জনবল সংকটের কারণে ব্যাহত হচ্ছে সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের (টিএসসি) শিক্ষা কার্যক্রম। শিক্ষক কম থাকায় অনেক প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ও ব্যবহারিক ক্লাস ঠিকমতো হচ্ছে না। ল্যাবগুলোতে অধিকাংশ যন্ত্রপাতিই অচল। ফলে ব্যবহারিক নির্ভর কারিগরি শিক্ষা সাধারণ শিক্ষার মতোই ক্লাস নির্ভর হয়ে গেছে। অন্যদিকে ভর্তির হার বাড়াতে বেশ আগেই চালু হয়েছে ডাবল শিফট। শিক্ষক কর্মকর্তা বা কর্মচারী অবসরে গেলেও নিয়োগ বিধিতে পদ না থাকায় পদ শূন্য থাকছে। ফলে প্রতিনিয়তই বাড়ছে সংকট। রোববার (১ সেপ্টেম্বর) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন নিজামুল হক।
এবার এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা-সংকট কমাতে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ২৫ হাজার জনবল সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব মুনশী শাহাবুদ্দীন আহমেদ বলেন, কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ মানব সম্পদ তৈরির জন্যই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পদ সৃষ্টির প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ৪৯টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স এবং ৬৪টি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং ও এইচএসসি ভোকেশনাল কোর্স চালু রয়েছে। কারিগরি শিক্ষার প্রসারের লক্ষ্যে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে ২০০৪ সাল থেকে প্রথম শিফটের পাশাপাশি দ্বিতীয় শিফটে ছাত্র ভর্তি শুরু করে সরকার। ২০০৯ সালে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষার্থী ছিল মোট শিক্ষার্থীর ৩ শতাংশ। কারিগরি বিভাগের দাবি, পলিটেকনিকগুলোতে আসন বৃদ্ধি করায় এই হার বর্তমানে ১৭ শতাংশ। সরকারের লক্ষ্য ২০২১ সালে তা ২০ শতাংশ এবং ২০৩০ সালে ৩০ শতাংশে উন্নীত করা। এ কারণে বেসরকারি পলিটেকনিকগুলোতে দ্বিতীয় শিফটের পরিকল্পনা এবং টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজেও ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং চালুর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
৬৪টি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজেও দ্বিতীয় শিফটের এইচএসসি ভোকেশনাল কোর্স এবং ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চালু রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সময় প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়। এসব বিষয় বিবেচনা করে ১ হাজার ৩৫২টি ক্যাডার পদ এবং ১৭ হাজার ৩০৭টি ননক্যাডারসহ মোট ১৮ হাজার ৬৫৪টি পদ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ১০০টি নতুন টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ৬ হাজার ৪০০ নতুন পদ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এসব পদ সৃষ্টির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নীতিগত অনুমোদনও দিয়েছেন। এছাড়া স্টেপ প্রকল্পে প্রায় ৮০০ পদ রাজস্ব খাতে স্থানান্তরেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পলিটেকনিকগুলোর তিন বছরের কারিকুলাম পরিবর্তন করে চার বছর করা হয়। এছাড়া নতুন নতুন বিভাগ চালু হয়। কিন্তু জনবল নিয়োগ দেওয়া যায়নি। ফলে জনবল সংকট তৈরি হয়েছে। তিনি জানান, ২০০৬ সালের পর টেকনিক্যাল ক্যাডারে নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে সরকারি পলিটেকনিকগুলোতে প্রায় ৭ হাজার পদ থাকলেও প্রায় ২ হাজারের মতো পদ শূন্য রয়েছে। পদ সৃষ্টির মাধ্যমে জনবল নিয়োগ দিলে সংকট আর থাকবে না বলে তিনি জানান।