সরকারিকৃত চাটমোহর কলেজের অধ্যক্ষের যত অনিয়ম - দৈনিকশিক্ষা

সরকারিকৃত চাটমোহর কলেজের অধ্যক্ষের যত অনিয়ম

রাজশাহী প্রতিনিধি |

পাবনার সরকারিকৃত চাটমোহর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তিনি ২১ জন শিক্ষক নিয়োগের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে দাবি করা হয়েছে অভিযোগে। এছাড়া নিজ স্ত্রী শাহিনুর আয়শা সিদ্দিকাকে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক পদে চাকরি দিয়েছেন অধ্যক্ষ। শুধু তাই নয়, কলেজটি বেশ কিছু গাছ কেটে নিজ বাড়ির ফার্নিচার তৈরি ও কলেজের পুকুর লিজে স্বজনপ্রতি করেছেন তিনি। এসব অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তদন্ত চলমান রয়েছে। দৈনিক শিক্ষাডটকমের পক্ষ থেকে করা প্রশ্নের জবাবে অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন চাটমোহর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, কলেজটির অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান ঈশ্বরদীর দাশুরুরিয়া কলেজে প্রভাষক হিসেবে প্রথম এমপিওভুক্ত হন ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে। শেষ এমপিও ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিলে। দাশুরিয়া কলেজের তার চাকরির অভিজ্ঞাতা ছিল নয় বছর নয় মাস। দাশুরিয়া কলেজে মাত্র ৯ বছর ৯ মাসের অভিজ্ঞা নিয়ে ও সহকারী অধ্যাপকের অভিজ্ঞতা না থাকলেও একই বছরের ১৫ আগস্ট নিয়ম বহির্ভূকভাবে পাবনার ফরিদুপরের দিঘুলিয়া এ জেড হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। সে তারিখ থেকেই এমপিওভুক্ত হন তিনি, যা নিয়ম বহির্ভূত।

অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান গত ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ জুলাই চাটমোহর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পরেই ব্যাপক দুর্নীতি শুরু করেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান কলেজ সরকারি হওয়ার আগে পরিচালনা কমিটিকে না জানিয়ে ব্যাক ডেটে রেজুলেশন টেম্পারিং, কাটাকাটি, ঘষামাজা ও কম্পিউটার দ্বারা স্ক্যান করে জনবল কাঠামোর অতিরিক্ত ২১ জন ভুয়া শিক্ষককে নিয়োগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। নিয়োগের সময় তিনি প্রায় এক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগে বলা হয়েছে। 

২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৮ আগস্ট থেকে সারাদেশের আরও ২৭১টি কলেজের সাথে পাবনার চাটমোহর ডিগ্রি কলেজ সরকারি হয়। পরে ২৭ আগস্ট বেসরকারি আমলে গভর্নিং বডি বিলুপ্ত হয়ে চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কলেজ পরিচালনার দায়িত্ব পান। সেই দিন থেকে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ জানুয়ারি অধ্যক্ষ দুই লাখ ৯১ হাজার ৭৯০ টাকার অর্থিক অনিয়ম করেছেন বলে জানা গেছে। 

অভিযোগ রয়েছে, বিজ্ঞান গবেষাণাগারের যন্ত্রাপতি ও দ্রব্যাদি ক্রয়, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ও সেমিনার লাইব্রেরির বই কেনা, প্রশংসাপত্র বাবদ বিনা রশিদে জনপ্রতি ৩৪০ টাকা হারে আদায় করেন অধ্যক্ষ। ভর্তি ও ফরম পুরণে সরকারি নির্ধারিত ফিয়ের অতিরিক্ত টাকা আদায় করেন। এ নিয়ে রাবেয়া খাতুন নামের এক শিক্ষার্থী দুদকে অভিযোগ করেন। বিষয়টি এখনও তদন্তাধীন রয়েছে। 

এছাড়া, শিক্ষার্থীদের পরিচয়পত্র দেয়ার নামে বিনা রশিদে জনপ্রতি ১৪০ টাকা হারে আদায় করা হয়। পাঠদানের বিষয় নবায়ন, শিক্ষকদের এমপিওভূক্তকরণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে লাখ লাখ টাকা আত্মাসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে অধ্যক্ষ মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে।  

আরও পড়ুন: চাটমোহর সরকারি কলেজশিক্ষক কক্ষ তালাবদ্ধ,অধ্যক্ষের কক্ষের সামনে শিক্ষকদের অবস্থান

চাটমোহর কলেজ অধ্যক্ষের সঙ্গে দালাল আতাউরের রহস্যময় বৈঠক

অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

পদসৃজনে বাধা দেয়া অধ্যক্ষের অপসারণ দাবি

শিক্ষকদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন ওসি

ডাবল চাকরি করেন ২৬ শিক্ষক, চলছে আত্তীকরণের চেষ্টা

এছাড়া অধ্যক্ষ মিজান কলেজের শতবর্ষী কড়ই গাছ কেটে নিজের বাড়ির ফার্নিচার তৈরি করেছেন। এনিয়ে কলেজের সহকারী অধ্যাপক আবদুল মান্নান বাদি হয় পবনা কোর্টে মামলা দায়ের করেছেন। বর্তমানে মামলাটি চলমান রয়েছে। অধ্যক্ষ কলেজের মার্কেটের ৩৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ আছে। এ বিষয়ে শিক্ষকরা দুদকে অভিযোগ করেছেন। এছাড়া পুকুর লিজ দেয়ায় স্বজনপ্রীতি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে ওই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান কলেজের টাকা আত্মসাৎ করে তৈরি করেছেন বাড়ি. কিনেছেন জমি। এমনকি এ টাকায় মার্কেটও করেছেন অধ্যক্ষ। 

এ বিষয়ে পবনার চাটমোহর উপজেলা ইউএনও সরকার অসিম কুমার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, শতবর্ষীয় গাছ কাটার বিষয়টি পাবনার জুডিশীয়াল আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। আমাকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আগামী ২০ অক্টোবর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবো। ২১ জন শিক্ষক অবৈধ নিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রাথমিক তদন্তে বেশ কিছু শিক্ষককের কাগজপত্র ঠিক পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের রাজশাহী অঞ্চলের এক কর্মকর্তাকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা অধিদপ্তর। তিনি তদন্ত করছেন। 

তবে, দৈনিক শিক্ষাডটকমের পক্ষ থেকে করা প্রশ্নে জবাবে অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান। তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়গুলো ভিত্তিহীন। বেশ কিছু শিক্ষক ডালব চাকরি করেন। কলেজ সরকারি হলে তাদের আত্তীকরণের প্রত্যায়নপত্র না দেয়ায় কিছু শিক্ষক আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার চালাচ্ছেন।’

গাছ কাটার বিষয় তিনি বলেন, চাটমোহর পৌর মেয়র মীর্জা রিজাউল করিমের উপস্থিতিতে গাছগুলো কাটা হয়। সেই গাছগেুলো দিয়ে কলেজের বিভিন্ন কাজে লাগানো হয়েছে।  

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034949779510498