শিক্ষা আমাদের চিন্তাশক্তির রাজ্য বিস্তৃত করে; প্রকৃত মানুষ হয়ে মানুষের সেবা ও কল্যাণে আত্মনিয়োগ করতে উদ্বুদ্ধ করে; সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত করে; মন্দ-ভালোর বিভেদ তৈরিতে সাহায্য করে; যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার সাহস জোগায়; দেশ ও দেশের মানুষের ইতিহাস-ঐতিহ্য, ধর্ম ও সংস্কৃতিচর্চা, বিজ্ঞান, অর্থনীতি, গবেষণা ইত্যাদি আবশ্যিক বিষয়ের প্রতি মনোযোগী করে তোলে। শিক্ষা এখন অনেক উন্নত ও সমৃদ্ধ, কিন্তু শিক্ষার প্রতিযোগিতার দৌড়ে আমরা অস্থির ও অশান্ত। সময়ের প্রয়োজনে শৈশব থেকে শিক্ষাকে সহজ, সর্বজনীন এবং আনন্দময় করা যায়। সেইসঙ্গে কারিগরি শিক্ষা, ডিজিটাল শিক্ষা চর্চাও উপকারী প্রভাব ফেলে। আমরা এখন প্রযুক্তি ব্যবহার করছি। মনে রাখা ভালো, 'জীবনের জন্য প্রযুক্তি।' কিন্তু আমাদের অনেকের কাছে 'প্রযুক্তিই জীবন।' শিশু-কিশোরদের কল্পনাশক্তি এখন পড়ার চাপ ও বইয়ের ব্যাগে বন্দি, না হয় মোবাইলে গেমস খেলায় কোথায় যেন ক্রমেই স্তিমিত হয়ে যাচ্ছে! এ থেকে মুক্তি পেতে প্রাতিষ্ঠানিক ও পারিবারিক কার্যকর কথোপকথন এবং সৃষ্টিশীল কাজে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদের সুকুমারবৃত্তির বিকাশ ঘটাতে হবে। বদলাতে হবে আমাদেরও। কেননা, শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। রোববার (১ ডিসেম্বর) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।
নিবন্ধে আরও জানা যায়, ভালো লাগা বিষয়ের নিয়মিত চর্চা মানুষকে নিশ্চিত সাফল্য এনে দেয়। বিখ্যাত চিত্রপরিচালক ও লেখক সত্যজিৎ রায়ের সুন্দর জীবননির্ভর ছবি তৈরির প্রতি নিবিড় টান ছিল। তিনি শত প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও সেই সাধনার চর্চা ও চেষ্টা করে গেছেন। টাকার জন্য স্ত্রীর গহনা পর্যন্ত বন্ধক রেখেছেন। শেষ পর্যন্ত সফলতা তার বিজয় মুকুট হয়ে রইল। ভালো লাগা বিষয়ের প্রতি ঝোঁক থাকলে তার চর্চা করা সমীচীন। তবে হ্যাঁ, কোনটা কখন বেশি প্রয়োজন, সেটি জানা ভালো। শিশু-কিশোরদের আত্মবিশ্বাস ও মনোবল সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ানো দরকার। জীবন কখনও সহজ, তবে বেশিরভাগ সময়েই কঠিন। জীবনকে জানতে হলে জীবনের এবড়ো-খেবড়ো বাঁকে হাঁটতে হবে। কখনও পা কেটে রক্তাক্ত হলেও থামলে চলবে না। হয়তো সামনেই সুন্দর গন্তব্য।
দেশ ও সমাজের উন্নয়নে সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব দরকার। একজন কালজয়ী নেতার নেতৃত্ব ছোটবেলা থেকেই প্রকাশিত হতে থাকে। এমনই একজন কালজয়ী নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি শৈশব থেকেই সত্যিকারের নেতা হয়ে উঠেছিলেন। তিনি তার স্টু্কল টিমের ক্যাপ্টেন ছিলেন। প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও টিমটি এগিয়ে নিয়ে গেছেন এবং শেষ পর্যন্ত বিজয় অর্জন করেছেন। নিবিড় দেশপ্রেম, সততা আর নিষ্ঠা যে একজন নেতার আবশ্যিক গুণাবলি, সেটি এই মহান নেতার জীবন ও কর্মের মধ্যে দেখা যায়। বঙ্গবন্ধুর শৈশবের অর্জিত জ্ঞান, ধীশক্তি, অসাম্প্রদায়িক মনোভাব, নির্লোভ মানসিকতা, সহজ-সরল জীবনধারা একদিন তাকে সাহসী, আদর্শবান ও আকাশচুম্বী জনপ্রিয় নেতা হিসেবে তৈরি করেছিল। নতুনত্বের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে মানুষ নতুন নতুন জ্ঞান অর্জন করে। ভাষা শিক্ষা মানুষের নতুন নতুন নেত্র উন্মোচন করে। সে ক্ষেত্রে মাতৃভাষা সবার আগে আসে। আমাদের মাতৃভাষা আমাদের গর্ব। এর সঠিক চর্চা ও যথাযথ ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ। দরকার 'উপস্থাপন ক্ষমতা' বাড়ানো।
সবশেষে বলব নৈতিক শিক্ষার কথা। নৈতিক শিক্ষা শুধু প্রশ্ননির্ভর না করে অন্তরের শুদ্ধির জন্য কার্যকর করা যাক। কারণ, অন্তর থেকে উপলব্ধি না করলে কোনো শিক্ষাই যে পরিপূর্ণতা পায় না। শিক্ষা ও জানা শুধু শিক্ষক ও মা-বাবার ওপর নির্ভরশীল নয়, বরং শিশুদের কৌতূহলের ফল হোক। আমাদের দায়িত্ব তাদের কৌতূহলী করে তোলা, নিজেদের দায়িত্ব নিজেদের নিতে শেখানো। শিক্ষার পবিত্র সোপান তৈরি হোক স্বচ্ছ, সুন্দর ও শক্ত গাঁথুনির।
লেখক: ড. প্রতিভা রানী কর্মকার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও ইংরেজি বিষয়ের সহযোগী অধ্যাপক