সরিয়ে দেয়া হচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজিকে? - দৈনিকশিক্ষা

সরিয়ে দেয়া হচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজিকে?

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ প্রায় তিন মাস আগে বলেছিলেন, 'সর্বশেষ বৈজ্ঞানিক তথ্যের ওপর ভিত্তি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মনে করে, গরম আবহাওয়া ও আর্দ্রতার কারণে বাংলাদেশে কভিড-১৯ রোগের প্রচণ্ডতা দেখা দেবে না।' কিন্তু তার ওই বক্তব্য মিথ্যা প্রমাণ করে সংক্রমণ ও মৃত্যু জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। শুক্রবার (২৬ জুন) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন রাজবংশী রায়। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, এ পরিস্থিতিতে ২৯ মার্চের ওই বক্তব্য থেকে সরে এসে গত ১৮ জুন তিনি করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার মতো তথ্য নিয়ে হাজির হন। ওইদিনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুলেটিনে তিনি বলেছিলেন, 'করোনা পরিস্থিতি এক, দুই বা তিন মাসে শেষ হচ্ছে না; এটি দুই থেকে তিন বছর বা তার চেয়েও বেশিদিন স্থায়ী হতে পারে।' তার এই বক্তব্যে দেশজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আতঙ্ক ছড়ানোর অভিযোগ এনে অনেকে তার অপসারণ দাবি করেন। ডিজির ওই বক্তব্য সরকারকেও বিব্রত করে।

পরদিন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মহাপরিচালককে 'দায়িত্বজ্ঞানহীন' আখ্যা দিয়ে তাকে ওই ধরনের বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। এর মধ্য দিয়েই ডিজির ওপর সরকারের হাই কমান্ডের ক্ষোভের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। পরে ডিজি গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে দুঃখ প্রকাশ করলেও আগের বক্তব্য থেকে সরে আসেননি। এরপরই তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। সংশ্নিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞরাও তার অপসারণ চাচ্ছেন।

সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্র বলছে, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে ব্যর্থতার পাশাপাশি কেনাকাটা ও নিয়োগে সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতি সামাল দিতে না পারাসহ নানা অব্যবস্থাপনার দায়ে ডা. আজাদকে সরিয়ে দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে সরকারের হাইকমান্ড।

তার স্থলে মহাপরিচালক পদে একজন সৎ ও দক্ষ ব্যক্তিকে খোঁজা হচ্ছে। সংশ্নিষ্টরা এ বিষয়ে কাজও শুরু করেছেন। এজন্য কয়েকজনের তালিকাও তৈরি করা হয়েছে। মহাপরিচালক হিসেবে যাদের নাম আলোচনায় এসেছে তাদের সততা, যোগ্যতাসহ নানা বিষয়ে বিস্তারিত বিশ্নেষণ চলছে। তাদের মধ্য থেকে একজনকে মহাপরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে।

অপর একটি সূত্র জানায়, তাড়াহুড়ো নয়, সার্বিক পরিস্থিতি বিচার-বিশ্নেষণ করে মহাপরিচালক পদে পরিবর্তন আনতে চাচ্ছে সরকার। তবে আগামী বছরের ১৫ এপ্রিল ডা. আজাদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই যে তাকে মহাপরিচালকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে, তা নিশ্চিত করেছে ওই সূত্রটি।

যে কারণে তোপে ডিজি :সরকারের হাই কমান্ড মনে করে, করোনা পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এ কারণে শুরু থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং তার বাস্তবায়ন যথাযথ হচ্ছিল না। স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য সচিবসহ অন্য কর্মকর্তাদের কেউই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ নন কিংবা তাদের এ সম্পর্কিত জ্ঞানও সীমিত। এ কারণে জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত মহামারি নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে তারা ডিজির নেতৃত্বে জনস্বাস্থ্যবিদদের ওপরই আস্থা রেখেছিলেন এবং সংক্রামক ব্যাধি আইনেও এ বিষয়টি উল্লেখ আছে। কিন্তু একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে তিনি সারাদেশের মানুষকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছেন।

শুরু থেকে ডিজি নমুনা পরীক্ষার দায়িত্ব আইইডিসিআরের ওপর ছেড়ে রেখেছিলেন। অথচ বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা পরীক্ষা কিংবা সংবাদ সম্মেলন করা আইইডিসিআরের কাজের মধ্যে পড়ে না। আইইডিসিআরের মূল কাজ রোগতাত্ত্বিক গবেষণা করা, কন্ট্যাক্ট ট্রেসিংসহ সার্বিক বিষয় মনিটরিং করা এবং সে অনুযায়ী করণীয় সম্পর্কে সরকারকে পরামর্শ দেওয়া। মূল কাজ না করে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা নমুনা পরীক্ষা ও সংবাদ সম্মেলন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। তার ওই সিদ্ধান্তটি ছিল চরম ভুল। কারণ, একটি মাত্র প্রতিষ্ঠানের হাতে নমুনা পরীক্ষা থাকায় আক্রান্ত সবাইকে পরীক্ষার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি।

