শিক্ষার্থীরা সময়মতো স্কুলে উপস্থিত হলেও দেখা মেলে না শিক্ষকদের। এমন অভিযোগ উঠেছে লালমনিরহাটের সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের চর খাটামারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চরকুলাঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। এতে শিক্ষার্থীদের যথাযথ লেখাপড়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চর খাটামারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অফিস রুমের তালা খুলছেন পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাকিল। এসময় শিক্ষকরা কখন স্কুলে আসবেন জিজ্ঞাসা করলে সে জানায়, ‘স্যারেরা ১০টার সময় স্কুলে আসেন’।
এদিকে শিক্ষকরা ঠিক সময় স্কুলে না আসায় বারান্দায় বসে মারবেল খেলে সময় কাটাচ্ছিল শিক্ষার্থীরা। তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন সকালে স্কুলে এসে তারা মারবেল খেলে, ক্লাস শুরু হলে ক্লাস করে।
স্কুলের পাশেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বাড়ি। শিক্ষার্থীদের সাথে আলাপরত অবস্থায় সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে স্কুলে আসেন সহকারী শিক্ষক মো. তাহের আলী। এর ৫ মিনিট পর আসেন আরেক সহকারী শিক্ষক রুমিনা আক্তার। পরে শিক্ষার্থীরা গিয়ে জানালে সকাল ১০টায় স্কুলে আসেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। প্রতিবেদক স্কুলে থাকা অবস্থায় আরেক সহকারী শিক্ষক মনোয়ারা বেগম স্কুলে আসেননি।
দেরিতে স্কুলে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুস সামাদ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, তিনি দেরিতে স্কুলে আসেননি। সকালে স্কুলে এসে পতাকা উত্তোলন করে সবগুলো ক্লাসরুমের দরজা তিনি খুলে দিয়েছেন।
নিকটবর্তী চরকুলাঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে অফিস পিয়ন বাবর আলীকে পাওয়া যায়। প্রতিবেদকে তিনি জানান, সকাল ৯টা ২০ মিনিটে পতাকা উত্তোলন করে ক্লাসরুমের দরজা খুলে দিয়েছেন তিনি। এসময় কোনো শিক্ষকই স্কুলে উপস্থিত ছিলেন না। কারণ সকাল ৯টায় কোনো শিক্ষকই স্কুলে আসেন না।
স্কুলে ৬ জন শিক্ষক থাকলেও সকাল ১০টার পরে গিয়ে দেখা যায় আব্দুস সালাম ও ফজলু হক নামে মাত্র দুজন সহকারী শিক্ষক স্কুলে উপস্থিত আছেন। এর মধ্যে আব্দুস সালামের বাড়ি স্কুলের পাশেই। তবে সকাল সাড়ে ৯টায় স্কুলে এসেছেন বলে দাবি করেন তারা।
এর মধ্যে সকাল সাড়ে ১০টায় একসাথে স্কুলে এসে উপস্থিত হন সহকারী শিক্ষক শ্রাবণী রানি, সুমনা রায় ও কোহিনূর পারভীন। কিন্তু স্কুলের প্রধান শিক্ষক তখনও অনুপস্থিত। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী শিক্ষক আব্দুস সালাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, প্রধান শিক্ষক অসুস্থ, তাই স্কুলে আসেননি। স্কুলের সার্বিক দায়িত্ব তিনিই পালন করেন বলে জানান তিনি।
শিক্ষকদের দেরিতে আসা নিয়ে এলাকাবাসী জানান, শিক্ষকদের স্কুলে আসার খামখেয়ালিপনার জন্য তাদের ছেলেমেয়েদে লেখাপড়া ঠিকমতো হচ্ছে না।
এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের বক্তব্য নিতে তার কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, তিনি অফিসের কাজে বাইরে আছেন। এসময় স্কুল চলাকালে চরকুলাঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুস সালামকে উপজেলা শিক্ষা অফিসের আশেপাশে ঘুর ঘুর করতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার গোলাম নবী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য সময়সূচি নির্ধারণ করা আছে। নির্ধারিত সময়ে যদি কেউ ক্লাস শুরু না করেন এবং কেউ যদি দেরিতে স্কুলে আসেন এরকম অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে অবশ্যই বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের প্রতিবেদক শিক্ষা অফিসে থাকার সময়ে চর খাটামারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুস সালাম জেলা কার্যালয়ে এসে উপস্থিত হন। স্কুল চলার সময়ে তিনি অফিসে কেন জানতে চাইলে বলেন, বদলিজনিত কারণে কথা বলতে জেলা কার্যালয়ে এসেছেন তিনি। তখন পরবর্তী সময়ে স্কুল চলার সময়ে ছুটি না নিয়ে জেলা কার্যালয়ে আসতে নিষেধ করে ওই শিক্ষককে মৌখিকভাবে সতর্ক করেন জেলা শিক্ষা অফিসার গোলাম নবী।