সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা বাস্তবায়নে বাধা কোথায় - দৈনিকশিক্ষা

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা বাস্তবায়নে বাধা কোথায়

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে  সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে বিগত কয়েক বছর ধরে আলোচনা হলেও কার্যক্ষেত্রে এর প্রয়োগ ঘটানো যায়নি। কেন তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি তা অজানা। কোনো এক অদৃশ্য শক্তির কারণে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। যানজট অনেক ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থীর স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছে। মেডিকেল কলেজগুলো সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছে। ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষ থেকে সমন্বিত ভর্তিপরীক্ষা নিতে সম্মত হয়েছে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ও কৃষিতে প্রাধান্য থাকা আটটি বিশ্ববিদ্যালয় । রোববার (২৩ জুন) দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। নিবন্ধটি লিখেছেন অলোক আচার্য।

এ আটটি বিশ্ববিদ্যালয়  হলোÑ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় , সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় এবং সমধারার পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় । বিভিন্ন গণমাধ্যমে এভাবে বিষয়টির কিছু অগ্রগতি হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। বিভিন্ন সময় আমাদের শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা উপমন্ত্রী সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার গুরুত্বের বিষয়টি বলেছেন। কর্তৃপক্ষ যেখানে সচেষ্ট সেখানে তা বাস্তবায়ন না হওয়ার কথা নয়। কিন্তু এক অদৃশ্য হাত তা হতে দিচ্ছে না। কারও কারও যেন এ বিষয়ে আগ্রহ নেই। একজন শিক্ষার্থী এবং তার অভিভাবক দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে এভাবে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে গিয়ে প্রায় সময়ই নানা বিড়ম্বনার শিকার হন। তাদের কথা ভেবে হলেও সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা উচিত। যেহেতু একাদশ শ্রেণীতে মেধার ভিত্তিতে ভর্তি হয় তাহলে সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তাছাড়া বারবার উদ্যোগ নেয়ার পরও কেন তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি একসঙ্গে বিষয়টি নিয়ে উদ্যোগী হয় তাহলে এটি বাস্তবায়নে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। ধারণা করা হয় এটি বাস্তবায়িত না হওয়ার পেছনে রয়েছে বিদ্যমান ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বড় অঙ্কের আয়।

প্রতি বছর এইচএসসি পরীক্ষায় শেষ হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। এই সময়টা কাটে ছাত্রছাত্রীদের টেনশনের ভেতর। কোথাও ভর্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের মধ্যে এই দুঃশ্চিন্তা কাজ করে। এর মধ্যে দেশের বিভিন্ন সথানে গিয়ে পরীক্ষায় অংশ নেয়া, সেখানে থাকার চিন্তা সব মিলিয়ে বেশ বড় ধরনের সংগ্রাম করতে হয় এসময়। জীবন যুদ্ধে থেকে কোন অংশে কম না এই ভর্তি যুদ্ধ। প্রতি বছর যে হারে পাসকৃত শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসন সংখ্যা তার থেকে অনেক কম। তারপর আবার রয়েছে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়, পছন্দের বিষয় নির্বাচন। সব মিলিয়ে বিশাল চাপ। উচ্চ শিক্ষার জন্য তাই তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হয় তাদের। কিন্তু তারা এই তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে গিয়ে নানা বিড়ম্বনার মুখোমুখি হতে হয় তাদের। এইচএসসি পাসের পরই তারা পছন্দের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে প্রথমেই মোটা টাকা দিয়ে কোচিংয়ে ভর্তি হয়। তারপর মাস দুয়েক ভর্তি কোচিং শেষ করে ভর্তি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়। এ সময়ে যাদের আর্থিক অবস্থা দুর্বল তারা এই কোচিং করার সুযোগ পায় না। প্রচলিত ধারণা এটাই যে কোচিং ছাড়া কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পায় না। অভিভাবকদের মধ্যে তাই নামী দামী কোচিং এ সন্তানকে ভর্তি করাতে রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা শেষে কোন কোচিং থেকে কতজন ভর্তি হতে পেরেছে তা নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা শুরু হয়ে যায়। এটা কোচিং সেন্টারগুলোর শুধু প্রচারণা শুধু নয় ভর্তি বা কোচিং বাণিজ্যের হাতিয়ার। এই ভর্তি বাণিজ্য ও কোচিং গাইড বাণিজ্যের জন্য অনেকেই সমন্বিত পদ্ধতির বিরোধিতা করেন। এতে তাদের আয় কমে যাওয়ার আশংকা রয়েছে! কারণ যদি সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হয় তাহলে এ ধরনের মোটা টাকা আয়ের সুযোগ তাদের নষ্ট হবে। এখন যেমন কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির জন্য বিশেষ কোনো বই বা কোচিংয়ের প্রচার চলে তখন তা সম্ভব হবে না। ভর্তি পরীক্ষা হবে সমন্বিতভাবে। মেধা অনুযায়ী যে কোনো এক বিশ্ববিদ্যালয়ে  ভর্তির সুযোগ পাবে।