এ ছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তিরা বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করে সর্বত্র রোগটি ছড়িয়ে দিয়েছেন। অথচ চীনে সংক্রমণের পর সারাদেশে নমুনা পরীক্ষার পরিধি সম্প্রসারণ করলে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে পর্যাপ্ত সংখ্যক আইসোলেশন ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন শয্যা নিশ্চিত করতেও তিনি অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইন শয্যা প্রস্তুত থাকার তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তিনি যে ফাইল পাঠিয়েছেন, তা ছিল ভিত্তিহীন।

গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক দল তদন্ত করে দেখতে পেয়েছেন, আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্র হিসেবে যেসব প্রতিষ্ঠানের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, সেগুলো ছিল স্কুল-কলেজ, হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পরিত্যক্ত ভবন। অনেক ভবনে নূ্যনতম সেবার সুবিধাও নেই। এমনকি কোনো শয্যার ব্যবস্থাও করা হয়নি। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী দ্রুত আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইন শয্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল প্রস্তুত করার নির্দেশ দেন।

এরপরই টনক নড়ে স্বাস্থ্য বিভাগের। বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের পাশাপাশি রাজধানীর আরও কয়েকটি হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেটেড করা হয়। কিন্তু এসব হাসপাতালে দায়িত্ব পালনকারী চিকিৎসক-নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাপনা নিয়েও স্বাস্থ্য বিভাগ ছিল সিদ্ধান্তহীন। বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর দেশজুড়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়। পরে করোনা হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসক-নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

ডা. আজাদের আগ্রহেই জেকেজি হেলথ কেয়ার নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে করোনার নমুনা সংগ্রহের কাজে যুক্ত করা হয়। ওই নমুনা পরীক্ষা নিয়ে প্রতারণার অভিযোগে ওই প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অথচ অনুমোদন দেওয়ার আগে ডিজি ওই প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। তার সেই ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সরেজমিন পরিদর্শনের বিষয়টির সমালোচনা করে অনেকে বলেছেন, করোনা সংক্রমণের পর আজ পর্যন্ত কোনো হাসপাতাল পরিদর্শনে যাননি ডিজি। এমনকি অর্ধশতাধিক চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনায় একটি শোকবার্তাও দেননি। অথচ তিনি জেকেজি নামের ওই প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। তার এসব কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ হয় সরকারের হাই কমান্ড।

কেনাকাটায় ভয়াবহ দুর্নীতি :করোনা পরিস্থিতিতে মাস্ক, গ্লাভস, পিপিইসহ বিভিন্ন সুরক্ষা সামগ্রী কেনাকাটা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। প্রথমে এন-৯৫ মাস্ক কেলেঙ্কারি নিয়ে দুর্নীতির বিষয়টি আলোচনায় আসে। এন-৯৫ মাস্কের মোড়কে বিভিন্ন হাসপাতালে সাধারণ মাস্ক সরবরাহ করা হয়েছিল। এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালককে বদলি এবং মুগদা মেডিকেলের পরিচালককে ওএসডি করা হয়।

করোনা পরিস্থিতি নিয়ে জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নিম্নমানের মাস্ক ও পিপিই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে তিনি এসব সামগ্রী ক্রয়ের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দেন। এরপরও পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় গত ২২ মে কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের (সিএমএসডি) পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহীদউল্লাহকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার দায়ে গত ৪ জুন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবকে বদলি করা হয়। এরপর অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িত থাকার দায়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রায় একডজন কর্মকর্তাকে ধাপে ধাপে সরিয়ে দেওয়া হয়। সর্বশেষ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা) অধ্যাপক ডা. ইকবাল কবীরকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে একটি প্রকল্পসহ মোট চারটি দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। বিশ্ব ব্যাংকের ওই প্রকল্পে কেনাকাটায় ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির দায়ে তাকে সরানো হয় বলে স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানিয়েছে।

এরপর দুর্নীতি দমন কমিশনও ডা. ইকবাল কবীরসহ করোনা সংক্রান্ত কেনাকাটায় জড়িত সবার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে চিঠি দিয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সাবেক সচিব ও ডিজির আস্থাভাজন হিসেবে ইকবাল কবীর পরিচিত। এ কারণেই একসঙ্গে তিনি চারটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেয়েছিলেন বলে সংশ্নিষ্টরা জানান।

