সরকারি নির্দেশ অমান্য করে ২ স্কুলে শিক্ষার্থীদের নিয়ে অনুষ্ঠান - দৈনিকশিক্ষা

সরকারি নির্দেশ অমান্য করে ২ স্কুলে শিক্ষার্থীদের নিয়ে অনুষ্ঠান

গাজীপুর প্রতিনিধি |

সরকার করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে আজ মঙ্গলবার থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে। এই নির্দেশ অমান্য করে গাজীপুরে দুটি স্কুল খোলা রেখে শিক্ষার্থীদের নিয়ে অনুষ্ঠান করেছেন শিক্ষকেরা। সেই অনুষ্ঠানে আসতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করায় অভিভাবকেরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। প্রতিষ্ঠান দুটি হলো গাজীপুরের বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উচ্চবিদ্যালয় ও ব্রি প্রগতি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

নির্দেশ অমান্য করে শিক্ষার্থীদের নিয়ে অনুষ্ঠান করেছেন শিক্ষকেরা

ওই দুই প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে আজ ১৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উদ্‌যাপন করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) মহাপরিচালক মো. শাহজাহান কবীর, পরিচালক (গবেষণা) তমাল লতা আদিত্য, পরিচালক (প্রশাসন ও সাধারণ পরিচর্যা) কৃষ্ণপদ হালদার, ব্রি প্রগতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. বেলায়েত হোসেন ও বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উচ্চবিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক আখের আলী দেওয়ানসহ অনেকে।

আজ মঙ্গলবার সকাল সাতটা থেকে শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে শুরু করে। সঙ্গে ছিলেন তাদের অভিভাবকেরা। কারও কাছেই বইখাতার ব্যাগ ছিল না। সবাই খালি হাতেই স্কুলে এসেছে। সাড়ে সাতটার মধ্যে দুটি স্কুলের প্রায় সব শিক্ষার্থী চলে আসে। সকাল আটটায় স্কুলের শিক্ষকেরা মাইকে ঘোষণা দেন সবাইকে যার যার শ্রেণিকক্ষে গিয়ে বসার জন্য। প্রতিটি ক্লাসেই একটি করে ছোট কেক ও মোমবাতি দেওয়া হয়। আর মূল অনুষ্ঠান হয় বিদ্যালয়ের তৃতীয় তলার একটি কক্ষে। সেখানে রাখা হয় ১০০ পাউন্ডের একটি কেক। অতিথিরা প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর মূল অনুষ্ঠানের আলোচনা পর্ব শেষ হলে প্রধান অতিথি বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) মহাপরিচালক মো. শাহজাহান কবীরসহ অন্যরা ১০০ পাউন্ডের কেক কেটে দিবসটি উদ্‌যাপন করেন। এরপর একযোগে প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে থাকা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা কেক কেটে দিবসটি উদ্‌যাপন করে। বেলা ১১টার দিকে শেষ হয় অনুষ্ঠান।

 

নির্দেশ অমান্য করে শিক্ষার্থীদের নিয়ে অনুষ্ঠান করেছেন শিক্ষকেরা

স্কুলশিক্ষক আমজাদ হোসেন সংবাদিকদের বলেন, অনুষ্ঠানের জন্য গতকাল সোমবারই সব শিক্ষার্থীদের সকাল ৭টায় স্কুলে উপস্থিত থাকতে বলা হয়। বিদ্যালয়ের প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় সব শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল।

স্কুলের ভেতরে অনুষ্ঠান চালাকালে বাইরে মাঠে অপেক্ষা করছিলেন অভিভাবকেরা। স্কুল মাঠের দক্ষিণ পাশে শহীদ মিনারের পাশে মুখে মাস্ক লাগিয়ে বসে ছিলেন অভিভাবক মো. শহিদুল্লাহ। তিনি বলেন, তাঁর দুই ছেলে-মেয়ে এই স্কুলে লেখাপড়া করে। করোনাভাইরাসের জন্য দেশের সব স্কুল সরকার বন্ধ দিলেও এই স্কুল খোলা রাখা হয়েছে। আরেক অভিভাবক নাসরিন আক্তার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের বাইরে যেতে নিষেধ করেছেন। এলাকার অন্য সব স্কুলে অনুষ্ঠান থাকলেও তারা তা বন্ধ রেখেছে। এই স্কুল কর্তৃপক্ষ কারও কথাই রাখল না।

