সরকারিকৃত স্কুল-কলেজের কী হলো? - দৈনিকশিক্ষা

সরকারিকৃত স্কুল-কলেজের কী হলো?

অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী |

‘আমলাতান্ত্রিক জটিলতা’ আর ‘লাল ফিতার দৌরাত্ম্যে’ দেশের গোটা শিক্ষাব্যবস্থা আটকে আছে বলে মনে হয়। তা না হলে প্রায় দু’ তিন বছর আগে দেশে এতগুলো স্কুল-কলেজ সরকারি করা হলো, অথচ আজ অবধি এদের কোনো খোজঁ-খবর নেই।

যে সকল উপজেলায় কোনো সরকারি স্কুল-কলেজ ছিল না, সে সব উপজেলায় একটি করে স্কুল ও কলেজ সরকারি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। সরকারের এ মহৎ উদ্যোগটি মাঝপথে আটকে গেল কেন? আত্তীকরণ করতে কয় বছর সময় লাগে? সেই কবে ‘ডিড অব গিফট’ সম্পাদিত হলো? এরপর আর সময় লাগার কথা নয়। অহেতুক কারা কালক্ষেপণ করে, সেটি অনেকের জানা নেই।

‘আমলাতান্ত্রিক জটিলতা’ কিংবা ‘লাল ফিতার দৌরাত্ম্য’ সম্পর্কে যাদের ধারণা নেই, তারা হয়তো বিষয়টি বুঝে উঠতে পারে না। কিন্তু আমরা যারা দু’ চার অক্ষর লেখাপড়া করেছি, তারা অন্তত কী কারণে কি হয়-সেটি বুঝতে পারি। আমাদের যারা বোকা বানিয়ে ধোকা দিতে চায়, তাদের খুব ভালো করে চিনে রাখতে পারি।

লাল ফিতার দৌরাত্ম্যে পড়ে কত স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটেছে। ইতোমধ্যে কত শিক্ষক-কর্মচারী পরকালগামী হয়েছেন, কত জন অবসরে চলে গিয়েছেন এবং আগামী এক বছর কিংবা ছয় মাসে আরও কত জন অবসরে যাবেন-সে হিসেবটি এ মুহূর্তে কেউ বলতে পারে না। তবে এ কথাটি নিসংকোচে বলা যায় যে, ভগ্ন হৃদয় নিয়ে অনেক শিক্ষক-কর্মচারী প্রস্থান করেছেন যারা সরকারি হবার কাছাকাছি গিয়েও সরকারি হতে পারেননি। আগামী এক বছর কিংবা ছয় মাসে আরও অনেককে সেই দুর্ভাগ্যটিই বরণ করতে হবে। অনেকে এখন স্বপ্নের সমাধির উপর দিয়ে হাঁটেন। অনেকে স্বপ্ন নিয়ে পরপারের যাত্রী হয়েছেন। অনেকের স্বপ্নের বাতিটি দপ করে নিভে যাবার দ্বারপ্রান্তে।

আর কত স্বপ্নের অপমৃত্যু দেখে যেতে হবে কে জানে? আমরা আর স্বপ্নগুলোর মৃত্যু দেখতে চাই না। স্বপ্নের দ্রুত বাস্তবায়ন চাই। যে সব স্কুল-কলেজ সরকারি করার জন্য ‘ডিড অব গিফট’ সম্পাদিত হয়েছে, তাদের শিক্ষক-কর্মচারীদের অতি সত্বর আত্তীকরণ করে দো-টানা জীবনের অবসানটুকু ঘটিয়ে দিন। তা না হলে একদিকে সরকারের বদনাম, অন্যদিকে শিক্ষক-কর্মচারীদের কষ্ট ও হতাশা দিনে দিনে কেবল বৃদ্ধি পেতে থাকবে।

শেখ মুজিব তনয়া শেখ হাসিনার যেখানে আন্তরিকতার এতটুকু ঘাটতি নেই, সেখানে বদনামটুকু তাকে বয়ে নিয়ে যেতে হবে কেন? 
কেবল সরকারিকৃত স্কুল-কলেজের কথা বলি কেন, অতি সম্প্রতি যে সকল স্কুল-কলেজকে নতুন করে এমপিও দেবার ঘোষণা দেয়া হয়েছে, তাদের গেজেট হতে এত বিলম্ব হচ্ছে কেন? যারা এমপিও পাবার যোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছে, তাদের এমপিও ছাড় দিতে অসুবিধা কোথায়? কাগজপত্র যাছাই বাছাই আগে করা হলো না কেন? এখন যাছাই বাছাইর নামে সময় নষ্ট করা খুবই অনভিপ্রেত। এমনিতে অনেকের ১৫-২০ বছর ধরে বেতন-ভাতা নেই। এখন যা বা এমপিও হলো, তখন অযথা যাছাই-বাছাইয়ের নামে সময় খোয়ানো কেন? এমনিতে অনেকের চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাচ্ছে। পেনশনের সময় হয়ে গেছে। তারা দু’ আনা দু’ পয়সা সরকারি অর্থ নিয়ে বাড়ি ফিরতে চান। সে আশাটিও অনেকের অপূর্ণ থেকে যাবে। এর অভিশাপ কে বহন করবে?  যাদের হাতে লাল ফিতার ফাইল, সে অভিশাপ তাদের গ্রহণ করতে হবে। এর প্রায়শ্চিত্ত তাদেরকেই একদিন না একদিন করতে হবে।

আরেকটি বিষয়ে সামান্য আলোকপাত করে আজকের লেখাটির ইতি টানতে চাই। বিভিন্ন বেসরকারি স্কুল-কলেজে নতুন ভবন, আইসিটি ল্যাব ও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি দিতে রাজনৈতিক তদবিরকে অগ্রাধিকার দেয়া কতটুকু যুক্তিসঙ্গত? একজন এমপি বা মন্ত্রী সুপারিশ করতেই পারেন। কিন্তু এমপি বা মন্ত্রীর সুপারিশ ছাড়া কেউ কিছু পাবে না, সেটি একেবারে কাম্য নয়। আজ অনেক যোগ্য প্রতিষ্ঠান ভবন, আইসিটি  ল্যাব কিংবা যন্ত্রপাতি কিছুই পায় না। আবার যারা অযোগ্য, তারা নেতার জোরে সব পেয়ে যায়।

আমাদের বিচার বিভাগ ও শিক্ষা বিভাগটি অন্তত প্রভাবমুক্ত না থাকলে জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো কঠিন হবে। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের প্রাক্কালে মুজিববর্ষে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার- বিচার ও শিক্ষা বিভাগকে আমরা কলুষমুক্ত রাখবই। 
সরকারিকৃত স্কুল-কলেজে অবিলম্বে যাবতীয় কার্যক্রম সরকারি হিসেবে শুরু হোক। শিক্ষক-কর্মচারীদের আগামী মাস থেকেই সরকারি নিয়মে বেতন-ভাতা প্রদান করার ব্যবস্থা নেয়া দরকার। ধৈর্যের একটা সীমা থাকে। তারা সে সীমাটি অতিক্রম করেছেন। আর ধৈর্য ধরা কঠিন।

লেখক : অধ্যক্ষ, চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, কানাইঘাট, সিলেট এবং দৈনিক শিক্ষার নিজস্ব সংবাদ বিশ্লেষক।

উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ - dainik shiksha স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে - dainik shiksha শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037870407104492