সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন কেন ব্যর্থ হল - দৈনিকশিক্ষা

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন কেন ব্যর্থ হল

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

আমাদের দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা বা তার ভর্তি প্রক্রিয়া কতটা সঠিক, স্বচ্ছ বা শিক্ষার্থীবান্ধব তা নিয়ে প্রশ্ন থাকা স্বাভাবিক।

প্রতিবছর অসংখ্য শিক্ষার্থীর এইচএসসি পাস করা এবং জিপিএ ৫ নিয়ে অতি উচ্ছ্বসিত হওয়া এবং পরবর্তী সময়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য যে স্থূল কায়দায় ভর্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া হয়, তা ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বুধবার (১১ মার্চ) যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়। 

সম্পাদকীয়তে আরও জানা যায়, ভর্তিচ্ছুদের ছোটাছুটির যে বিরামহীন অবস্থা, তা শুধু ভুক্তভোগীরাই অনুধাবন করতে পারে। সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের ইচ্ছায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন উদ্যোগ নিয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার যে নকশা প্রণয়ন করেছিল, তা বেশিরভাগ বনেদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্যাখ্যান করেছে। পত্র-পত্রিকায় শুধু এসেছে, বৃহৎ ও পুরনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের যে স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থার ভেতর দিয়ে চলে, সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন সেই চর্চার ব্যত্যয় ঘটায়।

কিন্তু ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় যে আইনে চলে তাতে তাদের ভর্তি পরীক্ষা সম্পর্কে ক্লজ আছে। এতে বলা আছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি কেমন হবে, তা সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদগুলো নির্ধারণ করবে।

তাই মোটা দাগে বলা চলে, সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন কোনো আইনি জটিলতা নয় একেবারেই। তারা চাইলে সম্ভব, নয়তো নয়। তাই স্বায়ত্তশাসনের সঙ্গে এর কোনো সরাসরি সংঘর্ষ নেই।

কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উদ্বেগ অন্যখানে। তাদের অনেকে মনে করেন, অভিন্ন ভর্তি প্রক্রিয়ার মধ্যে এক আমলাতান্ত্রিক প্রভাবের বীজ লুকিয়ে আছে, আছে স্বায়ত্তশাসনকে শিথিল করার এক অভিপ্রায়, আছে পুঁজিবাদী স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা, আছে রাজনৈতিক প্রজেকশনের বাড়াবাড়ি। প্রথমত, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সরাসরি সরকারি কর্মচারী নন, তারা সরকারি আমলাদের মতো অতি আর্থিক সুবিধা ভোগ করেন না এবং সরকারি কর্মকাণ্ডে তাদের প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা নেই।

তারা লাল-নীল পাসপোর্টও ব্যবহার করেন না। অথচ নিজের চেষ্টায় একটা বৃত্তি নিয়ে বিদেশে পড়তে যাওয়ার প্রাক্কালে তাকে মন্ত্রণালয়ে ছোটাছুটি করতে হয় নির্বাহী বিভাগের পূর্বানুমতির জন্য।

স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের বা তাদের পদোন্নতির কী মানদণ্ড হবে, তা যখন পে-কমিশন নির্ধারণকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয় এবং তার জন্য যখন শিক্ষকদের রাস্তায় নামতে হয়, তখন অভিন্ন ভর্তি প্রক্রিয়ার উদ্যোগের মধ্যেও আমলাতান্ত্রিক খবরদারির গন্ধ পাওয়াটা অমূলক নয়।

দ্বিতীয়ত, কোনো সন্দেহ নেই, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসকদের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষকদের এক ধরনের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তার নানাবিধ কারণ আছে। সে ব্যাখ্যা এ লেখায় সংকুলান করা সম্ভব নয়।

যাই হোক, সাধারণ শিক্ষকরা মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসকরা নিজেদের স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থ বা স্বায়ত্তশাসন কম্প্রোমাইজ করতে দ্বিধা করেন না। তাই অভিন্ন ভর্তি প্রক্রিয়া কতটা বিশুদ্ধ বা নির্ভেজাল, তা নিয়ে সন্দেহের টানাপোড়েন আছে। তৃতীয়ত, সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা সমন্বিত আকারে অনুষ্ঠিত হলে অনেক শিক্ষার্থী একবার যদি কোনো কারণে ওই পরীক্ষা না দিতে পারে, তার জন্য হয়তো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আর পড়ার সুযোগ নাও আসতে পারে।

সে ক্ষেত্রে তার একমাত্র গতি হবে হয়তো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। তখন অসংখ্য শিক্ষার্থী পেয়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্যবসা ফুলেফেঁপে উঠবে। তাই এ আয়োজনের মধ্যে এক ধরনের পুঁজিবাদী বাজারব্যবস্থা হাসিলের অনুমান উড়িয়ে দেয়া যায় না। চতুর্থত, দেশের প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যখন তাদের গুণগত শিক্ষার মান ধরে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে, তখন একের পর এক নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করায় এক অদ্ভুত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

এমন অপরিকল্পিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা শিক্ষা প্রসারের জন্য নাকি রাজনৈতিক বিবেচনাপ্রসূত, তা স্পষ্ট নয়। একটি-দুটি বিল্ডিংসর্বস্ব এমনসব বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি গড়ে দু’দিন করেও ভর্তি পরীক্ষা নিতে হয় তাহলে প্রায় সাড়ে তিন মাস সময় লাগবে। তাই শিক্ষা মন্ত্রাণলয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন একটা সহজ সমাধান হিসেবে এমন সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার আয়োজনের চেষ্টা চালিয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। আসলে সার্বিকভাবে দেশের টারশিয়ারি শিক্ষাব্যবস্থা পরিকল্পিত হওয়া উচিত।

একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগে তার আকাদেমিক ও প্রশাসনিক বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা সমীচীন। ভূরি ভূরি বিশ্ববিদ্যালয় না স্থাপন করে দেশের যে স্থানীয় কলেজগুলো রয়েছে, সেগুলোকে শিক্ষাগত ও কাঠামোগত দিক থেকে উন্নত করলে তা দেশের শিক্ষায় কল্যাণ বয়ে আনবে। অপরিকল্পিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেশের শিক্ষার জন্য এক ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবস্থা।

লেখক: মো. রবিউল ইসলাম, ডিন, আইন অনুষদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0077979564666748