কেনাকাটায় দুর্নীতিবাজরা ধরাছোঁয়ার বাইরে :সিএমডির মাধ্যমে ৯০০ কোটি টাকার বিভিন্ন চিকিৎসা ও সুরক্ষা সামগ্রী কেনাকাটায় জড়িত সিন্ডিকেটটি এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। কেনাকাটার বিস্তারিত তুলে ধরে সিএমএসডি বিদায়ী পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহীদউল্লাহ গত ৩০ মে জনপ্রশাসন সচিবের কাছে একটি চিঠি দেন।

ওই চিঠিতে তিনি বলেন, করোনা মোকাবিলায় কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন এবং সিএমএসডি কী কী কেনাকাটা করবে, সে সম্পর্কে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কখনোই সঠিক কোনো পরিকল্পনা করেনি। ক্রয় প্রক্রিয়া কীভাবে অনুসরণ করা হবে, অর্থের সংস্থান আছে কিনা, স্পেসিফিকেশন কী হবে, কী পরিমাণ সামগ্রী ক্রয় করতে হবে- এ সংক্রান্ত কোনো দিকনির্দেশনা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর থেকে দেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় সিএমএসডি মৌখিকভাবে বিভিন্ন সামগ্রী ক্রয় করে তা হাসপাতালগুলোতে পৌঁছে দেয়। ডিপিএম পদ্ধতি অনুসরণ করে বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশে সব ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।

এই চিঠির সূত্র ধরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২৫ মার্চ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে করোনা সংক্রান্ত সব কেনাকাটা তদারকির জন্য ১২ সদস্যের একটি টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করা হয়। ২৪ এপ্রিল ওই কমিটি পুনর্গঠন করা হয়। এই কমিটির আহ্বায়ক করা হয় অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানাকে এবং সদস্য সচিব করা হয় পরিচালক (এমবিডিসি) ও লাইন ডিরেক্টর টিবিএল অ্যান্ড এএসপি অধ্যাপক ডা. সামিউল ইসলাম সাদীকে। এ সংক্রান্ত আদেশে বলা হয়, ওই কমিটিই ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীসহ (পিপিই) যাবতীয় আদর্শমান যাচাই-বাছাই করে কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন। এই কমিটিকে পণ্যের মান নির্ধারণ ও কেনাকাটার সর্বময় ক্ষমতা দেওয়া হয়। এই কার্যপরিধির সুযোগ নিয়েই করোনা সংক্রান্ত কেনাকাটায় দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে একটি সিন্ডিকেট।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, সিএমএসডি কেন্দ্রিক কেনাকাটা নিয়ে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের মধ্যে মারাত্মক দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছিল। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা উপেক্ষা করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নেপথ্যের নির্দেশনায় পুরো ৯০০ কোটি টাকার ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এক্ষেত্রে ডা. সামিউল ইসলামের ঠিক করে দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোই সিংহভাগ কাজ পায়। এতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিন্ডিকেটটি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তবে মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে অধিদপ্তরের এই সিন্ডিকেটের সখ্য ছিল। তাদের মাধ্যমেই পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়।

এক্ষেত্রে প্রতিটি পণ্যের দাম ৫ থেকে ১০ গুণ বাড়তি দেখানো হয়েছে। এক সেট এক্সামিনেশন হ্যান্ড গ্লাভসের দাম দেখানো হয়েছে ৩৬ টাকা। অথচ ৫০ জোড়া এ ধরনের গ্লাভসের বাজারমূল্য মাত্র ১৮০ টাকা। ১২০ থেকে ২৫০ টাকা মূল্যের রেইন কোট জাতীয় পণ্য কিনে পিপিই বলে হাসপাতালে সরবরাহ করা হয়েছে। পিসিআর মেশিন ক্রয় করা হয়েছে পুরোনো ২০০৯ সালের মডেলে। ওই মেশিনের মান নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে দুটি হাসপাতালের পরিচালকও অভিযোগ করেছেন। একাধিক সূত্র বলছে, ৯০০ কোটি টাকা কেনাকাটার কথা বলা হলেও তার অর্ধেক পরিমাণ টাকার সামগ্রীও কেনা হয়নি। বাড়তি মূল্য দেখিয়ে ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগসাজশ করে পুরো টাকা লোপাট করা হয়েছে। এ চক্রটিই এখন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ প্রক্রিয়ায়ও জড়িয়ে পড়েছে।

সংশ্নিষ্টরা বলেছেন, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত পুরো সিন্ডিকেটটিই মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের অনুসারী। এ কারণে সংশ্নিষ্ট কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন, এমন কর্মকর্তাদের কেনাকাটা থেকে নিয়োগ সব প্রক্রিয়ার সঙ্গেই যুক্ত করা হয়েছে এবং মহাপরিচালকের নেপথ্যের নির্দেশনাই পুরো প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন হয়েছে।

