সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা সময়ের দাবি - দৈনিকশিক্ষা

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা সময়ের দাবি

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

এ বছর এইচএসসি পরীক্ষা হয়নি বিধায় জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ডিসেম্বরের মধ্যেই এইচএসসির ফলাফল নির্ধারণ করা হবে। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত ৭ অক্টোবর সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছেন, ফলাফল ডিসেম্বরের মধ্যেই জানানোর চেষ্টা করা হবে। এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল নির্ধারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা যথার্থ বলেই মনে করা যায়। দ্বিমত থাকতেই পারে। লাখ লাখ ছাত্রছাত্রীকে করোনার ঝুঁকিতে ফেলে দিয়ে এইচএসসি পরীক্ষা গ্রহণ করা সঠিক হতো না। আগে জীবন, তারপর পরীক্ষা কিংবা ফলাফল। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে তাৎক্ষণিকভাবে দু’-চারজন অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল তারা সন্তুষ্ট। শনিবার  (১৭ অক্টোবর) কালের কণ্ঠ পত্রিকার নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।  

নিবন্ধেআরও জানা যায়,শিক্ষামন্ত্রী সেদিন আরও জানিয়েছেন, এ বছর সমন্বিত বা গুচ্ছ পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার চেষ্টা করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হয়তো জানুয়ারিতেই ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু করে দেবে। বেশ কয়েক বছর ধরেই বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত বা গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার দাবি উঠছে। এতে যে দ্বিমত নেই তা বলা যাবে না। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে দাবিটি অত্যন্ত যৌক্তিক বলেই মনে হয়।

প্রথমত, এখনও করোনাকাল চলমান। এর ভয়াবহতা কতদিন চলবে তা আমরা কেউ জানি না। এই মহামারীটি সহসাই দূর হবে বলেও মনে হচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের কষ্ট। করোনার থাবা থেকে বাঁচতে হলেও এবারের ভর্তি পরীক্ষা সমন্বিত বা গুচ্ছ পদ্ধতিতে নেয়াটা অনেকেই যৌক্তিক বলে মনে করছেন। বাংলাদেশসহ অনেক দেশেই এখনও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সরাসরি পাঠদান বন্ধ রয়েছে করোনার কারণেই।

দেশে বর্তমানে ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান চালু রয়েছে। নতুন করে আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় চালুর অপেক্ষায় রয়েছে। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান বর্তমান শিক্ষাবর্ষে চালু হবে কিনা তা সংশ্লিষ্টরাই ভালো বলতে পারবেন। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক ইউনিট রয়েছে। গড়ে চারটি ইউনিট ধরা হলেও মোট পরীক্ষার সংখ্যা দাঁড়াবে পৌঁনে দু’শর বেশি।

যদিও সব ছাত্রছাত্রী সব ভার্সিটির সব ইউনিটে পরীক্ষা দেবে না; কিন্তু কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ইচ্ছুক পরীক্ষার্থীরা একাধিক ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেবে, এটা বলা যায়। ভর্তি পরীক্ষার মৌসুমে বেশি সমস্যায় পড়তে হয় ছাত্রীদের এবং তাদের অভিভাবকদের। কোনো অভিভাবকই কোনো ছাত্রীকে একা পাঠিয়ে নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন না। অনেক সময় পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের অভিবাবকও আসেন।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এত বেশি পরীক্ষার্থী ও অভিবাবকদের থাকার ব্যবস্থা করা অত্যন্ত দুরূহ একটি বিষয়। এটি সম্ভবও নয়। ভার্সিটি, হোটেলে সিট না পেয়ে খোলা আকাশের নিচে অনেকেই রাত্রিযাপন করেছে, এমন নজিরও আছে।

পরীক্ষার্থী ও অভিবাবকদের কষ্টের কথা চিন্তা করে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেয়া যায় কিনা তা ভাবার কথা বলেছিলেন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় তাতে রাজিও হয়েছিল। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। অনেক শিক্ষক মনে করেন, সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেয়াটা কঠিন। অনেকে মনে করেন বিষয়টি ‘অসম্ভব’।

একদিকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঝুঁকি, অন্যদিকে ‘বিষয়’ভিত্তিক সমস্যা। কারণ, বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যুগোপযোগী বহু নতুন নতুন বিষয়ের পঠন-পাঠন ও গবেষণার প্রয়োজন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সমন্বিত বা গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া সত্যিই কি অসম্ভব? এ দেশে বহু বছর ধরেই মেডিকেলে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা চালু রয়েছে।

গত বছর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা হয়েছে। এতে যে খুব সমস্যা হয়েছে তা মনে হয়নি। ছোটখাটো ত্রুটি-বিচ্যুতি ছাড়া সামগ্রিক অর্থে সফলভাবেই পরীক্ষা এবং ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে।

দেশে উচ্চশিক্ষাকে মোটা দাগে পাঁচটি ভাগে ভাগ করা যায়। তন্মধ্যে মেডিকেল, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, কৃষি ও সাধারণ উল্লেখযোগ্য। মেডিকেল ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইতিমধ্যে প্রমাণ করেছে সমন্বিত বা গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া সম্ভব। আমার ব্যক্তিগত ধারণা ও বিশ্বাস- প্রকৌশল ও প্রযুক্তি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও সমন্বিত বা গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া সম্ভব। এই তিন ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত না হোক অন্তত গুচ্ছ পদ্ধতিতে বা এলাকাভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা নেয়া যেতে পারে।

এতে সবাই উপকৃত হবে। অভিবাভকদের অর্থ সাশ্রয় হবে, পরীক্ষার্থীদের কষ্ট লাঘব হবে, সর্বোপরি সময় বেঁচে যাবে। বর্তমানে ভর্তি পরীক্ষা শেষে ভর্তি হয়ে সাত-আট মাসের সেশনজট মাথায় নিয়ে একজন শিক্ষার্থীকে ক্লাস শুরু করতে হয়। সেই জটও বহুলাংশে কমে যাবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, অসাধু চক্রের মাধ্যমে যেন কোনোভাবেই প্রশ্নপত্র ফাঁস না হয়। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীরা যেন ভর্তি পরীক্ষার পর ওয়ানস্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারে সে বিষয়েও খেয়াল রাখতে হবে। এমনিতেই করোনার জন্য ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ কিছুটা হলেও অনিশ্চিত, তাই সমন্বিত বা গুচ্ছ পদ্ধতিতে কিংবা বিভাগ বা এলাকাভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা নেয়া এখন সময়ের দাবি।

 লেখক: ড. এস এম মোস্তফা কামাল : ডিন, বিজ্ঞান অনুষদ; অধ্যাপক, গণিত বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

[email protected]

 

প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ - dainik shiksha প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার - dainik shiksha তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার - dainik shiksha স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন - dainik shiksha নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038468837738037