সন্তানের হাতে মোবাইল ফোন নয়, বই তুলে দিন - দৈনিকশিক্ষা

সন্তানের হাতে মোবাইল ফোন নয়, বই তুলে দিন

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

আমাদের তরুণ প্রজন্মকে ইন্টারনেট প্রযুক্তি মাদকের মতো আচ্ছন্ন করে রেখেছে। দিনদিন ইন্টারনেট প্রযুক্তির প্রভূত উন্নতির ফলে আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা যেমন আগের চেয়ে বহুলাংশে উন্নত হচ্ছে, তেমনি আমাদের তরুণ প্রজন্ম মাদকে আসক্ত হওয়ার মতো ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউবে আসক্ত হয়ে পড়ছে। তারা ফেসবুক ও ম্যাসেঞ্জারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় ব্যয় করছে। মোবাইল ফোন নিয়ে সারাদিন পড়ে থাকার ফলে নতুন প্রজন্ম হতাশা এবং মানসিক বিকারগ্রস্ততার মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠছে। সোমবার (৭ অক্টোবর) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও বলা হয়, অতীতে তরুণরা সুন্দর ঝলমলে শৈশব কাটিয়েছে। বিকালে মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে খেলার মাঠে গিয়ে পৃথিবী জয়ের আনন্দ অনুভব করেছে। সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে বই নিয়ে টেবিলে বসে পড়েছে। আর বর্তমান তরুণদের হাতে মোবাইল। বর্তমান প্রজন্ম শারীরিক গঠন ও মানসিক প্রশান্তির মধ্যে বেড়ে ওঠার সুযোগ হারিয়ে ফেলেছে।

বর্তমানে আমাদের সমাজের মোটামুটি সবাই প্রযুক্তিতে আসক্ত। বাচ্চাদের আসক্তি গেইম-কার্টুনের প্রতি, তরুণ ও যুবকদের আগ্রহ ফেসবুক, খেলা, সিনেমা, অনলাইননির্ভর গেইম প্রভৃতি।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, অল্পবয়সী ছেলেমেয়েরা দিনে পাঁচ থেকে আট ঘণ্টা ডিজিটাল যন্ত্র নিয়ে মেতে থাকছে। হাতে বই নিয়ে বসা তো দূরের কথা বাইরে বেড়াতে যাওয়া, খেলাধুলা করা, মুখোমুখি বসে আড্ডা দেওয়া ইত্যাদি সব ধরনের অ্যাকশনে আগ্রহ কমে যাচ্ছে।

মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস তার দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত মোবাইল ব্যবহার করতে দেননি। আমেরিকার এক রোবটিকস ও ড্রোন কোম্পানির প্রধান নির্বাহী ক্রিস অ্যান্ডারসন বলেন, আমরা ভেবেছিলাম, এই প্রযুক্তি আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারব। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, এটা আমাদের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। এটা সরাসরি চলে যাচ্ছে বিকাশমান মস্তিষ্কের প্লেজার সেন্টারগুলোতে। সাধারণ পিতা-মাতার পক্ষে ব্যাপারটা বুঝতে পারা একেবারেই অসম্ভব। ফেসবুকের প্রথম চেয়ারম্যান শন পার্কার ফেসবুক ছেড়ে দেওয়ার পরে ফেসবুক সম্পর্কে নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেছিলেন, এই যে ক্ষণিক ডোপামিন-তাড়িত ফিডব্যাক লুপস আমরা তৈরি করেছি, এটা আমাদের সমাজের স্বাভাবিক সক্রিয়তা নষ্ট করে দিচ্ছে।

বর্তমান তরুণ প্রজন্মকে এর থেকে উত্তরণের উপায় হলো তাদেরকে বইমুখী করতে হবে। ছোট্ট সন্তানদের সামনে কখনো ফোন বের করা যাবে না। ওরা যখন ফোন দেখবে না, তখন এর প্রতি আকর্ষণও অনুভব করবে না। বাচ্চারা সাধারণত কার্টুন দেখার জন্য ও গেইম খেলার জন্য মোবাইলের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে। এই বস্তুসহ টিভি-সিনেমা প্রভৃতি থেকে দূরে রাখতে পারলেই তাদের শৈশব ঝলমলে হয়ে উঠবে। ডিভাইস বা ঘরে বন্দি থাকার উপকরণ না পেয়ে তারা বাইরে যেতে উসখুস করবে এবং খেলাধুলা করে, আলো-বাতাস গায়ে মেখে চমত্কার গড়ন ও মানসিকতার অধিকারী হবে। নির্দিষ্ট বয়সের আগে সন্তানের হাতে মোবাইল তুলে না দিয়ে বই তুলে দিন। একটি সুন্দর বই হচ্ছে একটি রহস্যময় সুন্দর ভুবনের দরজা। প্রতিটি পৃষ্ঠা আপনার সন্তানকে সাহায্য করবে রহস্যের জট খুলে কাহিনির গভীরতায় ঢুকতে, শেখায় জীবনবোধ, সংগ্রাম, অনুপ্রেরণা। বই আপনার সন্তানকে নিয়ে যাবে সুদূর অতীতে এবং টাইম মেশিন ছাড়াই হাজার হাজার বছর সামনের ভবিষ্যতে।

বই পড়লে জ্ঞান বৃদ্ধি পাবে—সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু আপনার সন্তানের শরীর সুস্থ রাখতেও বই পড়ার অভ্যাস দারুণভাবে সাহায্য করে। তাই তো চিকিত্সক নিয়মিত এক ঘণ্টা বই পড়তে পরামর্শ দিয়ে থাকে। এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, আজকের যুগে যেসব রোগে নতুন প্রজন্ম বেশি মাত্রায় ভুগছে তার বেশির ভাগ এর সঙ্গে মানসিক চাপের সরাসরি যোগ রয়েছে। আর বই পড়ার অভ্যাস এমন ধরনের সমস্যাকে দূর করতে সহায়তা করে। সেই সঙ্গে হার্টের রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক প্রভৃতি রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস করে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস করলে ব্রেনের কর্মক্ষমতা বাড়তে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবে মস্তিষ্কের একটি বিশাল অংশের ক্ষমতা এটতা বৃদ্ধি পায় যে, বুদ্ধির ধারও বাড়তে শুরু করে। তাই আসুন সন্তানের হাতে মোবাইল দেওয়ার আগে বই তুলে দিই। প্রযুক্তিতে আসক্ত হওয়ার আগেই বইয়ের প্রতি আসক্তি সৃষ্টি করি। তাহলেই আপনার সন্তান সত্, দক্ষ, আদর্শ ও দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে উঠবে।

আরিফ ইকবাল নূর : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0073261260986328