ময়মনসিংহের নান্দাইলে কুতুবপুর পিয়ারজান প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে। সেই সময় স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য বাড়ির সামনে ৫১ শতক জমি দান করেন স্থানীয় আছর আলীর স্ত্রী পিয়ারজান বিবি। ৪৪ বছর পর সেই জমির মালিকানা দাবি করে মামলা করেছেন তাঁর দুই ছেলে ও তিন নাতি। তাঁদের ভাষ্য, পিয়ারজান বিবি ওই জায়গা দান করেননি। এ কারণে গত ১৮ আগস্ট প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, বিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষকসহ ৯ জনের নামে আদালতে তাঁরা মামলা করেছেন। বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন আলম ফরাজী। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে স্কুলটি সরকারি করা হয়েছে।
এদিকে জমির মালিকানা দাবি করা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার ও পানির মোটরে হামলা এবং টয়লেট নির্মাণে বাধা দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে গত মঙ্গলবার রাতে পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেছেন প্রধান শিক্ষক রোকেয়া খাতুন। তিনি বলেন, উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ কুতুবপুর পিয়ারজান রেজিস্ট্রি বিদ্যালয়টিকে ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে জাতীয়করণ করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের দুরবস্থা দেখে একটি একাডেমিক ভবন নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদীন খান। নির্মাণকাজ শুরু করার জন্য ঠিকাদার বিদ্যালয়ে এসে জমির অবস্থান দেখে যান। এরপর থেকে জমিদাতা পিয়ারজান বিবির এক ছেলে তোফাজ্জল হোসেন (৭৫) ও তাঁর ছেলেরা জমির মালিকানা দাবি করে নানা ধরনের অপকর্ম করে চলেছেন। গত শনিবার পিয়ারজানের নাতি আবুল ইসলাম (৩৮), মো. মোস্তফা (৪২) ও আল-আমীন বিদ্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করে ব্ল্যাকবোর্ড, শহীদ মিনারের সিঁড়ি ও শৌচাগারের খুঁটি ভাঙচুর করেছেন।
বিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক খালেদা আক্তার বলেন, পিয়ারজান বিবি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য ৫১ শতক জমি জেলা প্রশাসকের নামে দলিল করে দিয়েছেন। তাই বিদ্যালয়টির নামকরণ ওই নারীর নামেই হয়েছে। এখন তাঁর নাতিরা জমির মালিকানা নিয়ে কীভাবে প্রশ্ন তোলেন? তিনি জানান, এ বিদ্যালয়ে বর্তমানে ২২০ জন ছাত্রছাত্রী লেখাপড়া করছে। প্রধান শিক্ষকসহ পাঁচজন শিক্ষক রয়েছেন এখানে।
এসব বিষয়ে জানতে বাড়িতে গিয়ে মামলার এক বাদী বাহাউদ্দিনকে পাওয়া যায়নি। আরেক বাদী তোফাজ্জল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি ছেলেদের দেখিয়ে দেন। বাদী মো. মোস্তফা দাবি করেন, তাঁর দাদি পিয়ারজান বিবি বিদ্যালয়ের নামে জমি লিখে দেননি। এ কারণে তাঁরা জমি ফেরত চেয়ে মামলা করেছেন। বিদ্যালয়ে হামলা-ভাঙচুরের অভিযোগ সত্য নয়।
নান্দাইল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহম্মদ আলী সিদ্দিক বলেন, এত দিন পর এ ধরনের দাবি হাস্যকর। সরকারের কাছে নথিপত্র জমা দেয়ার পরই রেজিস্ট্রি বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হয়েছে। এর পরও বিষয়টি আইনগতভাবেই মোকাবেলা করা হবে।
বিদ্যালয়ে হামলার বিষয়ে নান্দাইল থানার ওসি মনসুর আহাম্মাদ জানান, শহীদ মিনারের সিঁড়ির দুটি ইট ভাঙা হয়েছে। সেই সঙ্গে টয়লেটের ক্ষতি করা হয়েছে। এসব ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।