আকাশপথে চলাচলের সময় যে রুটে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট আছে, সেসব ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তাদের বাংলাদেশ বিমানে ভ্রমণ করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এখন বিমানে উঠলে গর্বে বুক ভরে যায়। আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সরকারি কর্মকর্তারা যে যেখানেই যান, বাংলাদেশ বিমানেই যেতে হবে। গতকাল মঙ্গলবার বিমান বাংলাদেশের চতুর্থ ড্রিমলাইনার 'রাজহংস' উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি বলেন, ১০টি ড্রিমলাইনারের নাম আমি দিয়েছি, যাতে বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে সবাই পরিচিত হতে পারেন। পণ্য রফতানির জন্য দুটি কার্গো বিমান কেনা ও কার্গো ভিলেজ গড়ে তোলার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। খবর বাসস ও বাংলা ট্রিবিউনের।
গতকাল বিকেল ৪টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফিতা কাটার পর উড়োজাহাজ ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, বিমানের পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান ইনামুল বারি, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মফিদুর রহমান, বিমান সচিব মহিবুল হক, বিমানের এমডি মোকাব্বের হোসেন ও বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে বাংলাদেশ। পৃথিবীর বহু দেশ দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন করলেও তাদের মূল্যস্ম্ফীতি বেশি হয়। আমরা প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি মূল্যস্ম্ফীতি ধরে রাখতে পেরেছি। প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগসহ আমাদের অনেক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হয়েছে। তারপরও আমরা আমাদের দেশে চমৎকার একটা পরিবেশ ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি।
সরকারপ্রধান বলেন, আমরা তিনটা ৭৭৭-৩০০ ইআর বিমান এনেছি। ৭৮৭-৮ এনেছি চারটা। ড্যাশ বোম্বার্ডিয়ার আসছে আরও তিনটা। আমরা খবর পেয়েছি, বোয়িং আরও দুটি বিমান বিক্রি করবে। এখন পর্যন্ত কেউ অর্ডার দেয়নি। সুযোগটা আমরা নেব। আমাদের রিজার্ভ মানি যথেষ্ট ভালো অবস্থায় আছে। আমার মনে হয়, কোনো সমস্যা হবে না।
তিনি আরও বলেন, আমরা দুটো কার্গো বিমান কিনব, কার্গো ভিলেজ করে দেব। রফতানি বাড়ানোর জন্য সব পদক্ষেপ নেব। বাংলাদেশকে উন্নত দেশ করতে আমরা স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি। কক্সবাজার, সিলেট, রাজশাহী, বরিশালসহ সব বিমানবন্দর আরও উন্নত করার কাজ করছি।
শেখ হাসিনা বলেন, এত কষ্ট করে যে বিমান কিনে দিয়েছি, সেটার যাতে যত্ন হয়, নষ্ট না হয়, তা আন্তরিকতা দিয়ে দেখতে হবে। যাত্রীসেবার বিষয়টিও সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে। আমরা পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে একটা সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করতে পারি। লন্ডনে বিমানের আরও দুটো স্লট নেওয়ার চেষ্টা করছি। আর বোয়িং যদি আমেরিকায় না যায়, এটা তাদেরই মানসম্মানের ব্যাপার। এখানে উপস্থিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত বিষয়টি দেখবেন।
গত শনিবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে যুক্ত হতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির চতুর্থ বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ 'রাজহংস' দেশে পৌঁছায়। 'রাজহংস' যুক্ত হওয়ার পর সব মিলিয়ে বিমানের নিজস্ব উড়োজাহাজের সংখ্যা দাঁড়াল ১৬টিতে। ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের কাছ থেকে ১০টি নতুন এয়ারক্র্যাফট কিনতে চুক্তি করে বিমান। এর মধ্যে চারটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর, দুটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ এবং তিনটি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার এরই মধ্যে বিমানের বহরে যুক্ত হয়েছে।
বিমান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, টানা ১৬ ঘণ্টা উড়তে সক্ষম ড্রিমলাইনার চালাতে অন্যান্য উড়োজাহাজের তুলনায় ২০ শতাংশ কম জ্বালানির দরকার হয়।
২৭১ আসনের ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনারে বিজনেস ক্লাসের আসন থাকছে ২৪টি। ইন্টারনেট ও ফোনসহ অন্যান্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা এ উড়োজাহাজে পাওয়া যাবে।
বিমানের চার ড্রিমলাইনারের নাম পছন্দ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগে পাওয়া তিনটি উড়োজাহাজের নাম রাখা হয়েছে আকাশবীণা, হংসবলাকা ও গাঙচিল।