সরকারি মাধ্যমিকের অসহায় তিন হাজার শিক্ষক - দৈনিকশিক্ষা

সরকারি মাধ্যমিকের অসহায় তিন হাজার শিক্ষক

নিজস্ব প্রতিবেদক |

সরকারি মাধ্যমিকের সহকারী শিক্ষকদের ২০১২ খ্রিস্টাব্দের ১৫ মে এক প্রজ্ঞাপনে দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড মর্যাদা দেয় সরকার। তবে যেভাবে মর্যাদা বাড়ানো হয়েছে, সেভাবে তাদের আর্থিক সঙ্গতি বাড়েনি। ফলে বাড়েনি তাদের জীবনযাত্রার মানও। বেতন বৃদ্ধি না হওয়ার পাশাপাশি প্রায় তিন হাজার শিক্ষক ছয় বছর ধরে টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড থেকে বঞ্চিত রয়েছেন।

ফলে প্রাপ্যতা থাকা শিক্ষকরা এই সুবিধা না পেয়ে প্রতি মাসে পাঁচ থেকে দশ হাজার টাকা কম পাচ্ছেন। প্রাপ্ত অভিযোগ অনুযায়ী, ন্যায্য এই আর্থিক সুবিধা পেতে শিক্ষকরা শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত। যোগ্যতা থাকা শিক্ষকরা টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড সুবিধা পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এ বিষয়ে কুষ্টিয়া জেলা স্কুলের সহকারী শিক্ষক জাকিরুল ইসলাম জানান, তিনি ২০১১ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বরে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। তিন বছর আগে সিলেকশন গ্রেড পাওয়ার কথা থাকলেও দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদা পাওয়ার পর সিলেকশন গ্রেড পাননি। শিক্ষকরা জানান, ২০০৫ খ্রিস্টাব্দের আগে নিয়োগ পাওয়া কোনো শিক্ষকই সিলেকশন গ্রেড ও কোনো টাইমস্কেল পাননি। দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড হিসেবে যেসব শিক্ষকের চাকরিকাল চার বছর হয়েছে তাদের সিলেকশন গ্রেড, যাদের আট বছর হয়েছে তাদের প্রথম টাইমস্কেল এবং যাদের ১২ বছর হয়েছে তাদের দ্বিতীয় টাইমস্কেল দেওয়ার কথা

বকেয়া টাইমস্কেল-সিলেকশন গ্রেড বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ আলী বেলাল দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, সহকারী শিক্ষকরা দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদা পেলেও ন্যায্য আর্থিক পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ, আমাদের বকেয়া টাইমস্কেল-সিলেকশন গ্রেড জটিলতা দ্রুত নিরসন করে পরিবার-পরিজনদের অর্থকষ্টে মানবেতর জীবনযাপন থেকে মুক্তি দেবেন।

রাষ্ট্রীয়ভাবে শিক্ষকদের মর্যাদা বাড়িয়ে কিন্তু বেতন কমিয়ে দেয়াকে একধরনের প্রহসন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন তৃতীয় শ্রেণি থাকা অবস্থায় ৮, ১২, ১৬ বছর পূর্তিতে টাইম স্কেল পেয়ে সপ্তম যাওয়ার সুযোগ ছিল। দ্বিতীয় শ্রেণি গেজেটেড করাতে এখন তিন ধাপে ১২ বছরে পাওয়ার দাবি রাখি। না হলে আমরা আর্থিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হবো। 

জানা গেছে, নতুন বেতন স্কেল হওয়ার আগে সরকারি মাধ্যমিকের ননগেজেটেড শিক্ষকরা চাকরির বয়স আট বছর পূর্ণ হওয়ার পর প্রথম টাইমস্কেল, ১২ বছর পর দ্বিতীয় টাইমস্কেল এবং ১৫ বছরের পর তৃতীয় টাইমস্কেল পেতেন। এতে এই শিক্ষকরা ধাপে ধাপে নবম, অষ্টম ও সপ্তম গ্রেডে উন্নীত হয়ে আর্থিক সুবিধা পেতেন। কিন্তু দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড ঘোষণার পর সিলেকশন ও টাইমস্কেলের আর্থিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। শিক্ষকরা জানান, দশম গ্রেডে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে চাকরিকাল আট বছর পূর্ণ হয়েছে এমন ২০০৫ ও ২০০৬ ব্যাচের এক হাজার ৩৩৫ জন সহকারী শিক্ষক প্রথম টাইমস্কেল এবং ১২ বছর চাকরিকাল পূর্ণ হয়েছে এমন ২০০১ ও ২০০২ ব্যাচের প্রায় এক হাজার ৩১৩ জন সহকারী শিক্ষক সপ্তম গ্রেডে দ্বিতীয় টাইমস্কেল প্রাপ্য রয়েছেন। খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী টাইমস্কেল প্রাপ্য হওয়ায় চাকরির মেয়াদ ৮, ১২ ও ১৫ বছর হওয়া সহকারী শিক্ষকদের সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র দাখিল করতে ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের জুলাইয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের আঞ্চলিক কার্যালয় নির্দেশ দেয়।

এ ছাড়া অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের বাস্তবায়ন শাখার এক আদেশে ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের বেতনস্কেল কার্যকর হওয়ার আগে টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বিষয়ে জাতীয় বেতনস্কেল ২০০৯ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিবকে নির্দেশনা দেয়। গত বছরের জুলাইয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে টাইমস্কেল সংক্রান্ত এক বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী টাইমস্কেল দিতে প্রাপ্যতা থাকা শিক্ষকদের তালিকা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। কিন্তু শিক্ষকরা এখনো এ সুবিধা থেকে বঞ্চিতই রয়েছেন। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) পরিচালক (মাধ্যমিক) আবদুল মান্নান বলেন, দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড মর্যাদা পাওয়ার পর থেকে সরকারি মাধ্যমিকের সহকারী শিক্ষকরা সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশি দফায় দফায় চেষ্টা করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েও এ বিষয়টির সমাধান করতে পারেননি। তবে আমরা চাই দ্রুত এই শিক্ষকদের ন্যায্য পাওনা দেওয়া হোক।

উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ - dainik shiksha স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে - dainik shiksha শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0075609683990479