সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে দুটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ - দৈনিকশিক্ষা

সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে দুটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

বিভাষ বাড়ৈ |

সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার অংশ হিসেবে ব্যতিক্রমী দুটি উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে সরকার, যার একটির মাধ্যমে মূলধারায় শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ পাবে প্রতিবন্ধী শিশুরাও। আর অন্য একটি উদ্যোগের মাধ্যমে রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের পাঁচ উপজেলার দুর্গম এলাকায় নতুন পাঁচটি অত্যাধুনিক আবাসিক সরকারী কলেজ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, শীঘ্রই এ দুটি উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার। সে লক্ষ্যে কাজও শুরু হয়েছে। জানা গেছে, একটি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মূলধারায় পাঠদানের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে দেশে প্রথমবারের মতো পাইলট প্রকল্প হিসেবে ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলায় একটি ভিন্নধারার স্কুল স্থাপন করা হবে। প্রকল্পটি সফল হলে চার মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে দেশের প্রতিটি জেলায় প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য একটি করে আলাদা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরি করা হবে। ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান ফর ‘নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার’ (এনডিডি) ২০১৬-১৭ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় যৌথভাবে কাজ করছে। পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়নে কেরানীগঞ্জে প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের এনডিডি বিষয়ে কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রতিটি স্কুলের তিনজন করে মোট ১৫০ জনকে তিনটি ব্যাচে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের বিদ্যালয়ের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মধ্য থেকে একজন সিনিয়র শিক্ষককে ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে প্রধান শিক্ষক নির্বাচন করা হবে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি শিশুদের জন্য আলাদাভাবে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করবে। এনডিডি শিশুদের জন্য এ্যাসিয়াটিভ ডিভাইস প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। এনডিডি শিক্ষার্থীদের শিক্ষার প্রতি উৎসাহিত করতে জেএসএস ও জেডিসিসহ স্কুলে অনুষ্ঠিত সকল পরীক্ষায় আলাদা মেধাবৃত্তি প্রদান করা হবে। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের অনুকূলে প্রতিটি স্কুলের ভবন, স্কুলের প্রবেশপথ নিশ্চিত করা হবে। জাতীয় দিবস ও বিভিন্ন উৎসব উদযাপন এবং অন্যসব কর্মসূচীতে এনডিডি শিশুদের জন্য বিশেষ আয়োজন, বসার ব্যবস্থা নির্ধারণ এবং তাদের আমন্ত্রণ জানাতে হবে।

জানতে চাইলে যুগ্ম-সচিব সালমা জাহান বলেন, প্রতিবন্ধী শিশুদের মূলধারায় নিয়ে আসার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার আলোকে কার্যক্রম নির্ধারণ করা হয়েছে। বাস্তবায়নের জন্য উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, মাউশি (মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর) ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এফএম মঞ্জুর কাদের বলেন, প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতি এক ধরনের অবজ্ঞা করা হয়। অনেক বাবা-মা তাদের সামাজিক অনুষ্ঠানে নিয়ে যেতে চান না। প্রতিবন্ধী শিশুদের কতজন স্কুলে ভর্তি হওয়ার যোগ্য তা চিহ্নিত করে স্কুলে ভর্তি নিশ্চিত করতে হবে। যারা মূলধারার শিক্ষার সঙ্গে তাল মেলাতে পারবে না তাদের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে কারিগরি শিক্ষা দেয়া হবে। প্রকল্পটি দ্রুতই বাস্তবায়ন করা হবে। সফলতা এলে সারাদেশের স্কুলে একই কার্যক্রম চালু করা হবে।

এদিকে মাউশি বলছে, অন্য আরেকটি উদ্যোগের মাধ্যমে রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের পাঁচ উপজেলায় নতুন পাঁচটি অত্যাধুনিক আবাসিক সরকারী কলেজ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে জমি অধিগ্রহণের কাজও শুরু হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে মাউশির সহকারী পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) ড. একেএম খলিলুর রহমান বলেন, বর্তমানে জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। তিনি আরও বলেন, প্রতিটি কলেজে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ খোলা হবে। প্রতিটি বিভাগে অন্তত দেড় শ’ শিক্ষার্থী ভর্তির অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। দুর্গম এলাকা হওয়ায় শিক্ষার্থীদের কলেজ ক্যাম্পাসে থাকার জন্য অন্তত পাঁচ শ’ আসনের আবাসিক হোস্টেল নির্মাণ করা হবে।

এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে বলা হয়েছে, রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি, জুড়িছড়ি এবং বান্দরবানের আলীকদম, রুয়াংছড়ি, থানছি উপজেলায় উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের কোন কলেজ নেই। ‘পাঁচ উপজেলায় সরকারী কলেজ স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পের জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকায় সম্ভাব্য স্থান নির্বাচন ও নির্বাচিত স্থানে অন্তত পাঁচ একর জমি লোকেশন ম্যাপসহ অধিগ্রহণ, অধিগ্রহণ বাবদ ব্যয় প্রাক্কলন (ভূমির পরিমাণ, তফসিল, প্রকৃতি, চৌহদ্দি ও বাজারদর সংগ্রহসহ) প্রেরণের জন্য নির্দেশ দেয়া হলো।

প্রতিটি উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তাই সরকারের এ উদ্যোগে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, বান্দরবানের আলীকদম, রুয়াংছড়ি ও থানছি উপজেলা অত্যন্ত দুর্গম এলাকা। আলীকদমে বাঙালী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় সমান। বাকি দুই উপজেলায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বসবাস বেশি। এসব উপজেলায় স্কুল থাকলেও কলেজ না থাকায় শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সরকারের এ উদ্যোগের ফলে পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর উচ্চশিক্ষার পথ সুগম হবে।

শিক্ষা কর্মকর্তারা ইতোমধ্যেই মাউশিকে জানিয়েছেন, জেলার সবচেয়ে দুর্গম উপজেলা বিলাইছড়ি ও জুড়িছড়ি। দুই উপজেলায় সরকারী-বেসরকারী কোন কলেজ না থাকায় এলাকার শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে ছাত্রীরা উচ্চশিক্ষা থেকে পিছিয়ে পড়ছে। সেখানে পরিদর্শনে গেলে এলাকার মানুষ কলেজ প্রতিষ্ঠার দাবিও করেন। সরকারের এ উদ্যোগের ফলে এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হবে। পাহাড়ের দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবে।

সরকারের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, এসব উপজেলায় অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী রয়েছে। কলেজ না থাকায় দুর্গম এলাকার অনেকের পক্ষে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে পড়ালেখা করার সুযোগ হয় না। সরকার এসব এলাকায় সরকারী কলেজ করলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা খরচও কম লাগবে। আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকা বিবেচনা করে যতটা সম্ভব আদিবাসী শিক্ষক নিয়োগের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ছাত্রীদের জন্য আলাদা আবাসিক ভবন নির্মাণ করতে হবে। একই সঙ্গে এসব হোস্টেলের দায়িত্ব আদিবাসী শিক্ষকদের দিলে শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক সুবিধা হবে। পিছিয়ে পড়া পার্বত্যাঞ্চলের নতুন প্রজন্ম আধুনিক ও যুগোপযোগী শিক্ষায় শিক্ষিত হবে।

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0090968608856201