২০১০ সালের ১ জানুয়ারি। চোখে-মুখে আনন্দের উচ্ছ্বাস। প্রথমবারের মতো বই উত্সব হবে। বছরের প্রথম দিনেই স্কুল থেকে নতুন বই নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারব। আমার ওই দিনটির মতো প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও সমমানের প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য ১ জানুয়ারি মানে উত্সবের দিন, বিনামূল্যে নতুন বই পাওয়ার দিন।
সম্প্রতি হবিগঞ্জ পৌর বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের ২০১৮-২০১৯ সালের ৫ হাজারের অধিক সরকারি নতুন বই জব্দ করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় দুইজনকে আটক করা হয়েছে। সোমবার (১৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় হবিগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করেন। বিনামূল্যের সরকারি বোর্ডের পাঠ্য বই বিক্রির অভিযোগে মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আব্দুল হালিমকে আটক করেছে পুলিশ। উদ্ধার করা হয়েছে পাঁচ বস্তা বই। গত সপ্তাহে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে কাঠালতলা গিয়াসিয়া দাখিল মাদ্রাসার এই সুপারকে আটক করা হয়।
সরকার দেশের শতভাগ শিক্ষার্থীর হাতে এক সেট করে বই তুলে দিলেও শহরকেন্দ্রিক বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্কুল, কোচিং এবং গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে ভিন্ন ভিন্ন বই ব্যবহার করে। এছাড়া বই হারিয়ে গেলে বা ছিঁড়ে গেলে নতুন বই কিনে থাকে অনেকেই। এসব শিক্ষার্থীকে টার্গেট করেই বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের কাছে বই পৌঁছানো মাত্রই কয়েকটি চক্র বিনামূল্যের সরকারি বই ফটোকপি করে অনুরূপ বই বাজারজাত করে! এর মধ্য দিয়ে বছর জুড়ে বিপুল অংকের বইয়ের বাণিজ্য করছে এসব চক্র।
বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ সরকারের একটি গণমুখী ও প্রগতিশীল পদক্ষেপ, যা প্রান্তিক ও দরিদ্র পরিবারের শিশুদের শিক্ষাবলয়ে অন্তর্ভুক্তির জন্য অত্যন্ত কার্যকর বলে ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের অসত্ কর্মচারীদের জন্য সরকারের এ পদক্ষেপ ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষা মানুষকে ন্যায়ের পথে চলতে শেখায়। শিক্ষকরাই সেই ন্যায়ের পথ দেখান। এহেন জাতি গড়ার কারিগর শিক্ষক ও তাদের কর্মচারীরা যোগসাজশ করে অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে বিনামূল্যে বিতরণের এ বই বিক্রি করে দিচ্ছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হলো সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে যত দ্রুত সম্ভব কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা এবং এর সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। মনে রাখতে হবে, আজকের শিক্ষার্থীরাই আগামী দিনের ভবিষ্যত্। ফলে তাদের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টরা যত দ্রুত সম্ভব কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটিই আমাদের প্রত্যাশা।
লেখক :শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।
সৌজন্যে: ইত্তেফাক