একাধিক সূত্র বলছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান চালানো হবে। এরই অংশ হিসেবে ডা. ইকবাল কবীরকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ধাপে ধাপে অন্য দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সরিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে ঢেলে সাজানো হবে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আজাদকে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। অন্যান্য সময়ে ফোন করা হলে তিনি মিটিংয়ে ব্যস্ত থাকা বা অন্য কোনো কারণে ব্যবস্থার কথা জানিয়ে ফিরতি এমএসএস দিতেন। গতকাল তাও দেননি। তবে গত ৪ জুন তিনি সঙ্গে কথা বলেছিলেন। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যর্থতার কারণে মহাপরিচালকের পদ থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে- এমন গুঞ্জন আছে; এ বিষয়টি তুলে ধরে সেদিন অভিমত জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন, ওইসব গুঞ্জনে কান দেওয়ার সময় পাই না। তাছাড়া ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ওইসব গুঞ্জনে কান না দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। স্বাস্থ্য খাত করোনা মোকাবিলায় সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে কোনো সংকট নেই। আবার সারাজীবন আমাকে এই পদে থাকতে হবে- বিষয়টি এমন নয়। কিছু স্বার্থান্বেষী মহলও এ ধরনের গুজব ছড়াতে পারে।

পরিবর্তন জরুরি- মত বিশেষজ্ঞদের :স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি পদে থাকার নৈতিকতা হারিয়েছেন বলে মনে করেন চিকিৎসকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে মহাপরিচালক অদক্ষতা ও অদূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন এবং একেক সময় একেক কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করেছেন। এজন্য তিনি পদে থাকার নৈতিকতা হারিয়েছেন। ভালো ব্যবস্থাপক হলে তিনি পরিস্থিতি অনুযায়ী দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে তা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতেন। কিন্তু সেগুলোর কিছুই করেননি।

বিএমএ মহাসচিব বলেন, ডিজির বাবা শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন- এ বিষয়টি প্রমাণ আকারে ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। তার রাজনৈতিক পরিচয়ও সবার জানা আছে। করোনা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার নামে তিনি যা যা করেছেন, তা খতিয়ে দেখলে প্রশ্ন জাগে সরকারকে বিপদে ফেলার জন্য এটি সাবোটাজ কিনা? না হলে তিনি এমন কাজ কেন করবেন? এখনও না আছে প্রয়োজনীয় হাসপাতাল, আইসোলেশন সেন্টার ও কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা; না আছে আইসিইউ ও ভেন্টিলেটর। নেই পর্যাপ্ত সংখ্যক নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা। কোনো কাজেই তো সমন্বয় নেই। এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য কী, তা তার কাছে জানতে চাওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে দ্রুত তাকে অপসারণ করে সৎ ও দক্ষ কাউকে এই পদে দায়িত্ব দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। অন্যথায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে বলে তার আশঙ্কা।

বিএমএর সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই মাহবুব বলেন, চালকের অদক্ষতায় আমরা ট্রেন মিস করেছি। এই চালকের হাতে নেতৃত্ব থাকলে ভবিষ্যতে অনিশ্চিত গন্তব্যেই যাত্রা শেষ করতে হবে। সুতরাং এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য দক্ষ চালকের প্রয়োজন। যিনি দক্ষতার সঙ্গে পরিস্থিতি বুঝে ট্রেন চালাতে পারবেন। যাত্রীদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন। এটি না হলে করোনা পরিস্থিতিতে সবাইকে চরম মূল্য দিতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে করোনা প্রতিরোধে সরকার গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, করোনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে শুরু থেকে যেসব পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন ছিল তার কিছুই করা হয়নি। প্রতিটি ক্ষেত্রেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নের নামে কালক্ষেপণ করা হয়েছে। এ কারণে আজ পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার বিষয়টি এই নেতৃত্বের মাধ্যমে আশা করা যায় না। সুতরাং পরিবর্তন জরুরি হয়ে পড়েছে।

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, 'আমরা এই পরিবর্তনের জন্য কার কাছে বলব? আমাকে একটি কমিটির সদস্য করা হয়েছে। আমরা যেসব পরামর্শ দিচ্ছি, তাও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। তাহলে আমাদের করণীয় কী, তাও তো বুঝতে পারছি না।' বিষয়গুলো নিয়ে তিনি কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. সহিদুল্লাকে একটি সভা ডাকার অনুরোধ জানাবেন বলেও মন্তব্য করেন।

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.009990930557251