সারাদেশের সরকারিকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণের ক্ষেত্রে আগের ৫০ শতাংশ চাকরিকাল গণনা করার সুযোগ নেই বলে মত দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি এ বিষয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে মতামত পাঠানো হয়। কিন্তু এ মতামত বাতিল চেয়ে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন শিক্ষকরা। শিক্ষকদের পক্ষে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ্ মিয়া।
রোববার (১৫ মার্চ) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজিসহ পাঁচ জনের কাছে ডাকযোগে নোটিশ পাঠানো হয়েছে বলে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে নিশ্চিত করেন তিনি।
জানা গেছে, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়, সরকারিকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণের ক্ষেত্রে পূর্বের চাকরিকাল গণনা করার বিধিগত সুযোগ নেই।
অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ্ মিয়া দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘অধিগ্রহণকৃত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক (চাকরির শর্তাদি নির্ধারণ) বিধিমালার বিধি ২(গ) অনুসারে সরকারিকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আত্তীকরণের আগের চাকরিকালের ৫০ শতাংশ গণনা করার বিধান থাকলেও সম্বলিত জ্যেষ্ঠতার তালিকা তৈরির সময় ওই বিধি মানা হয়নি। তা না মেনেই জ্যেষ্ঠতার তালিকা করা হয়েছে। বিধিমালার ৯(১) এর শেষ অংশ বলা হয়েছে ”পূর্বে নিয়োগ বিধির অধীন শিক্ষক পদে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত সর্বশেষ ব্যক্তির নিচে সহকারী শিক্ষকের অবস্থান নির্ধারিত হবে” যা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’
তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমের কাছে আরও দাবি করেন, অধিগ্রহণকৃত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক (চাকরির শর্তাদি নির্ধারণ) বিধিমালার ৯ (১) এর শেষ অংশকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন। পরবর্তিতে চূড়ান্ত শুনানি শেষে ‘আগের নিয়োগ বিধির অধীন শিক্ষক পদে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত সর্বশেষ ব্যক্তির নিচে সহকারী শিক্ষকের অবস্থান নির্ধারিত হইবে” অবৈধ ঘোষনা করে গত বছরের ১১ মার্চ রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ের বিরুদ্ধে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন। আপিল শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্ট আপিলটি ফের শুনানি করতে বলে। যা আপিল বিভাগে শুনানির জন্য অপেক্ষমান আছে।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে সারাদেশের সরকারিকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা হাইকোর্টে একাধিক রিট পিটিশন দায়ের করেন। যা শুনানির জন্য অপেক্ষমান আছে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ উপেক্ষা করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় গত ৮ ফেব্রুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাছে মতামতের জন্য চিঠি পাঠান। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় থেকে সরকারিকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারনের ক্ষেত্রে আগের চাকরিকাল গণনা করার বিধিগত সুযোগ নেই, যা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ অবমাননার শামিল। তাই শিক্ষকদের পক্ষে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ২৩ ফেব্রুয়ারির চিঠি বাতিল বা প্রত্যাহার করার জন্য নোটিশ পাঠানো হয়েছে।