ভর্তি কোচিংয়ে ভর্তি হওয়ার পর আবার শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরম তোলার পালা। আলাদা আলাদা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে আলাদা আলাদা ফরম তুলতে হয়। ফর্মের কেনার সাধ্যও অনেক পরিবারের থাকে না। সেখানেও গরীব মেধাবীরা পিছিয়ে পরে। একজন সামর্থ্যবান শিক্ষার্থী প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফরম তুলে ফেলে। কিন্তু তাতে তার হাজার হাজার টাকা খরচ হয়ে যায়। দেখা যায় এইচএসসি পরীক্ষার পর থেকে শুরু করে কেবল ফর্ম তোলা পর্যন্তই মোটা অংকের টাকা খরচ করতে হয়। যার সাধ্য অনেকের থাকে না। দেশের একেক প্রান্তে এক একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অবস্থিত। দেখা যায়, আজ ঢাকায় তো আগামীকাল খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা। ফলে ঢাকার পরীক্ষা শেষ করে ছুটতে হয় গাড়ি ধরতে। বিশ্রাম নেয়ার সময়টুকুও থাকে না। তার পরদিন হয়তো পরীক্ষা থাকে দেশের অন্য কোন প্রান্তে। এভাবে ছুটতে গিয়ে যাদের গাড়ি যানজটে আটকে যায় তারা আটকে থাকে। তাদের জন্য কারো করার কিছু থাকে না। অথচ তাদের বিন্দুমাত্র দোষ নেই।

ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবকের জন্যও মঙ্গলজনক সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে দাবী উঠেছে। এ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে পত্রপত্রিকায় বিভিন্ন সময়ে প্রচুর লেখালেখি হয়েছে। ড. মোহাম্মদ জাফর ইকবালসহ দেশের বড় বড় শিক্ষাবিদ এই পদ্ধতির প্রয়োগ নিয়ে আশা প্রকাশ করেছেন। তারা প্রচুর লিখেছেন এবং দেখিয়েছেন কেন এই পদ্ধতিটির প্রয়োগ আমাদের সন্তানদের জন্য প্রয়োজন। অনেকেই চাইছেন এর বাস্তবায়ন হোক কিন্তু বাস্তবায়ন হচ্ছে না। কেন হচ্ছে না তা কর্তৃপক্ষই বলতে পারবে। যেকোন পদ্ধতি প্রয়োগে সমস্যা আসতে পারে তবে তা সমাধান করেতে আলোচনা করতে হবে। আমরা কেবল ভর্তি পরীক্ষার্থীদের ঝামেলা লাঘব করতে চাই। তাদের শারীরিক ও মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দিতে হবে। বর্তমানে শুধু মেডিকেল কলেজগুলোতে এই পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা প্রচলিত আছে। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা যদি সমন্বিতভাবে নেয়া সম্ভব হয় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই পদ্ধতির প্রয়োগ সম্ভব হবে না কেন। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় মূলত একই প্রশ্নপত্রে একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা নেয়া হয়ে থাকে। শাবিপ্রবি ও যবিপ্রবিতে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার সিন্ধান্ত হলেও তা পরে কার্যকর হয়নি। যদি এ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হতো তাহলে কোন পরীক্ষার্র্থী সিলেট বা যশোর যে কোন এক স্থান থেকেই অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা দিতে পারতো। সেক্ষেত্রে মেধা তালিকাও আবেদনের বিশ্ববিদ্যালয় অনুযায়ী করা হবে। এ কল্যাণকর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন নিয়ে এত বিলম্ব হবে কেন। যদিও কয়েক বছর ধরেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চেষ্টা করছে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নিতে। অনেক আগে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির অধীনে কুয়েট, চুয়েট, রুয়েট (সেময় এসব বিআইটি খুলনা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী নামে পরিচিত ছিল) একযোগে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতো।

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা আমাদের অত্যন্ত প্রয়োজন। এর পক্ষে-বিপক্ষে অনেক মত থাকলেও আমাদের বিরাট এ কর্মযজ্ঞ যে ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে আয়োজন করা হয়, তাদের স্বার্থকে সর্বাগ্রে প্রাধান্য দিতে হবে। যানজট যদি নাও সমস্যা করে তাহলেও দীর্ঘ পথের ক্লান্তি থেকে তাদের মুক্তি দেয়া প্রয়োজন। অপরিচিত স্থান, আবাসন অনিশ্চয়তা, যাত্রার যানবাহন সমস্যা ইত্যাদি থেকে মুক্তি দিতে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা এখন কেবল অপেক্ষা মাত্র। তবে শুধু শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের স্বস্তি দূর করা নয় বা তাদেরকে টেনশন অথবা ঝামেলা মুক্ত করার লক্ষ্যেই নয় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ভর্তি ব্যবস্থাকে সুষ্ঠু, বৈজ্ঞানিক এবং স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত করে একটি স্থায়ী গ্রহণযোগ্য ভর্তি ব্যবস্থার স্বার্থে সমন্বিত ভর্তি ব্যবস্থা অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে, কারণ এর কোন বিকল্প নেই।

 

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট, পাবনা

স্কুল-কলেজ, মাদরাসা খুলবে ২৮ এপ্রিল - dainik shiksha স্কুল-কলেজ, মাদরাসা খুলবে ২৮ এপ্রিল সাত দিন বন্ধ ঘোষণা প্রাথমিক বিদ্যালয় - dainik shiksha সাত দিন বন্ধ ঘোষণা প্রাথমিক বিদ্যালয় তীব্র গরমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসও বন্ধ ঘোষণা - dainik shiksha তীব্র গরমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসও বন্ধ ঘোষণা প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ - dainik shiksha প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ছাত্ররাজনীতি লাভজনক পেশায় পরিণত হয়েছে : ড. আইনুন নিশাত - dainik shiksha ছাত্ররাজনীতি লাভজনক পেশায় পরিণত হয়েছে : ড. আইনুন নিশাত কারিগরির সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটির প্রজ্ঞাপন জারি - dainik shiksha কারিগরির সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটির প্রজ্ঞাপন জারি মাদরাসায় ছুটির প্রজ্ঞাপন জারি - dainik shiksha মাদরাসায় ছুটির প্রজ্ঞাপন জারি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.012397050857544