট কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। প্রভাব খাটিয়ে ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন অধ্যক্ষকে সরিয়ে প্রথমে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও পরে নিয়মিত অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন তিনি। তার নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়েও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে তাকে চূড়ান্ত বরখাস্ত করা হয়। কিন্তু ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে দেশে ফিরে অধ্যক্ষ পদ ফিরে পাওয়ার জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪২তম সভায় দিলাওয়ারাকে চাকরিতে পুনর্বহালের বিষয়ে কিছুই করণীয় নেই মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। অভিযোগে আরও বলা হয়, ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের জুনে তিনি জোরপূর্বক অধ্যক্ষ পদে নিযুক্ত এবং অবৈধভাবে নতুন ইনডেক্স নিয়ে এমপিওভুক্ত হন।