সম্মানীর নামে শিক্ষাবোর্ডগুলোতে কোটি কোটি টাকা লোপাট, অডিট আপত্তি - দৈনিকশিক্ষা

সম্মানীর নামে শিক্ষাবোর্ডগুলোতে কোটি কোটি টাকা লোপাট, অডিট আপত্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক |

সম্মানীর নামে অর্থ লুটের ঘটনা ঘটেছে আটটি শিক্ষা বোর্ডে। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের আয়-ব্যয়ের ওপর স্থানীয় সরকার ও রাজস্ব অডিট অধিদফতর অনুসন্ধান চালিয়ে নিরীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করেছে। ২৭ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদনটি পাঠানো হয়েছে।  প্রতিবেদনে বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডে ৩৩ ধরনের অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগ উঠেছে। এতে সরকারের ১৬৭ কোটি টাকা গচ্চা গেছে। এ অর্থ বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারী, ঠিকাদারসহ সংশ্লিষ্টদের পকেটে চলে গেছে।

এদিকে, পাবলিক পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের সম্মানীর টাকা দিতে দুই বছরেরও বেশি সময় নেয় বোর্ডগুলো। এতে ক্ষুব্ধ সাধরণ শিক্ষকরা। অতি দ্রুত সম্মানীর টাকা দেয়ার ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির নেতা মো: কাওছার আলী শেখ।  

অডিট প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই ঈদের দুটিসহ বছরে আটটি বোনাস শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দেয়া হচ্ছে। পাবলিক পরীক্ষায় অতিরিক্ত কাজের নামে অবশিষ্ট ছয়টি বোনাস দেয়া হচ্ছে। এরপর একই পরীক্ষার বিভিন্ন পর্যায়ের কাজের জন্য আলাদা সম্মানী দেয়া হচ্ছে।

এ প্রক্রিয়ায় এক বছরে আট শিক্ষা বোর্ডে সম্মানীর নামে নয় কোটি টাকা লুটে নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া আরও ২৪টি খাতে সরকারের ১৫৮ কোটি টাকা গচ্চা গেছে। ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।

অডিট অধিদফতরের চিহ্নিত ৩৩ অনিয়মের মধ্যে রয়েছে- প্রাপ্য না হওয়া সত্ত্বেও জেএসসি পরীক্ষায় রেজিস্ট্রেশন করা, পরীক্ষা পরিচালনা এবং ফলাফল প্রকাশ সংক্রান্ত কাজে সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সম্মানী প্রদান; মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় নম্বরপত্র ও সনদপত্র লিখন, যাচাই, স্বাক্ষর ও পাঠানোর কাজে প্রাপ্যতার অতিরিক্ত সম্মানী প্রদান; ব্যবহারিক পরীক্ষার উত্তরপত্র যাচাই-বাছাই কাজের জন্য অতিরিক্ত অর্থ প্রদান; অনলাইন নিবন্ধনের জন্য অর্থ প্রদান; এসব সম্মানীর বিল থেকে নির্ধারিত হারে উৎসে আয়কর কর্তন না করা।

অডিট দলের এক কর্মকর্তা দৈনিক শিক্ষাকে জানান, ছয়টি খাতে ১২ কোটি টাকার বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে নয় কোটির বেশি বিভিন্ন ব্যক্তির পকেটে চলে গেছে। পরীক্ষা সংক্রান্ত কাজের জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বোনাসের নামে মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ নেয়া অন্যায়।

তিনি বলেন, এসব অর্থ গ্রহণের ব্যাপারে বোর্ড কমিটিতে অনুমোদন নেই। আর অনুমোদন থাকলেও একই কাজে একাধিকবার প্রণোদনা নেয়া অবৈধ।