গাজীপুর শহরের শিববাড়ি এলাকার বাসিন্দা নাসরিন আক্তার বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজেও শিক্ষার্থীদের বাহিরে যেতে নিষেধ করেছেন। এলাকার সব স্কুলেই অনুষ্ঠান ছিলো তারাতো অনুষ্ঠান বন্ধ করেছে। সেখানে এই স্কুল কর্তৃপক্ষ কারো কথাই রাখলেন না। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, স্কুল কর্তৃপক্ষ করোনা ভাইরাস নিয়ে শিক্ষার্থীদের কোন সচেতনতা না করে একটি ছোট কক্ষে গাদাগাদি করে অনুষ্ঠান করছে। হাতে গোনা ১০-১২ জন শিক্ষার্থী ছাড়া কারো মুখেই মাস্ক পড়া ছিলো না। স্কুলের হাত ধূয়ার স্থানে সাবন রাখার জায়গা থাকলেও সাবান ছিলো না। সব শিক্ষার্থীদের খাবার পরিবেশ করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে শেষে শিশু শিক্ষার্থীরা সবাই খাচ্ছে তবে কাউকে শিক্ষকরা হাত ধুয়োর কথাও বলেননি।

ওই প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন, ‘ আগে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো সকাল ৮ টা থেকে। সরকার স্কুল বন্ধ ঘোষনা করায় শিক্ষার্থীদের নির্দেশ দেওয়া হয় সকাল সাতটায় স্কুলে উপস্থিত থাকার জন্য। এমনিতেই ছেলে-মেয়েদের নিয়ে করোনা ভাইরাসের জন্য আতঙ্কে আছি। স্কুল বন্ধ ঘোষনা করায় সস্তি পেয়েছি। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ অনুষ্ঠান চালু রেখে অবহেলার পরিচয় দিয়েছে।’

প্রাথমিক সেকশনের প্রধান শিক্ষক বেলায়েত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, অনুষ্ঠানটি আগেই আয়োজন করা হয় তাই বাতিল করা হয়নি। অল্প সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনষ্টিটিউটের (ব্রি) মহাপরিচালক মো. শাহজাহান কবীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘অনুষ্ঠানটি আগেই অনেক বড় করে আয়োজন করা হয়েছিলো। বন্ধ থাকায় ছোট করে করা হয়েছে। ছুটির ঘোষণা দুপুরের পর আসায় অনেক শিক্ষার্থীরা বন্ধের বিষয়টি জানেনা। তাই অনুষ্ঠান হলেও স্কুলে উপস্থিতি কম ছিলো।’

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) হাইস্কুলের সহকারি প্রধান শিক্ষক জীবন চন্দ্র দাস দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ছুটির ঘোষণা আগে হলেও আমরা চিঠি পেয়েছি পরে। তাই ওই অনুষ্ঠান বাতিল না করে সংক্ষিপ্তভাবে বঙ্গবন্ধুর জন্ম শত বার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবসের অনুষ্ঠানেল আয়োজন করা হয়। এ অনুষ্ঠানে মঙ্গলবার ৭০০’র মতো শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫০০’র মত উপস্থিত ছিল। এছাড়া তাদের সঙ্গে স্কুলে অনেক অভিভাবক ও অতিথিও উপস্থিত ছিলেন।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোফাজ্জল হোসেন বলেন, সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে অনুষ্ঠান করে তাঁরা ঠিক কাজ করেননি। বিষয়টি জানার পর প্রধান শিক্ষককে সতর্ক করা হয়েছে।

জানতে চাইলে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাসের জন্য যেখানে সরকার স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেছে, সেখানে তারা অতি উৎসাহী হয়ে অনুষ্ঠান করে ঠিক করেনি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।

মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি - dainik shiksha মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! - dainik shiksha খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ - dainik shiksha এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা - dainik shiksha মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! - dainik shiksha মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036818981170654