মুলাদীতে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার মুলাদী সরকারি মাহমুদজান মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ১৫০০ শিক্ষার্থীকে জিম্মি করে বিভিন্ন খাত দেখিয়ে টাকা আদায় করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি সরকারি ঘোষণা হওয়ার পর থেকে শিক্ষার্থীদের ব্যয় কমে যাওয়ার বদলে উল্টো ৪ গুণ বেড়ে গেছে। এ নিয়ে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের ক্ষোভ ও অভিযোগ থাকলেও কেউ প্রতিকার পাচ্ছেন না।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসির উদ্দীন হাওলাদার দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে একচ্ছত্র আধিপত্যের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে বলে জানিয়েছেন অভিভাবকরা। বিদ্যালয়ের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শ্রেণীভেদে ১ থেকে ২ হাজারের বেশি টাকা আদায় করা হচ্ছে। বিদ্যালয়ের অভিভাবকরা তাদের সন্তানের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে বাধ্য হয়েই নীরবে টাকা দিয়ে যাচ্ছেন। অনেক অসহায় পরিবার টাকা দিতে না পেরে পরীক্ষা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। টাকার অভাবে এসব শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
মুলাদী পৌরসভার তেরচর গ্রামের শিক্ষার্থী অভিভাবক জাকারিয়া জানান, মুলাদী মাহমুদজান মাধ্যমিক বিদ্যালয় সরকারি ঘোষণা হওয়ার আগে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর একজন শিক্ষার্থীর বেতন ছিল ২০-৩০ টাকা। বছরে ৩টি পরীক্ষায় ৩০০ টাকা পরীক্ষার ফি দিতে হতো। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি সরকারি ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে একজন শিক্ষার্থী ভর্তি করতে ১২০০ টাকা লাগে। আর মাসে মাসে পরীক্ষার নামে ১০০ টাকা, অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষায় ৩০০ টাকা ফি দিতে হচ্ছে। এছাড়া বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়মিত টিফিন না দিয়েই প্রতি মাসে টিফিন বাবদ ৭৫ টাকা, কম্পিউটার ল্যাব খরচ ২০ এবং অজ্ঞাত অত্যাবশকীয় ব্যয়ের নামে ৩০ টাকা নেয়া হচ্ছে। এসব খরচের জোগান দিতে অভিভাবকরা হিমশিম খাচ্ছেন।
বড়মাধবরায় এলাকার অভিভাবক আবুল কালাম জানান, স্কুলটি সরকারি হওয়ার আগে শিক্ষার্থীরা অনেক সুযোগ-সুবিধা পেত। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির শিক্ষার্থী অভিভাবক প্রতিনিধিদের সুপারিশে শিক্ষার্থীরা অর্ধবেতন, বিনাবেতনে অধ্যয়নের সুযোগ পেত। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি সরকারি ঘোষণা হওয়ার পর থেকে প্রধান শিক্ষক কাউকে পাত্তা দিচ্ছেন না। নিজের খেয়ালখুশিমতো ধার্য করে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে টাকা আদায় করছেন। বিগত দিনে ৮ম শ্রেণীর একজন শিক্ষার্থীর মাসিক বেতন ছিল ৪০ টাকা কিন্তু সরকারি হওয়ার পর বিদ্যালয়ের বেতন ১৫ টাকা হলেও অন্যান্য ব্যয় রয়েছে ১৩০ টাকা। টাকা পরিশোধে অসমর্থ ব্যক্তির জন্য প্রধান শিক্ষকের কাছে সুপারিশ করা হলে তিনি সরকারি প্রতিষ্ঠানের দোহাই দিয়ে টাকা কমানো অসম্ভব বলে জানিয়ে দেন।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা সরকারি প্রতিষ্ঠানে বেসরকারি ব্যয় বন্ধের দাবি জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করলেও শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ব্যয় কমছে না।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসির উদ্দীন হাওলাদার জানান, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায়কৃত টাকা ৪টি সরকারি খাত এবং ২২টি বেসরকারি খাতে আলাদাভাবে জমা দিতে হয়। তাই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ধার্যকৃত টাকা থেকে কম নেয়ার কোনো সুযোগ নেই।
বিদ্যালয়ের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন জানান, ২-৩ দিন ধরে শিক্ষার্থী অভিভাবকরা প্রধান শিক্ষকের অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ করেছেন। অনিয়মের বিষয়ে প্রমাণ পাওয়া গেলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।