অনিয়মের মধ্যে আরও রয়েছে- কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দেয়া দীর্ঘমেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত হারের চেয়ে কম হারে সুদ আদায় করা; আন্তঃশিক্ষা বোর্ড তহবিল ও বিজি প্রেসকে অনিয়মিতভাবে অর্থ পরিশোধ; ঠিকাদারের বিল থেকে ভ্যাট কর্তন না করা; ক্যাশ বইয়ের হিসাব অনুযায়ী ব্যাংক হিসাবে অমিল; গাড়ি কেনায় সরকার নির্ধারিত হারের চেয়ে অতিরিক্ত দামে কেনা; বিভিন্ন খাতে বাজেট বরাদ্দের চেয়ে অতিরিক্ত ব্যয়; অনিয়মিতভাবে চাহিদা তৈরির মাধ্যমে কম্পিউটার সামগ্রী কেনা; বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা ছাড়া সম্পদ সংগ্রহ খাতে অনিয়মিত ব্যয়; ব্যাংকের এফডিআর, সঞ্চয় হিসাব থেকে প্রাপ্ত আয় হিসাবে অন্তর্ভুক্ত না করা; হিসাব বইয়ে আয় কম দেখানো; ঠিকাদারদের পরিশোধিত বিলে গরমিল করা; বিভাগীয় কাজে দেয়া অগ্রিম অর্থ সমন্বয় না করা; আবাসিক বাসার কর্মকর্তা/কর্মচারীদের গ্যাস বিল বাবদ অতিরিক্ত অর্থ প্রদান; পরিশোধিত বিল থেকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে অর্থ ফেরত দেয়া; মডেল কলেজের আয় বোর্ড তহবিলে জমা না করে মডেল কলেজের শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বোর্ড থেকে প্রদান; অর্থ লেনদেনে ক্যাশ বই যথাযথ সংরক্ষণ না করা; কর্মচারীদের সার্ভিসবুকে চাকরি সংক্রান্ত কোনো তথ্য সংরক্ষণ না করা; পুরাতন গাড়ি অকেজো ঘোষণা করা সত্ত্বেও সেগুলো বিক্রয় না করা এবং অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণের অব্যবস্থাপনা।

অডিট দল বলছে- ক্যাশ বইয়ের হিসাব অনুযায়ী ব্যাংক হিসাবে যে অর্থ থাকার কথা, বিভিন্ন বোর্ডের হিসাবে তা নেই। আটটি শিক্ষা বোর্ড মিলে প্রায় ৪৬ কোটি টাকা হিসাবে কম আছে।

অডিট প্রতিবেদনে বলা হয়, আয় বিবরণীতে আয়ের চেয়ে ২০ কোটি ৫৮ লাখ টাকা কম দেখানো হয়েছে। লেনদেনের হিসাব অনুযায়ী ক্যাশ বই ও ব্যাংক হিসাবের মধ্যে ৩৭ কোটি ৫১ লাখ টাকার গরমিল আছে। মালামাল কেনার ক্ষেত্রে উন্মুক্ত টেন্ডার উপেক্ষা করা হয়েছে।

এ প্রক্রিয়ায় জিনিসপত্র কিনে এক কোটি ২৩ লাখ টাকা গচ্চা দেয়া হয়েছে। কম্পিউটার সামগ্রী কেনাকাটায় অনুরোধ পদ্ধতি ব্যবহার করে সরকারি কেনাকাটা নিয়ম লঙ্ঘন করা হয়েছে। এ খাতে এক কোটি ৯৮ লাখ টাকা গচ্চা গেছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব বলেন, স্থানীয় সরকার ও অডিট অধিদফতরের আপত্তির বিষয়গুলোতে এক মাসের মধ্যে জবাব চাওয়া হয়েছে বোর্ডগুলোর কাছে।

প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী এখন বোর্ডগুলো জবাব দেবে। এরপরও নিষ্পত্তি না হলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।

ফল জালিয়াতি: পদে রেখেই সচিবের বিরুদ্ধে তদন্ত - dainik shiksha ফল জালিয়াতি: পদে রেখেই সচিবের বিরুদ্ধে তদন্ত শিক্ষক-কর্মচারী বদলি নীতিমালার কর্মশালা কাল - dainik shiksha শিক্ষক-কর্মচারী বদলি নীতিমালার কর্মশালা কাল দুবাইয়ে বন্যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা - dainik shiksha দুবাইয়ে বন্যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি ৯৬ হাজার ৭৩৬ শিক্ষক নিয়োগ, আবেদন করবেন যেভাবে - dainik shiksha ৯৬ হাজার ৭৩৬ শিক্ষক নিয়োগ, আবেদন করবেন যেভাবে ফিলিস্তিনকে সমর্থনের ‘অভিযোগে’ সেরা ছাত্রীর বক্তৃতা বাতিল - dainik shiksha ফিলিস্তিনকে সমর্থনের ‘অভিযোগে’ সেরা ছাত্রীর বক্তৃতা বাতিল মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0078320503234863